ঢাকা: সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দিন দিন জনপ্রিয়তা লাভ করছে মোবাইল ব্যাংকিং। বেড়েছে এ সেবার নানা মাত্রিক ব্যবহার।
টাকা আদান-প্রদানের পাশাপাশি মোবাইল ওয়ালেটের বিভিন্ন সেবা চালুর ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে আছে ২০১১ সালে যাত্রা শুরু করা ব্র্যাক ব্যাংকের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বিকাশ। বিকাশ ওয়ালেটের মাধ্যমে এখন মোবাইল ফোনের ব্যালেন্স রিচার্জ, কেনাকাটার মূল্য পরিশোধ, জমানো টাকার ওপর সুদ, প্রবাসীদের আয় দেশে পাঠানো, কর্মীদের বেতন দেওয়ার মতো সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে।
একজন বিকাশ ওয়ালেট ব্যবহারকারী এখন ঘরে বসেই গ্রামীনফোন, বাংলালিংক, রবি, এবং এয়ারটেল নম্বরে রিচার্জ করতে পারছেন। সেই সঙ্গে বিকাশ দিয়ে কেনাকাটার মূল্য পরিশোধও জনপ্রিয় হচ্ছে। বড় বড় সুপারশপ যেমন- আগোরা, স্বপ্ন, মীনাবাজারের আওউটলেটগুলতে বিকাশ’র মাধ্যমে মূল পরিশোধ করা যাচ্ছে। এছাড়া আড়ং, ইয়লোসহ বিভিন্ন হোটেল, রেস্টুরেন্টেও বিকাশ’র মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করা যাচ্ছে।
স্কয়ার হসপিটালের চিকিৎসা বিল, তমা ট্যাক্সি ক্যাবের ভাড়া, ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের প্লেনের টিকেট কিনতে পারেন যে কেউ বিকাশ ওয়ালেট ব্যবহার করে। সব মিলিয়ে দেশব্যাপী প্রায় চার হাজারেরও বেশি প্রতিষ্ঠানে বিকাশ ওয়ালেটের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধের সুযোগ রয়েছে।
রাজধানীর পান্থপথের স্কয়ার গ্রুপের ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট স্কয়ার হসপিটাল দেশের অন্যতম বড় বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র। বিকাশ ওয়ালেট ব্যবহারকারীকে এখানে চিকিৎসা নিতে প্রথমে মোবাইলের বিকাশ ওয়ালেট থেকে *২৪৭# ডায়াল করে মেন্যুতে গিয়ে ‘৩’ নির্বাচিত করতে হবে। এরপর ‘পেমেন্ট’ পছন্দ করে অর্থ পরিশোধ করা যাবে।
ঢাকা শহরে বর্তমানে তমার ২০০টির অধিক ট্যাক্সি চলাচল করছে। প্রতিটি ট্যাক্সিতে বিকাশের একটি করে মার্চেন্ট ওয়ালেট নম্বর দেওয়া আছে। যেখানে একজন বিকাশ ব্যবহারকারী তার ব্যক্তিগত ওয়ালেট থেকে ওই নম্বরে পেমেন্ট করতে পারছেন।
এদিকে বিকাশ ওয়ালেট ব্যবহারকারীরা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনাকারী যে কোনো সেলস পয়েন্ট থেকে বিকাশ দিয়ে মূল্য পরিশোধ করে ভ্রমণ টিকেট কিনতে পারছেন। পাশাপাশি তারা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ওয়েবসাইট থেকেও বিকাশ দিয়ে মূল্য পরিশোধ করে ভ্রমণ টিকেট কিনেতে সক্ষম হচ্ছেন।
সময়ের সঙ্গে বিকাশের মাধ্যমে পণ্য ক্রয় বাড়ছে। মানুষের মধ্যে বিকাশ ব্যবহারে পণ্য কেনাকাটায় বেড়েছে নিরাপত্তা। এমনই একজন হাবিব আহমেদ। বাসা রাজধানীর শ্যমলীতে। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি ধানমন্ডির স্বপ্ন থেকে বিকাশ’র মাধ্যমে কিনছিলেন পণ্য। এ নিয়ে কথা হলো তার সঙ্গে।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি মূলত বিকাশ’র মাধ্যমে বেতন পেয়ে থাকি। এর দ্বারা আমি পর্যাপ্ত নিরাপত্তা পাচ্ছি। কোনো ঝুঁকি নেই। আর নিত্য দিনের কেনাকাটাও করা যায় বিকাশ ব্যবহার করে। এতে আমার নগদ অর্থের প্রয়োজন হচ্ছে না। নিজের বিকাশ ওয়ালেট ব্যবহার করেই যে কোনো পণ্য কিনতে পারছি।
এ প্রসঙ্গে বিকাশ’র হেড অব মার্কেটিং আসিফ আহমেদ বলেন, বিকাশ’র মাধ্যমে টাকা আদান-প্রদান ছাড়াও কেনাকাটাসহ অন্যান্য সেবা ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে। বিকাশ দিয়ে কেনাকাটায় বাড়তি কোনো টাকা দিতে হয় না।
বিকাশ ওয়ালেট খোলা সম্পূর্ণ ফ্রি, ও সহজ একটি প্রক্রিয়া। ওয়ালেট খোলার সব প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ার পর গ্রাহক বিকাশ’র সব সার্ভিস ব্যাবহার করতে পারবেন। বর্তমানে গ্রামীনফোন, বাংলালিংক, রবি ও এয়ারটেল গ্রাহকগণ বিকাশ ওয়ালেট খুলতে পারছেন। টেলিটকের গ্রাহকরাও খুব দ্রুত এ সেবার আওতায় লেনদেন করতে পারবেন।
বিকাশ ওয়ালেট খুলতে নিকটবর্তী বিকাশ এজেন্টের কাছে যেতে হবে। সঙ্গে রাখতে হবে গ্রামীনফোন, বাংলালিংক, রবি, অথবা এয়ারটেল সংযোগসহ মোবাইল ফোন। সেই সঙ্গে প্রয়োজন হবে ছবিযুক্ত পরিচয়পত্র ও তার ফটোকপি (যেমন- জাতীয় পরিচয়পত্র/ ড্রাইভিং লাইসেন্স/ পাসপোর্ট)। সঙ্গে লাগছে ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রতিদিন দেশে লেনদেন হচ্ছে প্রায় ৩শ’ ৫০ কোটি টাকা। যা আগামী দিনগুলোতে আরও বৃদ্ধি পাবে বলেই মনে করছেন এই খাত সংশ্লিষ্টরা। তাদের বক্তব্য, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, সহজতর ও স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবহারই এর প্রতি মানুষের আগ্রহের মূল কারণ।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০১৫