ঢাকা: বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপে দেখা গেছে, দেশে মোট হস্তচালিত তাঁতের সংখ্যা ৫ লাখ ৫ হাজার ৫৫৬টি। এর মধ্যে বন্ধ রয়েছে এক লাখ ৯২ হাজার ৩১১টি হস্তচালিত তাঁত।
বিবিএস-এর ২০০৩ সালের জরিপ অনুযায়ী এক লাখ ৯২ হাজার ৩১১টি হস্তচালিত তাঁত বন্ধ রয়েছে। একে একে প্রায় ১২টি বছর পেরিয়ে গেলেও তাঁতগুলো চালুর বিষয়ে তেমন কোনো কার্যকর ভূমিকা নেয়নি বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড।
বন্ধ হস্তচালিত তাঁত চালুর বিষয়ে তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোঃ হাসানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘দেশে প্রায় দুই লাখ হস্তচালিত তাঁত বন্ধ রয়েছে। বন্ধ তাঁত চালুর বিষয়ে একটা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এতে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা খরচ হবে। কিন্তু প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়টি এখনও ঠিক হয়নি। ’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই বন্ধ তাঁত অচিরেই চালু হোক। সেই বিষয়ে আমরা কাজ করছি। শুল্কমুক্তভাবে সুতা ও রং যাতে করে তাঁতীরা পায় সেই বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। ’
বন্ধ তাঁত চালুর বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে গ্রহণযোগ্য কোনো উত্তর দেননি চেয়ারম্যান।
অথচ তাঁত বোর্ডের প্রধান দায়িত্ব প্রান্তিক তাঁতীদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেখা।
কিন্তু বর্তমানে এটিই তাঁত শিল্পের জন্য অকার্যকর হয়ে পড়েছে। তাঁত শিল্পের উন্নয়নে তেমন কোনো কাজে আসছে না প্রতিষ্ঠানটি।
জনবলের অভাবেও ধুঁকছে বলে দাবি করছে বাংলাদেশ তাঁতবোর্ড।
বিবিএস সূত্র জানায়, বিবিএস সহায়তায় সর্বপ্রথম জরিপ হয়েছিল ১৯৯০ সালে। এর পরে ২০০৩ সালে জরিপ অনুষ্ঠিত হয়। আবারও ২০১৫ সালে এসে তাঁত শিল্পের জরিপ কাজ পরিচালনার জন্য বিবিএস এর সঙ্গে কথা বলেছে তাঁত বোর্ড। কর্মসূচি প্রকল্পের আওতায় তাঁত শিল্পের জরিপ করবে বিবিএস।
জরিপ প্রসঙ্গে তাঁত বোর্ডে কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ কর্মকর্তা গুলনাহার পারভিনের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, তাঁত শিল্পের নতুন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। ২০০৩ সালে তাঁত শিল্প নিয়ে বিবিএস জরিপ করেছিল। সেই তথ্য এখনও আমরা ধুঁয়ে ধুঁয়ে খাচ্ছি। ’
বর্তমানে চরম আকারে জনবলের সংকট রয়েছে বলে দাবি করছে তাঁত বোর্ড।
বোর্ড সূত্র জানায়, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মোট অনুমোদিত পদ ৩৫৬টি। এর মধ্যে ১১১টি পদই খালি রয়েছে।
জনবল সংকট প্রসঙ্গে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের সহকারী প্রধান মোহাম্মদ সাইফুল আলম সুমন বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় ছয় মাস ধরে ৩৫৬টি পদের মধ্যে ১১১টি পদ খালি আছে। প্রতি বছরই নানা কারণে ২০টি পদ খালি হচ্ছে। ’
বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, দেশে মোট হস্তচালিত তাঁত ইউনিট রয়েছে এক লাখ ৮৩ হাজার ৫১২টি। মোট তাঁতীর সংখ্যা ৮ লাখ ৮৮ হাজার ১১৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৪ লাখ ৭২ হাজার ৩৬৭ জন এবং নারী ৪ লাখ ১৫ হাজার ৭৪৮ জন।
প্রকারভেদে দেশে পিটতাঁত এক লাখ ৬৯ হাজার ৭০০, ফ্রেম তাঁতের সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার, কোমর তাঁতের সংখ্যা এক লাখ ৪১ হাজার ৬৮৪টি, আধা স্বয়ংক্রিয় তাঁতের সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ, জামদানি-বেনারশি তাঁতের সংখ্যা ১২ হাজার ৩৮৪টি ও কটেজ তাঁতের সংখ্যা ২ হাজার।
বাংলাদেশে সব থেকে বেশি তাঁত গড়ে উঠেছে সিরাজগঞ্জ, পাবনা, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, যশোর, কুষ্টিয়া, ঢাকা ও দেশের পাহাড়ী অঞ্চল।
বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড জানায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও বরিশালসহ কিছু এলাকায় তাঁত শিল্প বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
বোর্ডের প্রধান (পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন) আইয়ুব আলী বলেন, বরিশাল ও বাঞ্ছারামপুরের কিছু এলাকায় তাঁত বন্ধের পথে। কারণ তাঁতীরা ঢাকা ছাড়া অন্য কোথায় ভালো মানের সুতা পায় না। তাই বরিশালের একজন তাঁতী যদি ঢাকা থেকে সুতা কিনে তাঁত বুনে তবে তার তেমন কোনো লাভ থাকে না। এছাড়া সহজ সুদে ঋণ না পাওয়ার কারণে অনেকে তাঁত ছাড়ছে। এছাড়া সীমান্তে তাঁত কাজের সুতা ধরা পড়লে সেটা আর তাঁতীর কাছে আসে না। ’
অনেক হস্তচালিত তাঁত ছেড়ে স্বয়ংক্রিয় তাতে ঝুঁকছেন। কারণ একজন তাঁতী হস্তচালিত তাঁতে যদি একটি লুঙ্গি তৈরি করেন। তবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তিনি একই সময়ে পাঁচ থেকে ছয়টি লুঙ্গি তৈরি করতে পারবেন।
বোর্ড সূত্র জানায়, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, টাঙ্গাইল এলাকায় পিটতাঁত, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে বেনারশি জামদানি তৈরি হয়। নরসিংদী, যশোর, কুষ্টিয়ায় অটো তাঁতে ঝুঁকছেন তাঁতী। এছাড়া দেশের পাহাড়ী অঞ্চলে কোমর তাঁত রয়েছে। উপজাতিদের ঘরে ঘরে কোমর তাঁত রয়েছে। এরা নিজের চাহিদা পূরণে কাপড় বুনে থাকেন।
অনেক কর্মকর্তা আবার দাবি করেন তাঁত বিলুপ্ত হচ্ছে না বরং তাঁতের পদ্ধতি পরিবর্তন হচ্ছে।
বোর্ডের মহাব্যবস্থাপক মো. হাফিজ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, তাঁত শিল্প বিলুপ্ত হচ্ছে না বরং অধিক উৎপাদনের জন্য এক তাঁত থেকে অন্য তাঁতে ঝুঁকছেন তাঁতী। ’
বাংলাদেশ সময়: ০৮০৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৫