ঢাকা: টানা দেড় মাসের অবরোধে নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে পোশাক শিল্প খাতকে। ফেব্রুয়ারি মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত প্রায় ১০ শতাংশ গার্মেন্ট বেতন দিতে পারেনি শ্রমিকদের।
মার্চ মাসে সঠিক সময়ে বেতন দিতে ব্যর্থ হবে প্রায় ৩০ শতাংশ গার্মেন্ট বলে জানিয়েছেন বিজিএমইএ এর পরিচালনা পর্ষদের এক সদস্য। আর তাই শ্রমিক অসন্তোষ বাড়বে বলেই ধারণা করছেন এই পরিচালক।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন বিজিএমইএ এর সহ সভাপতি মোঃ শহীদুল্লাহ আজীম। তিনি বলেন, হরতাল অবরোধে গার্মেন্ট মালিকরা শিপমেন্ট করতে পারছেন না। এয়ার শিপমেন্ট করতে হচ্ছে বেশিরভাগ পণ্যই। শিপমেন্ট না করতে পেরে অনেকেই আবার পেমেন্ট পাচ্ছেন না। এতে ৩০ শতাংশ কারখানা যদি মার্চ মাসে বেতন ঠিক সময়ে দিতে ব্যর্থ হোন তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এতে করে শ্রমিক অসন্তোষ তো তৈরি হতেই পারে।
শুধু নারায়ণগঞ্জ এলাকায়ই মার্চ মাসে শতাধিক কারখানার মলিকপক্ষ শ্রমিকদের বেতন দিতে ব্যর্থ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশন এর সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল।
তিনি বলেন, বর্তমান যে অবস্থা চলমান আছে তাতে ফেব্রুয়ারি মাসেই বেশির ভাগ কারখানা ১৫ তারিখের পর বেতন দিয়েছে। মার্চ মাসে নারায়ণগঞ্জ এলাকার শতাধিক কারখানা বেতন দিতে পারবে না শ্রমিকদের। সে হিসাবে পুরো দেশে প্রায় ২৫ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ কারখানাই তাদের শ্রমিকদের বেতন দিতে পারবে না। আর শ্রমিকরা রাজনীতি বোঝে না। বেতন না পেলে তারা রাস্তায় নামবে এটাই স্বাভাবিক।
অন্যদিকে বাংলাদেশ রফতানিকারক সমিতির সভাপতি ও বিজিএমইএ এর সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, বর্তমান চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় ছোট ও ও মাঝারি আকারের গার্মেন্ট কারখানাগুলোর টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়বে। সেক্ষেত্রে অনেক কারখানাই আগামী মাসে(মার্চ) শ্রমিকদের বেতন দিতে পারবে না। এতে করে পোশাক শিল্প পরিবেশ আবারো অশান্ত হয়ে উঠতে পারে।
ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকেই আশুলিয়া, গাজীপুর, সাভার এলাকায় ১০ তারিখের মধ্যে বেতন দিতে না পারায় রাস্তায় নেমে এসেছিলো অনেক কারখানার শ্রমিক। এর মধ্যে ছিলো মাহবুব অ্যাপারেলস, জেমিনি গার্মেন্ট, কাজী এন্টারপ্রাইজহ শতাধিক কারখানা।
রাজধানীর মালিবাগের কাজী এন্টারপ্রাইজ গার্মেন্টের মালিকপক্ষ ২২ ফেব্রুয়ারিও বেতন দিতে পারেনি শ্রমিকদের। এতে ২৩ ফেব্রুয়ারি সোমবার কাজ বন্ধ করে দিয়েছে শ্রমিক পক্ষ।
চলমান অবরোধে মাহবুব অ্যাপারেলস শ্রমিকদের কাজের রেট কমিয়ে দিয়েছে। ডিসেম্বর মাসেও কাজের রেট ছিলো ৫৯ টাকা। কিন্তু জানুয়ারি মাসের বেতন দেয়ার সময় শ্রমিকদের সাথে কোনো আলোচনা ছাড়াই কমিয়ে ৪৪ টাকা করা হয়। ৮ ফেব্রুয়ারি বিষয়টিকে কেন্দ্র করে শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হলে মালিকপক্ষ ১০ ফেব্রুয়ারি শ্রমিকদের জন্য আলোচনার আহ্বান জানান।
১০ ফেব্রুয়ারি শ্রমিকরা তাদের ১১ দফা দাবি নিয়ে কারখানা গেলে কারখানা মালিক, শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ হয় বলে জানান কারখানাটির শ্রমিকরা। এ সময় ২৫ জন শ্রমিক আহত হয়। বিজিএমইএ এর হস্তক্ষেপেও সমস্যা সমাধান না হওয়ায় শ্রমিকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মামলা করার। এতে পরিস্থিতি আরো জটিল হবে বলেই ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অন্যদিকে ফেব্রুয়ারি মাসের অর্ধেক চলে গেলেও বেতন পরিশোধ করতে না পারায় শ্রমিকরা জিম্মি করেছিলো গার্মেন্ট মালিককে। শ্রমিকদের চাপে ১৬ ফেব্রুয়ারি জানুয়ারি মাসের বেতন প্রদান করেন মালিক পক্ষ।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের শুরুতে ৫ জানুয়ারি থেকে ২০ দলের ডাকা অবরোধ চলছে। তার সাথে চলছে হরতালও। আর তাতে হচ্ছে নানা সহিংসতা। এতে দেশে ৮০ শতাংশ ক্রেতাই বাংলাদেশের আসার সফর বাতিল করেছে বলে জানা যায় বিজিএমইএ থেকে। তাছাড়া রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে জানুয়ারি মাসে প্রায় ৪০ শতাংশ অর্ডার কম এসেছে পোশাক শিল্প খাতে।
বাংলাদেশ সময়ঃ ১২১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৫