ঢাকাঃ পোশাক শিল্পের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীরা রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে আবারো সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
সাম্প্রতিক সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে যখন আন্তর্জাতিক ক্রেতারা বাংলাদেশের পোশাক শিল্প সম্পর্কে দোলাচলে ঠিক তখন সুযোগ বুঝে সক্রিয় হয়ে উঠেছে একটি চক্র।
দায়িত্বশীল গোয়েন্দা সূত্র গুলো জানিয়েছে, চক্রান্তকারীরা এবার ভিন্ন পথে তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। একযোগে দেশের ভেতরে ও বাইরে চলছে ষড়যন্ত্র আর উষ্কানিমূলক তৎপরতা।
বিষয়টিতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারলে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কারখানায় বেতন-ভাতা অনিয়মিত হয়ে পড়ায় তা কাজে লাগাতে চাইছে চক্রটি।
ইপিজেড এলাকাগুলোর শ্রমিকদের অশান্ত করে তুলতে কাজ করছে তারা। আর নামধারী কিছু শ্রমিক নেতা দেশের বাইরে ক্রেতাদের কাছে গিয়ে প্রচারণা চালাতে শুরু করেছে। বাংলাদেশে শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, এটাই তাদের প্রচারণার মূল বক্তব্য।
এই শ্রমিক নেতারা বিদেশি ষড়ন্ত্রকারীদের এজেন্ট হিসেবে তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করছেন এমনটাই নিশ্চিত হয়েছে গোয়েন্দা বিভাগ।
গত দুই মাস ধরে তিন থেকে চার শ’ কারখানায় বকেয়া বেতন পড়ে গেছে। এসব কারখানায় বেতনের দাবিতে বিক্ষোভও শুরু হয়েছে। আর এজেন্টরা এই বিক্ষোভকারী শ্রমিকদের ছবি তুলে বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের মাধ্যমে পৌঁছে দিচ্ছেন ক্রেতাদের কাছে।
এই দলে প্রধান নাম হিসেবে আগের মতোই উঠে এসেছে কল্পনা আক্তার। দিন কয়েক আগে এই কল্পনা আক্তার কানাডা, আমেরিকার কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরে ঘুরে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের বিরুদ্ধে প্রচারনা চালান বলে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে।
এসব প্রচারণায় শ্রমিদের নানা বিক্ষোভের বিষয়ে তুলে ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করা হচ্ছে, তারা যাতে বাংলাদেশি পোশাক পরিধান থেকে বিরত থাকেন।
পোশাক শিল্পের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীরা আবার উঠে পড়ে লেগেছে এমন অভিযোগ তুলে বিকেএমইএ’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আসলাম সানি বাংলানিউজকে বলেন, তথাকথিত নামধারী শ্রমিক নেতারা বাইরের অর্থ ও মদদপুষ্ট হয়ে দেশের পোশাক শিল্প সম্পর্কে বিষোদগার করছেন।
তিনি বলেন, এই দেশি চক্রান্তকারীরা বুঝতে পারছেন না যে পোশাক শিল্পের ক্ষতি মানে কেবল মালিকের ক্ষতি নয়, শ্রমিকরাও এতে সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
বিদেশি অর্থপুষ্ঠ হয়ে যারা দেশের শিল্পের ধ্বংস নিশ্চিত করতে উঠে পড়ে লেগেছে তাদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত বলেও মনে করছেন এই ব্যবসায়ী নেতা।
বিষয়টি ওয়াকিবহাল শ্রমিক নেতারাও। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে শ্রমিক নেতা নামধারী অনেকেই সংশ্লিষ্ট বলে জনিয়েছেন টেক্সটাইল গার্মেণ্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারন সম্পাদক তপন সাহা।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বিদেশি সংগঠনগুলোর কাছ থেকে যখন নামধারী শ্রমিক নেতারা আর্থিক সহায়তা নেন তার পিছনে অবশ্যই কোনো উদ্দেশ্য থাকে।
এদের অনেক শ্রমিক নেতারই দেশের শ্রমিকদের সাথে কেনো যোগাযোগ থাকে না। এরা বছরের বেশির ভাগ সময়ই কাটান বিদেশে, বলেন তপন সাহা।
এদের বিরুদ্ধে সরকার, মালিক ও শ্রমিক পক্ষকে এক জোটে কাজ করতে হবে এমন মত দিয়ে এই শ্রমিক নেতা বলেন, তবে হ্যা মালিক পক্ষ যদি শ্রমিকদের অধিকার বাস্তবায়নে সচেতন হয় তাহলে এ ধরনের ষড়যন্ত্র অনেকাংশেই রোধ করা সম্ভব।
বেশ কিছু কারখানায় বেতন-ভাতা বকেয়া পড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গার্মেন্ট মালিকদের পাশাপাশি সরকারকেও এ ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে।
উল্লেখ্য, ফেব্রুয়ারির শুরু থেকেই আশুলিয়া, গাজীপুর, সাভার এলাকায় ১০ তারিখের মধ্যে বেতন দিতে না পারায় রাস্তায় নেমে আসে অনেক কারখানার শ্রমিক। এখনও এসব কারখানায় একই অবস্থা রয়েছে।
চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০ দলের ডাকা অবরোধ চলছে। তার সাথে চলছে হরতালও। আর তাতে হচ্ছে নানা সহিংসতা। পেট্রোল বোমা মেরে কাভার্ড ভ্যান পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই কাভার্ড ভ্যানই তৈরি পোশাক চালান আনা নেওয়ার অন্যতম মাধ্যম। রাজনৈতিক সংহিসতার কারণে যেগুলো রাস্তায় নামে না বললেই চলে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত পোশাক শিল্প। আর সহিংসতার কারণে ৮০ শতাংশ ক্রেতাই বাংলাদেশে সফর বাতিল করেছেন। এ তথ্য বিজিএমইএ’র।
রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে পোশাক শিল্প খাতে জানুয়ারি মাসে প্রায় ৪০ শতাংশ অর্ডার কম এসেছে বলেও জানায় মালিক পক্ষের সংগঠনটি।
বাংলাদেশ সময় ১৫১১ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৫