ঢাকা: মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আজিয়টা লিমিটেডের রাজস্ব ৯ দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৩ সালে ছিল ৪ হাজার ৫২০ কোটি, ২০১৪ সালে যা ৪ হাজার ৯৪০ কোটিতে দাঁড়িয়েছে।
বুধবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীতে রবি’র করপোরেট অফিসে ২০১৪ সালের চতুর্থ প্রান্তিক ও একই বছরের ব্যবসায়িক বিবরণ প্রকাশ করা হয়।
এতে চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) মাহতাব উদ্দিন আহমেদ জানান, ২০১৩ সালের তুলনায় গ্রাহক সংখ্যা এক শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে রবি’র বর্তমান মার্কেট শেয়ার দাঁড়িয়েছে ২১ শতাংশে। ফেসবুকে রবি’র মার্কেট শেয়ার ৩৭ শতাংশ। ২০১০ সাল থেকে রবি মুনাফা করছে।
বিদায়ী ২০১৪ সালে রাজস্ব বৃদ্ধির সঙ্গে বেড়েছে মার্কেট শেয়ারও। গত এক বছরে ২৯ লাখ গ্রাহক যুক্ত হওয়ায় রবি’র মোট গ্রাহক এখন ২ কোটি ৫৩ লাখ।
রবি’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও সুপুন বীরাসিংহে বলেন, ‘তরঙ্গ সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো ধরনের নেটওয়ার্ক ক্যাপাসিটি বাড়াতে তরঙ্গ লাগবেই। ’
তিনি বলেন, সব দিক থেকে আমাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রমের উন্নয়ন সন্তোষজনক। দেশজুড়ে ৩.৫জি সেবা ছড়িয়ে দেওয়ায় বছরের শুরু থেকেই ইন্টারনেট থেকে আমরা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রাজস্ব অর্জন করেছি। সারা দেশে ৩.৫জি নেটওয়ার্কের বিস্তৃতি ও ইন্টারনেট ব্যবহারের হার বৃদ্ধির লক্ষে বিনিয়োগ করে চলেছে রবি। তবে বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা আমাদের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয় যা ২০১৫ সালের ব্যবসায়িক সাফল্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ’
চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দেশজুড়ে রবি সাশ্রয়ী মূল্যে উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক ইন্টারনেট সেবা প্রদান করছে। যার ফলে ইন্টারনেট ব্যবহার সহজ ও ব্যয় সাশ্রয়ী হয়ে উঠেছে। ভয়েস সেবার ক্ষেত্রে রবি ফ্ল্যাট রেট টকটাইম অফার এবং টার্গেট বোনাস অফার ও বান্ডল প্রডাক্টসহ আকর্ষণীয় রিচার্জ ক্যাম্পেইন চালু করেছে। ’
চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার মতিউল ইসলাম নওশাদ বলেন, শুধু ব্যবসা নয়, এর পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেও অনেক কিছু করছে রবি আজিয়াটা লিমিটেড।
৩.৫জি নেটওয়ার্কের বিস্তৃতি সম্পর্কে সিওও বলেন, ‘২ হাজার ৪০০ টির বেশি নেটওয়ার্কের সাইটের মাধ্যমে রবি ২০১৪ সালের নভেম্বরে দেশের ৬৪টি জেলাকেই ৩.৫জি সেবার আওতায় এনেছে। ’
বিদায়ী বছরে ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত রাজস্বের পরিমাণ ১২০ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজস্ব বৃদ্ধির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। গত বছরের তুলনায় যা ৯ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। নেটওয়ার্কে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের কারণে ৩.৫জি ও ২.৫জি সেবার মান বৃদ্ধি পাওয়ায় বার্ষিক ইন্টারনেট ব্যবহার ২৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে মোবাইল ফোন শিল্পের বাজার বৃদ্ধির তুলনায় রবি তার রাজস্ব বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রেখে রাজস্বের দিক থেকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন অপারেটর হওয়ার মর্যাদা অটুট রেখেছে।
একই সময়ে সুদ, কর, অবচয় ও অ্যামোর্টাইজেশন বাদে আয় (ইবিআইটিডিএ) ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে ইবিআইটিডিএ মার্জিন ৩০০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে ৩৮ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
উল্লেখযোগ্য রাজস্ব বৃদ্ধি ও ব্যয়ের ক্ষেত্রে দক্ষ ব্যববস্থাপনা নিশ্চিত করে ইবিআইটিডিএ মার্জিনের অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে। বাড়তি অপারেশনাল ব্যয় এবং ৩.৫ জি ও ২.৫ জি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের ফলে স্পেকট্রাম খাত ও ক্যাপিটাল ব্যয়ের ফলে সৃষ্ট বর্ধিত বিনিয়োগের অবচয় সত্ত্বেও ইবিআইটিডিএ’র বৃদ্ধি ও সঠিক বিনিয়োগ কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে কর পরবর্তী মুনাফা (পিএটি) ২০.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০১৪ সালের তৃতীয় ও চতুর্থ প্রান্তিকের ফলাফলের তুলনামূলক বিশ্লেষণ:
গ্রাহককেন্দ্রিক সেবা প্রদান ও সুষ্ঠু প্রচারের ফলে গ্রাহক সংখ্যা ২ কোটি ৫০ লাখ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২ কোটি ৫৩ লাখে পৌঁছেছে, অর্থাৎ গ্রাহক বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৩ শতাংশ।
মূলত ইন্টারনেট ও পোস্ট পেইড ভয়েস থেকে রাজস্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় তৃতীয় প্রান্তিক থেকে চতুর্থ প্রান্তিকে রাজস্ব ৯ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে যা টাকার অংকে ১ হাজার ৩৩০ কোটি।
৩.৫জি সেবা প্রদান করতে নেটওয়ার্ক পরিচালনার ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় তৃতীয় প্রান্তিকের তুলনায় চতুর্থ প্রান্তিকে ইবিআইটিডিএ ৭ শতাংশ বা ৪৫০ কোটি টাকা কমেছে। ইবিআইটিডিএ কমায় ও নেটওয়ার্ক বিস্তৃতিতে প্রচুর অবচয় হওয়ায় তৃতীয় প্রান্তিকের তুলনায় চতুর্থ প্রান্তিকে পিএটি ২৯ দশমিক ৯ শতাংশ কমেছে যা টাকার অংকে ৯০ কোটি।
২০১৩ ও ২০১৪ সালের ফলাফলের তুলনামূলক বিশ্লেষণ:
পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ২০১৪ সালে গ্রাহক সংখ্যা ১৩ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২ কোটি ৫৩ লাখে পৌঁছেছে। গ্রাহককেন্দ্রিক সেবা ও পণ্য এবং মানসম্মত ইন্টারনেট সেবা প্রদান করায় গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
তুলনামূলক বিশ্লেষণে রবি’র উল্লেখযোগ্য রাজস্ব বৃদ্ধি হয়েছে- ৯ দশমিক ৪ শতাংশ; ২০১৩ সালে ছিল ৪ হাজার ৫২০ কোটি, ২০১৪ সালে যা ৪ হাজার ৯৪০ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে দেশজুড়ে ৩.৫জি সেবা প্রদান করায় ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব ১২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০১৩ সালে ইবিআইটিডিএ ছিল ১ হাজার ৬০০ কোটি, ২০১৪ সালে ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে তা ১ হাজার ৮৯০ কোটিতে পৌঁছেছে। মূলত ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধি ও কার্যকর ব্যয় ব্যবস্থাপনার কারণে ইবিআইটিডিএ বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০১৪ সালে রবি’র পিএটি হচ্ছে ৪৪০ কোটি, ২০১৩ সাল থেকে যা ২০ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। রাজস্ব বৃদ্ধি ও পরিচালনগত দক্ষতার কারণে ধারাবাহিকভাবে পিএটি বৃদ্ধি পাচ্ছে। থ্রিজি খাতে মূলধনী ব্যয় ৩৬০ কোটিসহ ২০১৪ সালে রবি’র মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
মোবাইল নেটওয়ার্ক অবকাঠামোয় বিনিয়োগ:
ভয়েস ও ইন্টারনেট সেবার মান বৃদ্ধির জন্য ৩.৫জি নেটওয়ার্কের বিস্তৃতি ও ২.৫জি নেটওয়ার্কের উন্নয়নে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে রবি। ২ হাজার ৪০০টি ৩.৫জি নেটওয়ার্ক সাইটের মাধ্যমে দেশে সর্বোত্তম ইন্টারনেট সেবা প্রদান করছে রবি। ২০১৪ সালে মূলধনী ব্যয়ের মাধ্যমে এ খাতে মোট বিনিয়োগ করা হয়েছে ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। দেশের ৬৪টি জেলাতেই এখন রবি’র ৩.৫জি নেটওয়ার্ক বিস্তৃত রয়েছে।
স্টেকহোল্ডারদের পরিশোধিত অর্থের বিবরণ:
২০১৪ সালে রবি সরকারি কোষাগারে ২ হাজার ১৭০ কোটি টাকার বেশি জমা দিয়েছে যা কোম্পানির রাজস্বের ৪৩ দশমিক ৮ শতাংশ এবং সেবা খাত থেকে প্রাপ্ত জিডিপির দশমিক ৪ শতাংশ। ১৯৯৭ সালে যাত্রা শুরুর পর থেকে রবি এ পর্যন্ত ১৪ হাজার ২০০ কোটি টাকার বেশি সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে।
রবি আজিয়াটা লিমিটেড সম্পর্কে:
রবি আজিয়াটা লিমিটেড মালয়েশিয়ার আজিয়াটা গ্রুপ বারহাদ ও জাপানের এনটিটি ডেকোমা’র একটি যৌথ কোম্পানি। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী- রবি রাজস্ব আয়ের দিক থেকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন অপারেটর।
এর গ্রাহক সংখ্যা ২ কোটি ৬০ লাখের বেশি। রবি দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯৯ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে ১১ হাজারের বেশি টুজি নেটওয়ার্ক এবং প্রায় ২ হাজার ২০০টি ৩.৫জি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সেবা প্রদান করছে। এছাড়া ২০০টি দেশে ৬০০টি অপারেটরের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে ব্যাপক ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক রোমিং সেবা প্রদান করছে রবি।
রবি দেশের প্রথম অপারেটর হিসেবে জিপিআরএস ও ৩.৫জি সেবা চালু করেছে। অপারেটরটি ডিজিটাল সেবা চালুর দিক থেকে অনেক ক্ষেত্রে পথিকৃতের ভূমিকা পালন এবং গ্রামীণ ও উপশহর অঞ্চলগুলোর সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য মোবাইল আর্থিক সেবা চালু করতে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৫