ঢাকা: প্রায় ৪ বছর ঝুলে থাকার পর বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) জনবল কাঠামোর অনুমোদন দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে এ জনবল কাঠামোতে অফিস সহকারী, ইলেকট্রিশিয়ান ও ক্লিনার বা পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পদ আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে পূরণের বিধান রাখা হয়েছে।
সে হিসেবে এই তিন পদের কর্মীরা অফিসের নিজস্ব কর্মী হিসেবে বিবেচিত হবেন না এবং সরকারি চাকরির নীতিমালা অনুযায়ী সুযোগ সুবিধাও পাবেন না। ফলে আইডিআরএতে বর্তমানে কর্মরতদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা বিরাজ করছে।
এমনকি নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচ্চ পদের কর্মকর্তারাও বিষয়টি নিয়ে হতাশ। চতুর্থ শ্রেণি পদের কর্মী, বিশেষ করে অফিস সহকারী পদের কর্মীদের মাধ্যমেই অফিসের সকল ধরনের ফাইল এক টেবিল থেকে অন্য টেবিলে আদান-প্রদান করা হয়।
এ পদের কর্মীরা নিজস্ব লোকবল না হলে অফিসের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা খুব একটা থাকবে না। ফলে অফিসের বিভিন্ন ফাইল তাদের মাধ্যমে অন্যত্র পাচার হয়ে যেতে পারে। হতাশা প্রকাশ করে কথাগুলো বলেন আইডিআরএ’র একাধিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৪ বছর ধরে ঝুলে থাকার পর সম্প্রতি অনুমোদন দেওয়া সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী ১৭টি পদে আইডিআরএ’র কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা হবে ১৫৫ জন।
এর মধ্যে চতুর্থ শ্রেণির পদে রয়েছেন অফিস সহকারী পদে ২০ জন, ইলেকট্রিশিয়ান পদে এক জন এবং ক্লিনার অথবা পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পদে ২ জন। এই তিন পদের ২৩ জন নিয়োগ পাবেন আউট সোর্সিং নীতিমালা অনুযায়ী।
অন্য ১৪টি পদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা আইডিআরএ’র নিজস্ব জনবল হিসেবে নিয়োগ পাবেন এবং সরকারি চাকরির নীতিমালা অনুযায়ী যাবতীয় সুযোগ সুবিধা পাবেন।
এর মধ্যে নির্বাহী পরিচালক ৪ জন, পরিচালক ৭ জন, অতিরিক্ত পরিচালক ১০ জন, উপ-পরিচালক ১০ জন, সহকারী পরিচালক ২০ জন, প্রোগ্রামার একজন, নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেটর ও চেয়ারম্যানের একান্ত সচিব পদে একজন করে নিয়োগ পাবেন।
এছাড়া কর্মকর্তা পদে ৩০ জন, প্রোগ্রাম অপারেটর ৫ জন, কম্পিউটার অপারেটর ১০ জন, চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সহকারী ৫ জন, ডাটা এন্ট্রি অথবা কন্ট্রোল অপারেটর ২০ জন এবং ড্রাইভার পদে ১০ জন নিয়োগ পাবেন। বিষয়টি অফিসিয়ালভাবে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে আইডিআরএকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সূত্রটি জানায়, বিমা খাতের সাবেক নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা অধিদফতর বিলুপ্ত করে ২০১১ সলে আইডিআরএ গঠন করে সরকার। ওই বছরই আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ জনবল নিয়োগ ও সাংগঠনিক কাঠামোর অনুমোদন চেয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন।
ওই আবেদন কয়েক দফা যাচাই ও পরিবর্তন করে ৪ বছরের মাথায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ১৭টি পদের বিপরীতে ১৯৫ জনের সাংগঠনিক কাঠামো অনুমোদনে সম্মতি দেয়। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পাওয়া চুড়ান্ত সাংগঠনিক কাঠামোতে জনবল রাখা হয়েছে ১৫৫ জন।
জনপ্রশাসনের সম্মতি দেওয়া কাঠামো থেকে উপ-পরিচালক পদে ৪ জন, সহকারী পরিচালক ও কর্মকর্তা ১০ জন করে, চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সহকারী ৪ জন, ডাটা এন্ট্রি অথবা কন্ট্রোল অপারেটর ৫ জন এবং ড্রাইভার পদে ৫ জন কমিয়ে আইডিআরএ’র জনবল কাঠামো অনুমোদন দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন দেওয়া সাংগঠনিক কাঠামো আমরা পেয়েছি। তবে এতে যে জনবল দেওয়া হয়েছে তা আমাদের চাহিদার তুলনায় কম।
তিনি বলেন, ২০১১ সালে যখন আবেদন করা হয় তখন বিমা প্রতিষ্ঠান ছিলো ৬২টি। বর্তমানে এ সংখ্যা ৭৭টি। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যে জনবল কাঠামো দেওয়া হয়েছে তা দিয়ে সুষ্ঠভাবে কার্যক্রম চালানো কষ্টকর হয়ে পড়বে।
অফিস সহকারী, ইলেকট্রিশিয়ান ও ক্লিনার বা পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের পদ আউট সোর্সিং নীতিমালা অনুযায়ী পূরণ করলে অফিসের স্বাভাবিক কাজে বিঘ্ন ঘটবে কি না জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করেননি শেফাক আহমেদ।
অর্থ মন্ত্রণালয়র অর্থ বিভাগের সহকারী সচিব রাশিদা খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, এটি সরকারের উচ্চ মহল থেকে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। আগে দেখা গেছে, চতুর্থ শ্রেণিতে যারা স্থায়ীভাবে কাজ করেছে তারা নানা অনিয়মে জড়িয়েছে। কিন্তু যারা আউটসোর্সিংয়ে কাজ করেছে তাদের কোনো ধরনের অনিয়ম পাওয়া যায়নি। এসব বিষয় বিবেচনা করেই আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
তবে আইডিআরএ’র সদস্য কুদ্দুস খান বাংলানিউজকে বলেন, আউট সোর্সিং নীতিমালা অনুযায়ী পদ পূরণ করার অর্থ হলো, এ পদে যারা নিয়োগ পাবেন তারা আইডিআরএ নিজস্ব জনবল হবেন না। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাবেন।
অফিস সহকারী অর্থাৎ পিয়ন পদে অউট সোর্সিং নীতিমালায় নিয়োগ দিলে তা ক্ষতিকর হতে পারে। কারণ তাদের মাধ্যমেই অফিসের ফাইল এক স্থান থেকে অন্যস্থানে আদান প্রদান হয়। তবে পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে আউট সোর্সিংয়ে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে, বলেন কুদ্দুস খান।
অফিস সহায়ক বা সহকারী পদে কখনো আউট সোর্সিংয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে এক সময় অতিরিক্ত সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর দফতরে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করা আইডিআরএ’র এই সদস্য বলেন, অনেক আগে একবার অফিস সহায়ক পদে অউট সোর্সিংয়ে নিয়োগের নিয়ম করা হয়েছিলো। কিন্তু এ নিয়ে নানা বিতর্ক ওঠার কারণে পরে তা বাতিল করা হয়।
এদিকে আইডিআরএতে কর্মরত একাধিক অফিস সহকারী বাংলানিউজের কাছে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, আমরা চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। আমাদের কথা কেউ ভাবে না। সরকার, নিয়ন্ত্রক সংস্থার বড় কর্তারা সবাই নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। আমাদের কি হবে? কিভাবে চলবে? তা ভাবার সময় নেই কারও।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ দিন ধরে বিমা খাতে বিরাজমান অরাজকতা, অনিয়ম ও দুর্নীতির জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার হাতেগোনা লোকবলই দায়ী। বিষয়টি অনুধাবন করে ফিরোজ আহমেদ অধুনালুপ্ত বিমা অধিদফতরের প্রধান বিমা নিয়ন্ত্রক থাকাকালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সাংগঠনিক কাঠামো বৃদ্ধির একটি প্রস্তাব পাঠান। সে সময় অধিদফতরের লোকবল ছিল মাত্র ২২ জন। সংখ্যাটি বাড়িয়ে ৪৯ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর জন্য প্রস্তাব করা হয়।
কিন্তু পরে ফিরোজ আহমেদ বাণিজ্য সচিব হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে চলে যান এবং বিমা খাতের নিয়ন্ত্রণ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যাস্ত হয়। ফলে বিষয়টি চাপা পড়ে যায়।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫০ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৫