ঢাকা: উত্তরাঞ্চলের কৃষকদের বৃহত্তর স্বার্থে স্থাপিত হিমাগার প্রকল্পে চাহিদা মোতাবেক ব্যবসায়ীরা ঋণ পাচ্ছেন না। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিদের্শনা মোতাবেক ঋণ দেওয়ার কথা থাকলেও এখনও বিতরণ শুরু করেনি রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক(রাকাব)।
এদিকে হিমাগার মালিকরা আলু ক্রয় না করায় সম্ভাব্য লোকসান এড়াতে ক্ষেত থেকে আলু তুলতে নতুন করে আর অর্থ ব্যয় করতে চাইছেন না কৃষকরা। ফলে এখনো মাঠের পর মাঠ পড়ে আছে আলু।
আর অর্থাভাবে আলু কিনতে না পারায় খালিই থাকবে উত্তরাঞ্চলের প্রায় অর্ধশত হিমাগার। ফলে পুরনো ঋণের টাকা পরিশোধ করা নিয়েও হিমাগার মালিকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা।
এর আগে উত্তরাঞ্চলের কৃষকদের বৃহত্তর স্বার্থে স্থাপিত হিমাগার প্রকল্প ঋণ পুনর্গঠন করতে হিমাগার মালিকদের আর্থিক সুবিধা দিতে ওই এলাকায় কার্যরত ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়ে পরিপত্র জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সর্বশেষ গত রোববার (৮মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে আরও একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে হিমাগার প্রকল্পে নতুন ঋণ বিতরণে জামানতের শর্ত শিথিল করার কথা উল্লেখ করা হয়।
এছাড়া হিমাগার প্রকল্পে ঋণ পুনর্গঠন সম্পর্কিত গত ২৯ জানুয়ারির পরিপত্রে শুধু উত্তরাঞ্চলের জন্য দেওয়া নির্দেশনাটি বন্ধক রাখা মালামালে আচ্ছাদিত নতুন চলতি মূলধন ঋণের ক্ষেত্রে নতুন জামানত গ্রহণের শর্ত শিথিলযোগ্য হবে বলেও উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগ উঠেছে, রুপালী, সোনালী, অগ্রণী ও জনতাসহ অন্য ব্যাংকগুলো এ নির্দেশ মোতাবেক ঋণ দিলেও মানছে না উত্তরাঞ্চলে কার্যরত রাকাব। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে মার্চের শেষ পর্যন্ত আলু ক্রয় করা হয়। এসময়ে ঋণ না পেলে হিমাগারগুলোতে নতুন আলু তোলা সম্ভব হবে না।
উত্তরাঞ্চলের হিমাগার মালিকরা জানান, ব্যবসার সুবিধার্থে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেওয়া ঋণ প্রদান নির্দেশনা মানছে না রাকাব। ফলে আমরা আলু ক্রয় করতে পারছি না। হরতাল অবরোধের কারণে বাইরের হিমাগারেও আলু পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। এতে আলু চাষীয়-ব্যবসায়ীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেজর (অব.) জসিম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, উত্তরাঞ্চলের হিমাগার মালিক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে ঋণ পাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
রুপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম ফরিদ উদ্দিন বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিপত্র অনুযায়ী উত্তরাঞ্চলের হিমাগার মালিকদের মূলধন সুবিধা দেওয়া শুরু হয়েছে। এ ধরনের সুবিধা চালু রাখা হবে।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, বগুড়া, জয়পুরহাট, রংপুর, নীলফামারী, দিনাজপুর, নওগাঁ, পাবনা, সিরাজগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলে আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজার মুল্যের চেয়ে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় লোকসানের হিসাব কষতে হচ্ছে প্রত্যেক চাষীকে। চরম মূল্য পতনের কারণে অনেকেই জমি থেকে আলু তুলছে না।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের কৃষক শেখ সাদী বাংলানিউজকে বলেন, আলু তোলায় শ্রমিকের মজুরির টাকাও উঠবে না জেনে আলু তুলতে জমিতে যাচ্ছে না চাষীরা। তিন বিঘা জমির আলু কয়েক দিন আগে বিক্রি করে যে টাকা পেয়েছি তাতে খরচের অর্ধেক হবে না। এ কারণে আলু তুলতে ভয় পাচ্ছি। উৎপাদন খরচ প্রতিকেজি ৬ টাকা হলেও বিক্রি করতে হচ্ছে ৩ টাকায়। ’
কৃষকরা মূলত বিগত বছরের লোকসান তুলে আনতেই এবার আরো বেশি চাষে মনোনিবেশ করেছিল। কিন্তু তাদের সেই লক্ষ্য পূরণ না হয়ে উল্টো লোকসানের ধারাবাহিকতায় নিমজ্জিত হয়েছে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফরের উপ-পরিচালক চন্ডি দাস কুন্ডু বাংলানিউজকে জানান, আলুর জন্য সহনশীল তাপমাত্রা এবং পরামর্শ অনুযায়ী কৃষক কাজ করায় আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে।
রাকাব ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মনজুর আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, হিমাগার প্রকল্পে ঋণ দিতে পরিচালনা পর্ষদের আগামী সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৫