ঢাকা: মুদ্রা ইতিহাসের ধারক। হারিয়ে যাওয়া বহু ইতিহাস ও সভ্যতা আবিষ্কারে সহায়তা করেছে প্রাচীন মুদ্রা।
তাদের সংগ্রহে থাকা মুদ্রা নিয়ে রাজধানীর জিপিও মিলনায়তনে শনিবার (৪ এপ্রিল) থেকে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী ‘বসুন্ধরা সিমেন্ট মুদ্রা প্রদর্শনী ২০১৫’।
বসুন্ধরা সিমেন্টের সহযোগিতায় আয়োজিত এ প্রদর্শনী শনিবার দুপুরে উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
প্রদর্শনীতে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগের মুদ্রা থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক সময়ে প্রচলিত পৃথিবীর নানা দেশের সহস্রাধিক কাগজি ও ধাতব মুদ্রা প্রদর্শিত হচ্ছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, মুদ্রা ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির কথা বলে। প্রতিটি মুদ্রায় জাগ্রত থাকে একেক অঞ্চলের রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাস। মুদ্রার প্রচলন মানবসভ্যতার ইতিহাসে বাঁক বদলকারী ঘটনা।
তিনি বলেন, যারা মুদ্রা সংগ্রহ করেন তারা মন মানসিকতার দিক থেকে উন্নত চিন্তার অধিকারী। শখের বসে মুদ্রা সংগ্রহ করলেও এগুলো ইতিহাসের ধারক-বাহক।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, অনেক সময় ইতিহাস বিকৃত হয় কিন্তু কয়েন বা মুদ্রার কারণে ইতিহাস বিকৃতির সুযোগ কম থাকে কারণ মুদ্রা ইতিহাসকে ধারণ করে। আগের আমলের মুদ্রায় তাই দেখা যায়।
বসুন্ধরা গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (সিমেন্ট) প্রকৌশলী এ কে এম মাহবুব-উজ-জামান বলেন, ইতিহাসকে সামনে নিয়ে আসে মুদ্রা। আমাদের অনেকেই হয়তো জানি না বৃটিশ ভারতে প্রত্যেকটি রাজ্যে আলাদা মুদ্রার প্রচলন ছিলো। হারিয়ে যাওয়া মুদ্রাগুলো এখন ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে।
বিএনসিএসের সভাপতি অমলেন্দ্র সাহার সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ডাক বিভাগের অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রবাস চন্দ্র সাহা, বিএনসিএসের সাধারণ সম্পাদক এম এ কাশেম, প্রত্নতত্ত্ববিদ মো. হোসেন চৌধুরী, সুফি মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।
প্রদর্শনী শেষে কথা হয় বিএনসিএসের সভাপতি অমলেন্দ্র সাহার সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, তৃতীয় বারের মতো এ প্রদর্শনীর আয়োজন চলছে। এবারের প্রদর্শনীতে ২৬ জন মুদ্রা সংগ্রাহকের প্রায় দুই হাজার মুদ্রা প্রদর্শিত হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ব্রিটিশ ভারতীয় ও স্বাধীন ভারতের মুদ্রা, মোগল শাসক, পাকিস্তান, চীন, ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশের প্রাচীন মুদ্রাসহ পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম মুদ্রা।
এ ছাড়া প্রদর্শিত হচ্ছে খ্রিস্টপূর্ব ৪০০-২২৫-এর চায়না মুদ্রা মিং, ৬৪১ থেকে ৬৯৪ খ্রিস্টাব্দের সম্রাট শশাঙ্কের স্বর্ণমুদ্রা, ৬৪৫-৭০৫ খ্রিস্টাব্দের মুসলমান শাসকদের প্রথম দিকের মুদ্রা আবদুল্লাহ আল মালেক বিন মারওয়ানের মুদ্রা, ভারতীয় সম্রাট ইলতুতমিশের বিরল হর্সম্যান টাইপ মুদ্রাসহ প্রাচীন ও আধুনিক মুদ্রা।
প্রদর্শনীর এক মুদ্রা সংগ্রাহক জানান, আদিম সমাজে কড়ি, হাঙ্গরের দাঁত, পাথর ইত্যাদি বিনিময়ের মাধ্যম তথা মুদ্রা বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতো। পরে এগুলোর পরিবর্তে স্বর্ণ, রৌপ্য ইত্যাদি মূল্যবান ধাতব পদার্থ দিয়ে মুদ্রা তৈরি করে তা বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতো। পরবর্তী সময়ে কাগজি নোটের প্রচলন ঘটে।
মুদ্রা ও কাগজি নোট প্রদর্শনীর উদ্বোধনী দিনেই দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা গেছে। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে আজমির হোসেন স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ প্রদর্শনী দেখতে এসেছেন। তার শিশুসন্তানদের বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সময়ের হারিয়ে যাওয়া মুদ্রা ও কাগজি নোটের ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা দিতেই তিনি পরিবারের সদস্যদের প্রদর্শনীতে নিয়ে এসেছেন।
দেশের হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস-ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মকে জানাতে এ ধরনের প্রদর্শনীর আয়োজন সবসময়ই হওয়া উচিত বলে মনে করেন প্রদর্শনীতে আসা এই দর্শনার্থী।
প্রদর্শনী দেখতে আসা দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা প্রদর্শনীটি দারুণ উপভোগ করেছেন এবং দেশ ও দেশের পুরনো মুদ্রা, কাগজি নোট সম্পর্কে ব্যাপক ধারণা পেয়েছেন।
প্রাচীন যুগ, পাল-সেন-গুপ্তযুগ, সুলতানি ও মোগল যুগসহ ইতিহাসে বিভিন্ন পর্যায়ের শাসকের আমলে বাংলা অঞ্চলে প্রচলিত বিভিন্ন মুদ্রা থেকে শুরু করে ব্রিটিশ, পাকিস্তান ও স্বাধীন বাংলাদেশের মুদ্রা ও কাগজি নোট নিয়ে সাজানো হযেছে এই প্রদর্শনী। ইতিহাসের নিরিখে আদি থেকে বর্তমান কালের মুদ্রা ও কাগজি নোটের এই প্রদর্শনী দর্শক সাধারণের দেখা ও জানার পাশাপাশি গবেষকদের জন্যেও ইতিহাসে নতুন নতুন তথ্য ও বিশ্লেষণের উপাদান জোগাবে।
সবার জন্য উন্মুক্ত তিন দিনব্যাপী এ প্রদর্শনী ৬ এপ্রিল পর্য্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্য্যন্ত চলবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০১৫