ঢাকা: লিনুফা আক্তার। উত্তর শাহজাহানপুরের বাসিন্দা।
দিনের মধ্যে একাধিকবার ফোন দিয়েছেন তিতাসেও। আশার বানী শুনানো হয়েছে তিতাস থেকে। বলা হয়েছে, ঘণ্টাখানেকের মধ্যে আসবে। দিন গিয়ে রাতও গত হচ্ছে তবু গ্যাসের খবর নেই। অগত্যা মধ্যরাতে স্বামীকে নিয়ে খাবারের জন্য হোটেলে এসেছেন। সেখানে হোটেলে এসে দেখেন দীর্ঘ লাইন।
কেবল উত্তর শাহজাহানপুরের এ বাসিন্দাই নন। বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) এ এলাকার পাশাপাশি খিলগাঁও, বনশ্রী, মুগদা ও মানিকনগর এলাকার বেশিরভাগ বাসাতেই জ্বলেনি গ্যাসের চুলা। আর সে কারণেই দুপুর থেকেই এসব এলাকার খাবারের হোটেলগুলোতে দেখা গেছে উপচেপড়া ভীড়।
খাবার কেনার সময় বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১টায় কথা হয় লিনুফা আক্তারের সঙ্গে। ক্ষোভের সঙ্গে বললেন, ‘সকাল ৮টা থেকে গ্যাস নেই। দুপুর পর্য্যন্ত যখন গ্যাস আসেনি তখন তিতাসের অভিযোগ শাখায় ফোন দিলাম। বললো ঘণ্টাখানেকের মধ্যে আসবে। দু’ঘণ্টার বেশি সময় গ্যাস না আসায় বিকেলে আবারও ফোন দিলাম; তিতাস থেকে বললো সন্ধ্যার আগে চলে আসবে। আসেনি। ’
তিনি বলেন, দিনে শুকনা খাবার খেয়ে ছিলাম রাত ৮টা দিকে বাসা থেকে নেমে হোটেলে এসে দেখি খাবার কেনার জন্য লম্বা লাইন। বাসায় ফিরে গিয়ে এখন মধ্যরাতে এসেও দেখি লাইন।
রাত দেড়টায় খিলগাঁও গিয়েও একই চিত্র পাওয়া গেলো। খাবার হোটেলে দীর্ঘ লাইন। খিলগাঁও গোড়ানের বাসিন্দা একরাম হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এলাকায় সকাল ৯টা থেকে গ্যাস নেই। কবে আসবে সেটাও জানানো হয়নি।
মধ্যরাতে বনশ্রী, মুগদা ও মানিকনগর গিয়েও প্রায় একই দৃশ্যই দেখা গেছে। খাবারের দোকানগুলোর কোনোটিতে গ্যাস সিলিন্ডার কোনোটিতে ক্যারসিনের চুলা দিয়েই চলছে রান্নার আয়োজন।
চঞ্চল রহমান নামে এক এলাকাবাসী বাংলানিউজকে জানান, সকাল ৯টার দিকে গ্যাস থাকলেও কিছুক্ষণ পর তা বন্ধ হয়ে যায়। গ্যাস লাইনে কাজ চলছে এমন ঘোষণা দিয়েই সরবরাহ বন্ধ করা হয়।
তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে জানানো হয়েছিলো এক ঘণ্টা পর অর্থাৎ সকাল ১০টার মধ্যেই গ্যাসলাইন চালু হবে। পরে না এলে তিতাসে ফোন করে তিনি জানতে পারেন দুপুরে চালু হবে। কিন্তু রাত এগারোটার দিকেও গ্যাস আসে নি।
চঞ্চল রহমান বলেন, শত শত লোক বাইরে বের হয়ে এসেছে রাতের খাবার কিনতে। সেসব রেস্টুরেন্টে অন্য ব্যবস্থায় রান্না হয়েছে সেখান থেকে খাবার কেনার হিড়িক পড়ে গেছে।
হঠাৎ গ্যাস নেই কেন? এ প্রশ্নের উত্তরও এসব এলাকার বাসিন্দাদের কাছে অজানা। ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে এসব এলাকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে।
মধ্যরাতে কথা হয় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপক (জরুরী গ্যাস নিয়ন্ত্রণ) এনামুল হকের সঙ্গে। বাংলনিউজকে তিনি বলেন, খিলগাঁও ফ্লাইওভারের সায়েদাবাদ প্রান্তে মেরামতের কাজ চলায় সাময়িকভাবে কিছু জায়গায় বৃহস্পতিবার গ্যাস পাওয়া যায়নি।
কিছু কিছু জায়গায় দিনে গ্যাস না থাকলেও রাতে চলে এসেছে বলে তিনি দাবি করেন। যেসব জায়গায় মধ্যরাতেও গ্যাস যায়নি সেখানে শুক্রবার সকালের মধ্যেই গ্যাস পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
মধ্যরাতে মতিঝিল তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড-এর অভিযোগ শাখায় বসতেই দেখা গেলো ফোনে অসংখ্য গ্রাহক অভিযোগ করছেন। একেরপর এক ফোন বেজেই চলছে। ‘গ্যাস কখন আসবে?’ এমন প্রশ্নের উত্তরই দিতে হচ্ছে রাতে দায়িত্বরত তিতাসের অভিযোগ শাখার কর্মকর্তাকে। তবে এমন প্রশ্নের উত্তরও তৈরি অভিযোগ শাখার কর্মকর্তার কাছে। ফোন ধরেই কর্মকর্তার সোজাসাফটা উত্তর - ‘কাজ চলছে, অপেক্ষা করুন। ’
** মুগদা-খিলগাঁওয়ে গ্যাস নেই, রাতে খাবার কেনার হিড়িক
বাংলাদেশ সময়: ০৩৫০ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৫