খুলনা: প্রতিবারের মতো এবারো খুলনা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় বিভিন্ন দেশের নামে স্টল ও প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে এসব ‘বিদেশি’ স্টলের সিংহভাগই দেশি পণ্যের দখলে।
দর্শনার্থীদের অভিযোগ, বাণিজ্য মেলায় বিদেশি স্টলগুলোতে বিদেশি পণ্যের ভেতরে চলছে বাংলাদেশি পণ্য বিক্রি। না চিনে ঠকছেন তারা।
এছাড়া ছেলেদের টি-শার্ট থেকে মেয়েদের থ্রি-পিচ, স্কার্ট, চুলের ক্লিপ-খোপা থেকে রাইস কুকার-কারি কুকার সব পণ্যেরই দাম খুলনার মার্কেটগুলোর চেয়ে বেশি। কোনো কোনো পণ্যের ক্ষেত্রে দাম প্রায় দ্বিগুণ। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্য নির্ধারিত মূল্যে বিক্রয়ে ভোক্তা অধিকার আইনের নিয়মও মানা হচ্ছে না। সব ধরনের খাবারের দাম অনেক বেশি। ফলে মেলায় আসা ক্রেতারা বিভিন্নভাবে প্রতারিত হচ্ছেন।
মেলায় আসা ফাহমিদা খানম নামে এক গৃহিণী বাংলানিউজকে বলেন, ফরেন জোন প্যাভিলিয়ন থেকে গত সপ্তাহে ইরানি ও পাকিস্তানি কিছু বিদেশি পণ্য কিনেছি। যেগুলো বাসায় নেওয়ার পর জানতে পারি দেশি পণ্য।
নাজমা নামে অপর এক গৃহিণী জানান, মেলায় বিদেশি নাম করে যেসব জুয়েলারি বিক্রি করা হচ্ছে সেগুলো দেশি পণ্যের চেয়েও নিম্নমানের। দামও বেশি। তিনি গত বছর এ ধরনের পণ্য কিনে ঠকেছেন। যে কারণে এবার আর সেগুলো কিনছেন না।
এবার কিছু প্লাস্টিক সামগ্রী কেনার জন্য মেলায় এসেছেন বলেও জানান তিনি।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, মেলায় নিম্নমানের দেশি পণ্য সাজিয়ে বিদেশি পণ্য দাবি করে ক্রেতাদের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে। আর দাম নেওয়া হচ্ছে স্থানীয় বাজারের চেয়ে বেশি।
বয়রা মহিলা কলেজের ছাত্রী সুমাইয়া বাংলানিউজকে বলেন, ভ্যারাইটিজ লেদার থেকে ব্যাগ কিনেছিলাম। বাসায় নিয়ে দেখি ব্যাগের ভেতরে কয়েক স্থানে সেলাই নেই।
সরকারি সিটি কলেজের ছাত্র সোহান বাংলানিউজকে বলেন, পারফিউম গ্যালারি থেকে একটি বিদেশি পারফিউম কিনেছিলাম। বাসায় নিয়ে দেখি মেয়াদ উত্তীর্ণ। তাই ফেরত দিতে এসেছি।
তিনি বলেন, না বুঝে অনেকেই এসব পারফিউম কিনছেন।
স্কুল শিক্ষিকা নীপা বৈদ্য বাংলানিউজকে বলেন, বিশেষ ছাড়ে ৯৯৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে থ্রি-পিচ। কিনতে গিয়ে দেখি কাপড় খুবই নিম্নমানের। যার বাজার মূল্য ৮শ’ টাকার বেশি হবে না।
তিনি অভিযোগ করেন, মেলার স্টলগুলো শুধু নিজেদের নির্ধারিত এক দামের মাধ্যমে ক্রেতাদের ঠকাচ্ছে না। খোদ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্যের বিএসটিআই নির্ধারিত দাম থেকেও বেশি নিচ্ছে।
বাণিজ্য মেলায় পণ্য সামগ্রীর বেশি মূল্য নেওয়ার অভিযোগের পাশাপাশি খাবারের মূল্যও বেশি বলে অভিযোগ রয়েছে।
মেলায় ঘুরতে আসা ক্রেতা-দর্শনার্থীরা বাংলানিউজকে জানান, ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে গেলে বা কিছু খেতে মন চাইলে গলাকাটা দাম রাখছে খাবারের স্টলগুলো।
ফাহমিদা খানম বলেন, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খুলনা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় এসেছেন। ঘোরাফেরার ফাঁকে খিদে মেটাতে ঢুকে পড়েন ঢাকা স্টার কাবাব অ্যান্ড চটপটি হাউজ স্টলে। যেখানে খাবারের পর বিল দেখে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।
তিনি জানান, মেলার এ স্টলে একটি ফালুদা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, বাইরে যার সর্বোচ্চ মূল্যে ৪০ টাকা।
কবীর নামে এক বীমা কর্তকর্তা জানান, বাইরে যেখানে এক প্লেট চটপটির দাম ৩০ টাকা রাখা হয়, মেলায় তা ৬০ টাকা।
ঢাকা স্টার কাবাব অ্যান্ড চটপতি হাউজের কর্মচারী স্বপন বাংলানিউজকে বলেন, মেলায় সাধারণত খাবারের দাম একটু বেশি হয়ে থাকে। দাম বেশি নিলেও আমরা ভালো জিনিস দিচ্ছি।
মেলার সার্বিক ব্যবস্থাপনা কমিটির সমন্বয়কারী মো. রাসেল আহমেদ শনিবার (২১ মার্চ) সকাল ১১টা ৩৩ মিনিটে বাংলানিউজকে বলেন, আমি বর্তমানে গ্রামে আছি। এসে বিষয়টি দেখবো।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর খুলনার উপ-পরিচালক (উপসচিব) সৈয়দ রবিউল আলম শনিবার বাংলানিউজকে বলেন, মেলায় অভিযান চালানোর জন্য টিম পাঠানো হবে। ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘন হলে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খুলনা সার্কিট হাউজ মাঠে ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে মাসব্যাপী ১৪তম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা শুরু হয়। খুলনা চেম্বার অব কমার্স এবং মেসার্স চামেলী ট্রেডার্স যৌথভাবে এ মেলা আয়োজন করেছে। মেলায় স্টল রয়েছে ১৬০টি। এছাড়া প্যাভিলিয়ন সংখ্যা ৮টি। মেলার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ১৫ দিন বৃদ্ধি করা হয়েছে। আগামী ৩০ মার্চ পর্যন্ত মেলা চলবে।
মেলায় রয়েছে তৈরি পোশাক, জুতা, প্রসাধনী, জুয়েলারি, ক্রোকারিজ, খাবার এবং প্লাস্টিক সামগ্রীসহ বিভিন্ন ধরনের স্টল। তাঁত, হস্ত ও কুটির শিল্পের রকমারি পণ্যতো রয়েছেই। এছাড়া মেলায় শিশুদের জন্য ট্রেন, থ্রিডি মুভি ও নাগরদোলাসহ ২০টি আইটেম নিয়ে আলাদা গেম জোন রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৪ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৫