ঢাকা: চালের মতো বিদেশে গম ও ভুট্টা রফতানি করার লক্ষ্যে দেশব্যাপী মহাপরিকল্পনা হাতে নিতে যাচ্ছে সরকার। স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কায় চাল রফতানি করেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ সরকারের খাদ্য অধিদফতরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে দেশ থেকে প্রথম দফায় গত ডিসেম্বরে সাড়ে ১২ হাজার মেট্রিকটন চাল রফতানি করা হয়।
চালের পাশাপাশি দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে গম ও ভুট্টা রফতানির লক্ষ্য নিয়ে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার।
অপরদিকে সাম্প্রতিককালে দেশে পোল্ট্রি শিল্প দ্রুত প্রসার লাভ করছে এবং মূলত পোল্ট্রি খাদ্যে ভুট্টার চাহিদার কারণেই এর চাহিদাও ব্যাপক। চাষীদের মাঝে হাইব্রিড ভুট্রার আবাদ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ভুট্টার চাষ লাভজনক হওয়ার কারণে এই আবাদ প্রসার লাভ করেছে। যে কারণে ভুট্টা চাষে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।
এর জন্য ৪৬০ কোটি খরচ করবে কৃষি মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন(বিএডিসি) ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সিটিটউট(বারি) খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে প্রধান ভূমিকা পালন করবে।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিএডিসি ও বারি আলাদাভাবে ধান, গম ও ভুট্টার ফলন বাড়াতে নানা ধরনের কার্যক্রম হাতে নিচ্ছে। হাইব্রিড জাতের ধান, গম ও ভুট্টার উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বিএডিসি ও বারি ৪০টি জেলার ১০১টি উপজেলায় আলাদাভাবে নানা কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
‘ধান, গম, ভুট্টার উন্নততর বীজ উৎপাদন এবং উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় কৃষিতে মহাপরিকল্পনা নিতে যাচ্ছে সরকার। চলতি অর্থবছর থেকে শুরু করে জুন ২০১৯ সাল মেয়াদে এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে বিএডিসি ও বারি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক ও কৃষিবিদ এজেড এম মমতাজুল করিম বাংলানিউজকে বলেন, এটা আমাদের একটি মহাপরিকল্পনা। প্রাথমিকভাবে ১০১টি উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। পরবর্তী পর্যায়ে আমরা সারা দেশেই এটি বাস্তবায়ন করতে পারবো। আমরা চালের মতো গম ও ভুট্টা বিদেশে রফতানি করতে চাই। ’
‘সেই লক্ষ্যেই এ মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করতে যাচ্ছি। একদিকে আমাদের জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে অপরদিকে খাদ্য রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করতে পারবো। ’
তিনি আরও বলেন, ‘হাইব্রিড জাতের ধান, গম ও ভুট্টার উৎপাদন বৃদ্ধির মহাপরিকল্পনায় মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৬০ কোটি ৮ লাখ টাকা। চাষীরা যাতে করে ধানের মতো গম ও ভুট্টার বীজ সংরক্ষণ করতে পারে সে লক্ষ্যেও মাঠ পর্যায়ে নানা প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ‘
প্রকল্প মেয়াদে দেড় লাখ মেট্রিকটন গুনগত মানসম্পন্ন দানাশস্য(ধান, গম, ভুট্টা) বীজ উৎপাদন, সংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ও চাষী পর্যায়ে বিতরণ করা হবে।
বিএডিসি সূত্র আরও জানায়, বেসরকারি বীজ উদ্যোক্তাদের বীজ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ও বিতরণ সহযোগিতা এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। খাদ্যশস্য উৎপাদন গৃহীত সরকারি কর্মসূচি পালনে সহায়তা দেওয়া হবে। ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
অপরদিকে বারি সূত্র জানায়, গম ও হাইব্রিড ভুট্টার উন্নততর ও উচ্চ ফলনশীল জাতের উদ্ভাবন করা হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিত্তি বীজ এবং ভুট্টার ইনব্রিড লাইনগুলোর বীজ উৎপাদন ও বিতরণ করা হবে। গম ও ভুট্টার উন্নতমানের বীজ উৎপাদন জোরদারকরণ করা হবে। উদ্ভাবিত প্রযুক্তিগুলো প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী, মাঠ দিবস, প্রকাশনা এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে হস্তান্তর করা হবে।
স্বল্পমেয়াদী প্রশিক্ষণ ও ভিজিটের মাধ্যমে কৃষক, মাঠকর্মী ও বিজ্ঞানীদের জ্ঞান ও দক্ষতার উন্নয়ন করা হবে।
মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্পের আওতায় দেড় হাজার ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন করা হবে। এছাড়া ৮টি ট্রানজিট বীজ গুদাম নির্মাণ, দেড় হাজার বর্গমিটার বিশিষ্ট সানিং ফ্লোর নির্মাণ করা হবে।
বিএডিসি সূত্র আরও জানায়, প্রকল্পের আওতায় ১২টি গ্যারেজ, ১২টি সুইং মেশিন, চারটি জেনারেটর, ১০টি সিড ট্রিটার, ১২টি ফর্ক লিফট, ১২টি সিড ক্লিনার, ১২টি জার্মিনেটার, ৩৬টি ময়েশ্চার মিটার ও ২০০টি ফিউমিগেশন সিড সংগ্রহ করা হবে।
অপরদিকে সিড টেস্টিং ল্যাবরেটরির জন্য ৬টি চার টন বিশিষ্ট এয়ার কুলার সংগ্রহ করা হবে, ৮টি পিকআপ, ১২টি ট্রাক ও ২৫টি মোটরসাইকেল কেনা হবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিদ্যমান ১৩টি পুরাতন অফিসও আধুনিক করা হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বীজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেই লক্ষ্যে এই মহাপরিকল্পনা হাতে নেওয়া হচ্ছে। মানসম্পন্ন বীজ ব্যবহার করে ১৫-২০ ভাড় ফলন বাড়ানোর লক্ষ্যে এটি হাতে নেওয়া হচ্ছে।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র মনে করে, গম বাংলাদেশের দ্বিতীয় খাদ্য শস্য। নতুন নতুন উচ্চফলন গমের জাত উৎপাদন ও বীজ উৎপাদন কর্মসূচির জন্য এটি হাতে নেওয়া হচ্ছে।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিশ্বে মানব ও পশুখাদ্য হিসেবে ভূট্রার বহুল ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের তৃতীয় প্রধান দানাশস্য হিসেবে ভুট্টা গুরুত্বপূর্ণ ফসল এবং দিন দিন দেশে এর আবাদ ও ফসল বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই লক্ষ্যে ভুট্টা চাষেও প্রসার দরকার।
মহাপরিকল্পনায় প্রকল্প এলাকা হিসেবে রাজশাহী বিভাগের দিনাজপুর, নাটোর, রাজশাহী, চাপাঁই নবাবগঞ্জ, নওগাঁ, বগুড়া, পাবনা, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ জেলাকে নির্বাচন করা হয়েছে।
অপরদিকে রংপুর বিভাগের ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও রংপুর জেলাকে নির্বাচন করা হয়েছে। ঢাকা বিভাগের জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, ঢাকা, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।
চট্রগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্রগ্রাম ও বান্দরবন জেলায় বাস্তবায়িত হবে। খুলনা বিভাগের মেহেরপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মাগুরা জেলায় বাস্তবায়িত হবে। বরিশাল বিভাগের ভোলা, পটুয়াখালী ও বরিশাল জেলায় মহাপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলায় প্রকল্প এলাকা নির্বাচন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৩২১ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০১৫