ঢাকা: দেশের ছয়শ’র বেশি ব্যক্তিমালিকানাধীন সিকিউরিটি কোম্পানির ভ্যাট ও ট্যাক্স নিবন্ধন সনদপত্র নেই। এতে প্রতিবছর সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সিকিউরিটি সার্ভিস কোম্পানি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসএসসিওএ) মহাসচিব মো. শাহ আলম সরকার এ অভিযোগ করেন।
বুধবার (০১ এপ্রিল) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় সংগঠনের পক্ষ থেকে তিনি এ অভিযোগ করেন।
শাহ আলম সরকার বলেন, দেশে বেসরকারি নিরাপত্তা খাতে সেবাদানকারি সাতশ’র বেশি সিকিউরিটি কোম্পানি রয়েছে। সমাজ বিবর্তনের সঙ্গে এ খাত সম্প্রসারিত হচ্ছে। এর মধ্যে শতাধিক কোম্পানির ভ্যাট ও ট্যাক্স নিবন্ধন সনদপত্র রয়েছে। নিবন্ধন থাকা প্রতিষ্ঠানকে ৩৫ শতাংশ কর্পোরেট কর, ১৫ শতাংশ ভ্যাট, এক দশমিক পাঁচ শতাংশ উৎসে কর ও শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ টার্নওভারসহ মোট ৬০.৫০ শতাংশ কর দিতে হয়।
তিনি বলেন, সিকিউরিটি সার্ভিসে বিশ্বের কোথাও কর দিতে হয় না। অথচ স্বল্প বেতনে কর্মী সরবরাহ করেও প্রায় ৬০.৫০ শতাংশ কর দিতে হচ্ছে। অপরদিকে প্রায় ছয় শতাধিক সিকিউরিটি কোম্পানির ভ্যাট ও ট্যাক্স নিবন্ধন সনদপত্র নেই। এসব কোম্পানি বছরে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দেয়।
শাহ আলম বলেন, আমরা সঠিকভাবে রাজস্ব দিয়েও তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছি না। এসব কোম্পানিকে রাজস্বের আওতায় আনলে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় হবে।
সংগঠনের সহ-সভাপতি ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, হাট-বাজার ও কোম্পানিতে সাত হাজার টাকায় নিরাপত্তাকর্মী সরবরাহ করে ভ্যাট ও ট্যাক্স পরিশোধ করার পর পাঁচ হাজার নয়শ’ টাকা থাকে। এ থেকে নিরাপত্তাকর্মীকে কী দেব, আমি কী নেব? কিন্তু ছয় শতাধিক কোম্পানি ভ্যাট ও ট্যাক্স না দিয়ে তারা পুরো সাত হাজার টাকা পেয়ে একচেটিয়া ব্যবসা করছে।
কোম্পানিকে ভ্যাট ও ট্যাক্স দিয়ে নিরাপত্তাকর্মী দিতে চাইলে তারা নিতে অপারগতা প্রকাশ করে। যারা ভ্যাট, ট্যাক্স দেয় না তারা কম টাকায়ও নিরাপত্তাকর্মী সরবরাহ করে। এসব কোম্পানি জয়েন্ট স্টক কোম্পানি ও সিটি কর্পোরেশন থেকে ভ্যাট ও ট্যাক্স নিবন্ধন সনদপত্র ছাড়া কীভাবে লাইন্সেস নেয়, প্রশ্ন করেন তিনি?
তিনি বলেন, সেবাখাতে নিরাপত্তা দিতে কাজ করছে সিকিউরিটি কোম্পানি। গত কয়েক বছরের গার্মেন্টস খাতের মতো এখানেও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ২০১১-১২ অর্থবছরে সরকার এ খাতে সাড়ে চার শতাংশ ও ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১৫ শতাংশ ভ্যাটসহ মোট ৫২ শতাংশ কর ধার্য করে।
এ খাতে একজন গ্রাহকের সঙ্গে নিরাপত্তাকর্মী সরবরাহে এক থেকে তিনবছরের জন্য চুক্তি করতে হয়। সেক্ষেত্রে এ কর আদায় সম্ভব হয় না। এতে প্রায় গ্রাহকের সঙ্গে বির্তক থেকে যায়। এছাড়া পাঁচ শতাধিক কোম্পানি এসব কর না দেওয়ায় বৈষম্য তৈরি ও ব্যবসা হুমকির সম্মুখীন হয়।
আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ও আইন-শৃঙ্খলার পাশাপাশি এসব সিকিউরিটি কোম্পানি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি) অবদান রাখতে চায়। এতে ২০২১ সাল পর্যন্ত সম্পূর্ণ কর মওকুফ করলে এ খাতে বিশাল কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে মনে করেন তিনি।
এফবিসিসিআই পরিচালক মঞ্জুর আহমেদ বলেন, এতটুকু বেতনে একশ’ টাকায় ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর দিতে হয় না।
নিবন্ধিত সব সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠানকে গড় হিসাবে একটি কর ধার্য করার পক্ষে মত দেন তিনি।
এতো সিকিউরিটি কোম্পানি ভ্যাট ও ট্যাক্স দেয় না, বিষয়টি শোনার পর বিস্ময় প্রকাশ করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান। এ খাত থেকে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া ও যাদের নিবন্ধন সনদপত্র নেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
প্রাক বাজেট আলোচনায় সেবাখাতের (হাসপাতাল, মেডিকেল সার্ভিস ও হোটেল-রেস্তোরাঁ, ভ্রমণ, কাগজ, মুদ্রণ) ৪৪টি সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০১৫