পঞ্চগড় : বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা টানা তিন মাসের অবরোধ আর উপর্যুপরি হরতালে তেমন প্রভাব পড়েনি বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে।
দেশের সর্ব উত্তরের ভারতসীমান্ত-বেষ্টিত জেলা পঞ্চগড়ের সর্ব উত্তরের উপজেলা তেঁতুলিয়ায় অবস্থিত চর্তুদেশীয় ব্যবসা বাণিজ্যের সম্ভাবনাময় স্থলবন্দর এই বাংলাবান্ধা।
১৯৯৭ সালের ১লা সেপ্টেম্বর নেপালের সাথে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য কার্যক্রম শুরুর মাধ্যমে চালু হয় বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর।
এরপর ২০১১ সালের ২২ জানুয়ারি এ স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের সাথেও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর থেকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি এই বন্দরকে । ধীরে ধীরে প্রসারিত হতে থাকে স্থলবন্দরের কার্যক্রম।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ জানান, চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি থেকে ডাকা ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধ শুরুর প্রথম কয়েকদিন পণ্য পরিবহনে কিছুটা সমস্যা হলেও ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে সেই সমস্যা কেটে যায়। তবে আমদানিকৃত পণ্য বন্দরের ভিতরে খালাসে কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয়নি।
পঞ্চগড় কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট সার্কেলের সহকারী কমিশনার মো. আব্দুল আলিম বাংলানিউজকে জানান, গত বছরের (২০১৪) ১ জানুয়ারি থেকে ১
এপ্রিল পর্যন্ত পণ্য খালাস হয়েছিল ১ লক্ষ ৩৩ হাজার ৪৫ মেট্রিক টন। রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬ কোটি ২৭ লক্ষ ৮৩ হাজার ৭৪২ টাকা।
অপরদিকে এ বছর (২০১৫) ১ জানুয়ারি থেকে ১ এপ্রিল পর্যন্ত ১ লক্ষ ৬৩ হাজার ৩৮৩ মেট্রিক টন পণ্য খালাস করা হয়েছে। রাজস্ব আদায় হয়েছে ৭ কোটি ৭৬ লক্ষ ৯৯ হাজার ৩১৬ টাকা।
গত ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ২৩ কোটি টাকা। চলতি ২০১৪-২০১৫ বছরে ৩৩ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এ পর্যন্ত ৯ মাসেই (১ জুলাই থেকে ১ এপ্রিল) ২৬ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। যা গত অর্থ বছরের ৯ মাসে (১ জুলাই থেকে ১ এপ্রিল) ছিল ১৬ কোটি টাকা।
গত বছরে বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ৭০/৮০ টি পণ্যভর্তি যান যাতায়াত করলেও তা এ বছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮০টি তে।
বর্তমানে এ বন্দর দিয়ে পাথর, চাল, ডাল, গম, ভূট্টা, কয়লা, ফলমূল, প্রসাধন সামগ্রী, চিরতা, কেমিক্যাল দ্রব্য ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল সামগ্রী ভারত ও নেপাল থেকে আমদানি করা হচ্ছে।
অপর দিকে বাংলাদেশ থেকে আলুসহ প্রাণ-পণ্য, ওয়ালটন-পণ্য, আকিজ গ্রুপের পণ্য, গ্লোব ফুড, রহিম আফরোজ ব্যাটারি, এনার্জি ট্রান্সফরমার, সোলার প্যানেল ও বিভিন্ন কোম্পানির মেডিসিন ভারত, নেপাল ও ভূটানে রফতানি করা হচ্ছে।
তবে বন্দরে রাতে মালামাল আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বন্ধ থাকে। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫ টা পর্যন্ত আমদানি রফতানি কার্যক্রম চলে। খালি যানবাহন চলাচল ও দাপ্তরিক কাজের জন্য পরবর্তী একঘন্টা (সাড়ে ৫ টা থেকে সাড়ে ৬ টা) বন্দর খোলা রাখা হয়।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের শ্রমিক নেতা ইউসুফ বাংলানিউজকে জানান, হরতাল-অবরোধ শুরুর দিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পণ্য পরিবহনে ব্যাঘাত ঘটায় আমদানি-রপ্তানি আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায়। সেই সময় বন্দরের শ্রমিকেরা বেকার হয়ে পড়ে। বেশ কিছুদিন কর্মহীন শ্রমিকেরা মানবেতর জীবন-যাপন করলেও এখন পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।
তিনি বলেন, আমরা শ্রমিক। আমরা হরতাল-অবরোধ চাই না, আমরা স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে চাই।
পঞ্চগড় সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রেজাউল করিম রেজা বাংলানিউজকে জানান, হরতাল-অবরোধেও বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিল। তবে প্রথম কয়েকদিন পরিবহন সংকটের কারণে ব্যসায়ীদেরকে বেশি ভাড়া দিয়ে মালামাল আনা-নেওয়া করতে হয়েছে। বন্দরে ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুকুল পরিস্থিতি রয়েছে বলে তিনি জানান।
পঞ্চগড় মোটর মালিক সমিতি ও চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ইকবাল কায়সার মিন্টু বাংলানিউজকে জানান, দেশে চলমান অবরোধ-হরতালে পরিবহন খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাড়ি পোড়ানো আর ভাঙচুরের ভয়ে প্রথম দিকে কিছুটা বাধার মুখে পড়লেও পরের দিকে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের আমদানিকৃত খালাস করা মালামাল যথারীতি বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করতে আর আগের মতো বেগ পেতে হয়নি।
** চট্টগ্রাম বন্দরে বেড়েছে পণ্য খালাস
** ক্ষতি পুষিয়ে হিলি বন্দর স্বাভাবিক
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১৫
জেএম