আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া): ২০ দলীয় জোটের টানা তিন মাসের হরতাল-অবরোধে কোনো প্রভাব পড়েনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরে। গত অর্থ বছরের মতো এ বছরের প্রথম তিন মাসে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্র্য অর্জন করেছে শতভাগ রপ্তানিমুখি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ-স্থলবন্দরটি।
আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতের ত্রিপুরারাজ্যসহ ‘সেভেন সিস্টারস’ নামে পরিচিত ৭টি পাহাড়ি রাজ্যে পাথর, ইট, সিমেন্ট, প্লাস্ট্রিক সামগ্রী, ছোট-বড় মাছসহ প্রায় অর্ধশতাধিক পণ্য রপ্তানি হয। এসব রপ্তানিপণ্যের ৮০ শতাংশই পাথর।
আখাউড়া স্থলবন্দরের কাস্টমস (শুল্ক) ইন্সপেক্টর মো. মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, হরতাল-অবরোধের ধাক্কা না লাগায় এ বন্দরের রপ্তানি কার্যক্রমে কোনো বিরূপ প্রভাব একেবারেই পড়েনি। চাহিদা মতো নির্বিঘ্নে পণ্য রপ্তানি হওয়ায় বিগত তিন মাসে সহজেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে।
কাস্টমস সূত্র জানায়, চলতি ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে এ-বন্দর দিয়ে ভারতে পণ্য রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয় ৩৮ কোটি ৬৭ লাখ ৭১ হাজার ১৭৭ টাকা। অন্যদিকে সরকারী রাজস্বআয় হয় ৭ হাজার ৬ শ ৮০ টাকা, ট্রাভেল ট্যাক্স বাবদ আয় হয় ১৫ লাখ ৫৩ হাজার ৭৫০ টাকা।
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পণ্য রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয় ৩৫ কোটি ৩৬ লাখ ২২ হাজার ২০৩ টাকা, রাজস্ব আয় ৮ হাজার ৫শ ৫০ টাকা, ট্রাভেল ট্যাক্স বাবদ আয় হয় ১৩ লাখ ৬১ হাজার টাকা।
একই বছরের মার্চ মাসে পণ্য রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয় ৩৮ কোটি ৯১ লাখ ৯০ হাজার ১৫০ টাকা, রাজস্ব বাবদ আয় হয় ১০ হাজার ১৩০ টাকা, ট্রাভেল ট্যাক্স বাবদ আয় হয় ১২ লাখ ৮০ হাজার ৭৫০ টাকা।
গত ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে এ বন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছিল ৩৯ কোটি ৩৯ লাখ ৩০ হাজার ৬০০শ টাকা, রাজস্ব আয় ১৮ হাজার ৫ শ ৪৮ টাকা, ট্রাভেল ট্যাক্স বাবদ আয় ৪ লাখ ৭২ হাজার ৬৫০ টাকা।
২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পণ্য রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয় ২৩ কোটি ৩৪ লাখ ৫৩ হাজার ৯৩৭ টাকা, রাজস্ব আয় ৩ হাজার ৬৭০ টাকা, ট্রাভেল ট্যাক্স বাবদ আয় হয় ৫৫ লাখ ৭ হাজার ৫৫০ টাকা।
একই বছরের মার্চ মাসে পণ্য রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয় ২৪ কোটি ২৮ লাখ ৯ হাজার ৬১৫ টাকা, রাজস্ব আয় ৫ লাখ ৮ হাজার ৩৪৫ টাকা।
আখাউড়া স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন বাবুল বাংলানিউজকে বলেন, আখাউড়া স্থলবন্দরটি শত ভাগ রপ্তানিমুখি। এ-বন্দর দিয়ে ভারতের ত্রিপুরাসহ ৭টি পাহাড়ি রাজ্যে পণ্য রপ্তানি হয়। এসব রপ্তানি পণ্যর মধ্যে ৮০ ভাগই পাথর। এই পাথরের বেশির ভাগই আসে সিলেট অঞ্চল থেকে।
চলতি বছরের শুরুতে সারাদেশে ২০ দলীয় জোটের অবরোধ, হরতাল ও নাশকতার কারণে রপ্তানি কিছুটা কম হলেও প্রথম সপ্তাহ যেতেই চিত্র বদলাতে থাকে। রপ্তানিকারক ব্যবসায়ী ও পরিবহন শ্রমিকরা নিজেদের কাজের ব্যাপারে ইতিবাচক থাকায় বন্দরের কার্যক্রমে কোনো বিরূপ প্রভাব পড়েনি।
তবে, হরতাল-অবরোধের কারণে পরিবহন খরচ গড়ে ২৫ ভাগ বেশি গুণতে হয়েছে বন্দরের রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীদের। আগে যেখানে ট্রাকভাড়া ছিল ১৪-১৫ হাজার টাকা, সেখানে হরতাল-অবরোধের কারণে ২৪ থেকে ২৫ হাজার টাকা গুণতে হচ্ছে। তারপরও বন্দরে কার্যক্রম সচল থাকায় ব্যবসায়ীরা খুশি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, ০৬ এপ্রিল, ২০১৫
জেএম
** অবরোধে বাণিজ্য বেহাল বেনাপোলে
** চট্টগ্রাম কাস্টমসে রাজস্ব আদায় বেড়েছে হাজার কোটি টাকা