ঢাকা, শনিবার, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ডিএসই ভবনের জায়গা না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ ট্রেকহোল্ডাররা

সাঈদ শিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৫
ডিএসই ভবনের জায়গা না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ ট্রেকহোল্ডাররা

ঢাকা: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ’র(ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পর্ষদের ওপর ক্ষুব্ধ প্রতিষ্ঠানটির প্রভাবশালী ট্রেকহোল্ডাররা। নামমাত্র মূল্যে নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেওয়া রাজধানীর খিলক্ষেতের নিকুঞ্জে ‘ডিএসই ভবনে’র জায়গা স্থায়ীভাবে বরাদ্দ না পাওয়ায় তারা ক্ষুব্ধ হয়েছেন।


 
গত ১১ ফেব্রুয়ারি ডিএসই’র বার্ষিক সাধারণ সভায়(এজিএম) প্রভাবশালী ট্রেকহোল্ডাররা ব্যবস্থাপনা পর্ষদের ওপর এ বিষয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করেন। সভায় ৬ মাসের মধ্যে ডিএসই ভবনের জায়গা বরাদ্দও চান তারা।
 
ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, মাত্র ৪ কোটি টাকায় ১৯৯৬ সালে তৎকালীন সরকার ডিএসইর নামে নিকুঞ্জে চার বিঘা জমি বরাদ্দ দেয়। ‘ডিএসই ভবন’ নামে এই জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে ১৩ তলা ভবন।
 
২০১৩ সালে এ ভবনের জায়গা নাম মাত্র মূল্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেওয়ার ‍পায়তারা চালায় প্রভাবশালী সদস্যরা। এ লক্ষ্যে সদস্যদের নামে বিভিন্ন ভাগে ভবনের জায়গা বরাদ্দও দেওয়া হয়। আহসানুল ইসলাম টিটু ডিএসইর সভাপতি থাকাকালীন ২০১৩ সালের ৫ আগস্ট বরাদ্দের চিঠি দেওয়া হয় সদস্যদের।
 
কিন্তু একই বছরের ১২ সেপ্টেম্বর ডিএসইকে ভবনের জায়গা সদস্যদের স্থায়ীভাবে বরাদ্দ না দিতে এবং ৫ আগস্টের বরাদ্দ বাতিলের পরামর্শ দেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ফলে বিএসইসি’র বাধায় পণ্ড হয়ে যায় ভাগ-বাটোয়ারার ফন্দিফিকির।
 
এর আগে ৬ জুলাই স্টক এক্সচেঞ্জের স্থায়ী ও অস্থায়ী সম্পদ ক্রয়-বিক্রয় অথবা হস্তান্তরের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে নির্দেশনা জারি করে বিএসইসি। কিন্তু ওই নির্দেশনা না মেনে ৫ আগস্ট সদস্যদের ভবনের জায়গা বরাদ্দের চিঠি দেওয়া হয়।
 
ডিএসই সূত্র জানায়, মাত্র আট লাখ টাকায় কারও নামে আটশ ৫০ বর্গফুট আবার কারও নামে দুই হাজার ৫০ বর্গফুট জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সদস্যদের প্রভাবের উপর ভিত্তি করে এ ভাগ-বাটোয়ারা করা হয়।
 
ভবনের জায়গা বরাদ্দের জন্য প্রথমে পাঁচশ ও এক হাজার বর্গফুট এই শ্রেণিতে মাসিক কিস্তিতে সদস্যদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করা হয়। পাঁচশ বর্গফুটের জন্য এক লাখ এবং অতিরিক্ত পাঁচশ বর্গফুটের জন্য সাড়ে সাত লাখ টাকা করে নেওয়া হয়। কিন্তু প্রভাবশালীরা আট লাখ টাকা দিয়েই দুই হাজার ৫০ বর্গফুট জায়গার বরাদ্দ পান।
 
সর্বোচ্চ দুই হাজার ৫০ বর্গফুট জায়গা বরাদ্দ পাওয়াদের তালিকায় রয়েছেন বর্তমান পরিচালক খাজা গোলাম রসুল, শাহজাহান ভূঁইয়া, সাবেক সভাপতি রকিবুর রহমান, আবদুল হক, কাজী ফিরোজ রশীদ, সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আহমেদ রশীদ লালী, সাবেক সহসভাপতি মিজানুর রহমান ও হানিফ ভূঁইয়া।
 
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এক হাজার আটশ ৫০ বর্গফুট জায়গা বরাদ্দ পান সাবেক সভাপতি সাহিক খান, আবদুল্লাহ বোখারি, শরীফ আতউর রহমান, আহমেদ ইকবাল, আহসানুল ইসলাম টিটু, খুরশিদ আলম ও আজিজুর রহমানের প্রতিষ্ঠান।
 
ডিএসই’র সাবেক সভাপতি আহসানুল ইসলাম টিটু বাংলানিউজকে বলেন, টাকা খরচ করে নিকুঞ্জে ডিএসই ভবন করা হয়েছে। কিন্তু গত এক বছরেও সদস্যদের ভবনের জায়গা বুঝিয়ে দিতে পারেনি ব্যবস্থাপনা পর্ষদ।
 
তিনি বলেন, সদস্যদের ভবনের জায়গা বুঝিয়ে না দিয়ে দিনের পর দিন ফেলে ‍রাখা হচ্ছে। এতে সদস্যরা ক্ষুব্ধ হবেন এটাই স্বাভাবিক। কারণ ফেলে রাখার জন্য টাকা খরচ করে ভবন করা হয়নি। তবে আমরা ব্যবস্থাপনা পর্ষদকে বলেছি। তারা কথা দিয়েছেন আগামী ৬ মাসের মধ্যে আমাদের ভবনের জায়গা বুঝিয়ে দিবেন।
 
বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে কোনো কথা বলতে রাজি হননি ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) স্বপন কুমার বালা।

তবে ডিএসইর এক কর্মকর্তা জানান, ৬ মাসের মধ্যে ডিএসই ভবনের জায়গা সদস্যদের ‍বুঝিয়ে দেওয়ার বিষয়ে কোনো কথা দেয়নি ব্যবস্থাপনা পর্ষদ।

ডিএসই তথ্য মতে, ১.৩৩ একরের ওপরে গড়ে উঠছে নান্দনিক ডিএসই ভবন। প্রকল্প এলাকা সাড়ে ৭ লাখ স্কয়ার ফুটের বেশি জায়গা নিয়ে। ২০০৬ সালের ৩০ এপ্রিল ডিএসই এ ভবন নির্মাণের জন্য চুক্তি করে। সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি এ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।

৩টা বেসমেন্ট কার পার্কিংয়ের জন্য ব্যবহ্রত হবে। এছাড়া নিচতলায় মক ট্রেডিং হল, মিডিয়া সেন্টার থাকবে। ২য় তলায় থাকবে ডিএসই কার্যালয়।

৩য় থেকে ১১তলা পর্যন্ত ডিএসই সদস্যদের মাঝে বরাদ্দ দেওয়া হবে। ১২ তলার অংশ বিশেষ ও ১৩ তলায়(১৯ হাজার ৮’শ স্কয়ার ফুট) থাকবে অডিটোরিয়াম। এছাড়া ১৩ তলার সাড়ে ১৭ হাজার স্কয়ার ফুট মেম্বারস ক্লাবের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হবে। এর মধ্যে থাকবে টিভি লাউঞ্জ, ইনডোর গেমস, হেলথ ক্লাবসহ অন্যান্য সুবিধা।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১০১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।