ঢাকা: বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে(এসএমই) অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্য পূরণে এসএমই’র উন্নয়নে প্রয়োজন এ খাতে গুচ্ছ (ক্লাস্টার) অর্থায়ন।
শনিবার (১৪ মার্চ) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত ‘এসএমই ক্লাস্টার ডেভলপমেন্ট: ইমপ্লিকেশন ফর ব্যাংকস’ শীর্ষ জাতীয় সেমিনারে বক্তরা এসব কথা বলেন।
বক্তরা বলেন, এসএমইতে গুচ্ছ অর্থায়নের বিষয়ে ব্যাংকারদের অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে। যে কারণে তারা গুচ্ছ অর্থায়নে সংকোচ বোধ করেন। তাছাড়া বাংলাদেশে গুচ্ছ অর্থায়নের ক্ষেত্রে কোন দিক নির্দেশনা অথবা নীতিমালা নেই।
অথচ এসএমইতে গুচ্ছ অর্থায়নই সব থেকে কার্যকরী। এটি করা সম্ভব হলে এসএমই ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ জন্য গুচ্ছ অর্থায়নের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা ঠিক করে দিতে হবে।
বিআইবিএম’র মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. আবুল কাশেম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ, ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেহমুদ হোসেন, এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ মো. ইহসানুল করিম, বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই বিভাগের উপদেষ্টা সুকোমল সিংহ চৌধুরী প্রমুখ।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইবিএম’র অধ্যাপক ও পরিচালক (ট্রেনিং) শাহ মো. এহসান হাবিব।
মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, এসএমইতে ব্যাংকগুলো যে অর্থায়ন করছে তার মাত্র দুই শতাংশ গুচ্ছ অর্থায়ন হচ্ছে। ২০১৩ সালের হিসাব মতে ব্যাংকগুলো এসএমইতে ৯০ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা অর্থায়ন করেছে। যার মধ্যে গুচ্ছ অর্থায়ন মাত্র ২ হাজার কোটি টাকার মতো।
আর গুচ্ছ যে অর্থায়ন হয়েছে তার ৭২ শতাংশই শীর্ষ ৫ ব্যাংকের। এরমধ্যে উত্তরা ব্যাংক ৩৮.০২ শতাংশ, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ১৭.১১ শতাংশ, দি সিটি ব্যাংক ৬.০৭ শতাংশ, এবি ব্যাংক ৫.৯৮ শতাংশ এবং যমুনা ব্যাংক ৪.১৪ শতাংশ।
অধ্যাপক ড. মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকগুলো একটি কাঠামোর মধ্যে থেকে অর্থায়ন করে। যা এসএমই খাতের জন্য উপযুক্ত না। ব্যাংকগুলোকে মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। এসএমই খাতে পলিসিগত সহায়তা দিতে হবে।
তিনি বলেন, এসএমই’র দুই শতাংশ গুচ্ছ অর্থায়ন হয়েছে এটি ভালো খবর। এর অর্থ হলো ব্যাংকগুলো এসএমইতে গুচ্ছ অর্থায়ন করছে। তবে এসএমই’র অর্থগুলো কোথায় ব্যবহার হচ্ছে সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর মনিটরিং করতে হবে।
মেহমুদ হোসেন বলেন, গুচ্ছ অর্থায়নে ব্যাংকারদের অভিজ্ঞতার অভাব থাকায় তারা অর্থায়নে কিছুটা সংকোচ বোধ করে। তবে শীর্ষ ৫ ব্যাংকের গুচ্ছ অর্থায়ন প্রমাণ করে এসএমইতে এটি বেশ কার্যকর।
সুকোমল সিংহ চৌধুরী বলেন, এসএমইতে গুচ্ছ অর্থায়নের বিষয়ে কোন কোন দিক নির্দেশনা অথবা নীতিমালা নেই। ব্যাংকগুলো ঝুঁকি নিয়ে গুচ্ছ অর্থায়ন করছে। সরকারের উচিত এসএমইতে গুচ্ছ অর্থায়ের জন্য একটি নীতিমালা ঠিক করে দেওয়া।
এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ মো. ইহসানুল করিম বলেন, কোন কোন খাতে গুচ্ছ অর্থায়ন করা যায় তার ক্ষেত্রেগুলো আমাদের খুজে বের করতে হবে। এসএমই’র জন্য বন্ধুত্বসুলভ নীতি সহায়তা দিতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৫