ঢাকা: এবার গ্রাহকের চেক জালিয়াতির অভিয়োগ উঠেছে মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স এর বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটির কুমিল্লা অফিসের মাধ্যমে বিমা পলিসিতে গ্রাহকের ম্যাচ্যুরিটির চেক(পলিসির মেয়াদ শেষে পাওয়া টাকা) জালিয়াতি করা হয়েছে।
চেক জালিয়াতির প্রতিকার চেয়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারি মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) কাছে আবেদন আসে। নাজমা আক্তার নামে এক গ্রাহকের পক্ষে আবেদনটি করেন তার স্বামী জহিরুল হক।
গ্রাহকের আবেদনে থেকে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালের ২৮ আগস্ট মেঘনা লাইফ থেকে একটি পলিসি কেনেন নাজমা আক্তার। পলিসিটির নম্বর ০৭০০৪৪৭০-৪। এরপর পলিসির মেয়াদ শেষে গ্রাহক ২০১৩ সালের ২ ফেব্রুয়রি প্রতিষ্ঠানটির কুমিল্লা অফিসে যান। কিন্তু সে সময় গ্রাহককে ম্যাচ্যুরিটির চেক না দিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে গ্রাহক নাজমা আক্তার জানতে পারেন, ইনর্চাজ সৈয়দ তৌফিকুল ইসলাম অন্য নাজমার হিসাব নম্বর ব্যবহার করে পলিসি ম্যাচ্যুরিটি চেকের টাকা তুলে নিয়েছেন। ২০১৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সিএইচসি কুমিল্লার অফিস থেকে এ চেকটি নেওয়া হয়। আবেদনে চেকের নম্বর ৪০৬১১৩৪ উল্লেখ করা হয়েছে।
এরপর গ্রাহক মেঘনা লাইফের কুমিল্লা অফিসে যোগাযোগ করলে এক হাজার টাকা দিয়ে (নাজমা আক্তরের টাকা) জনতা ব্যাংকে একটি হিসাব খুলে দেয়। কিন্তু ওই হিসাব নম্বর গ্রাহকের ম্যাচ্যুরিটি ভাউচারে দেয়নি।
উল্টো বুড়িচং ক্যাশিয়ার নাজমা আক্তারের কাছে উৎকোচ দাবি করে বলেন, এক হাজার টাকা দিলে ম্যাচ্যুরিটির টাকা ক্যাশে (নগদ) দেওয়া হবে। ক্যশিয়ারের কথা মতো নামজা আক্তার তাকেও এক হাজার টাকা দেন। কিন্তু এরপর আর নাজমা আক্তারকে ম্যাচ্যুরিটির টাকা দেওয়া হয়নি।
এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েই গত ৮ ফেব্রুয়ারি মেঘনা লাইফের সিইও’র কাছে ম্যাচ্যুরিটির টাকা চেয়ে আবেদন করেন নাজমা আক্তার। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাকে ম্যাচ্যুরিটির টাকা দেয়নি মেঘনা লাইফ।
বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে মেঘনা লাইফের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, এমন ঘটনা ঘটতেই পারে। সবখানেইতো কিছু না কিছু চুরি-চামারি হয়।
তিনি বলেন, মেঘনা লাইফে ৩০ হাজারের মতো কর্মকর্তা চাকরি করেন। এদের অনেকেই চুরিতে জড়িত। তবে গ্রাহকের চেক জালিয়াতির বিষয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো।
যোগাযোগ করা হলে গ্রাহক নাজমা আক্তারের স্বামী জহিরুল হক বাংলানিউজকে বলেন, আমরা মেঘনা লাইফে প্রধান কর্যালয়ে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছি। অভিযোগের পর মেঘনা লাইফ থেকে বলা হয়েছিলো- ম্যাচ্যুরিটির টাকার চেক দেওয়া হবে। কিন্তু আজ (২৪ মার্চ) পর্যন্ত আমরা কোন টাকা পাইনি।
এদিকে হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল থানার সিলামি, চন্দ্রচড়ি ও হাবিজপুর ব্রাঞ্চের মাধ্যমে শতাধিক গ্রাহকের পলিসির প্রিমিয়াম এর টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ওই ব্রাঞ্চগুলো থেকে ২০১২ সালে শতাধিক গ্রাহক বিমা পলিসি কেনেন। প্রথম দিকে ব্রাঞ্চগুলো থেকে প্রিমিয়ামের টাকা নিয়ে মেঘনা লাইফে রশিদ দেওয়া হয়। কিন্তু ২০১৩ সালের জানুযারিতে বিমা কিস্তির টাকা জমা দেওয়া হলে গ্রাহকদের আল-বারাকা সোসাইটি লিমিটেডের রশিদ দেওয়া হয়।
এসময় গ্রাহকদের জানানো হয়, মেঘনা লাইফের বিমা কিস্তির টাকা আল-বারাকা সোসাইটির মাধ্যমে নেওয়া হবে। বিষয়টির সত্যতা যাচাই করতে মেঘনা লাইফের বেশকিছু গ্রাহক প্রতিষ্ঠানটির জেলা কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু জেলা কর্মকর্তা তাদের কোনো তথ্য দেননি।
আবার কিছু গ্রাহকের নবায়ন প্রিমিয়াম দেওয়ার সময় মেঘনা লাইফের রশিদ দেওয়া হয়। তবে টাকা নবায়ন বাবদ জমা না করে নতুন করে বিমা পলিসি খুলে দেওয়া হয়। এভাবে প্রতিষ্ঠানটির সিলামি, চন্দ্রচড়ি ও হাবিজপুর ব্রাঞ্চের গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়।
তবে পরবর্তীতে এসব গ্রাহকের টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন মেঘনা লাইফের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন।
যোগাযোগ করা হলে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ বলেন, গ্রাহকের স্বার্থ দেখা নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে আমাদের অন্যতম কাজ। কোনো গ্রাহক প্রতারিত হয়ে আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৩ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০১৫