হিলি(দিনাজপুর): বিএনপি জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোটের ডাকে ৯০ দিন ধরে লাগাতার অবরোধের পাশাপাশি চলেছে হরতাল। শুরুর দিকে হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে এর বিরূপ প্রভাবও পড়েছে বেশ।
স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতিদিন গড়ে বন্দর দিয়ে ১৩০টির মতো পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করলেও হরতাল অবরোধের সময় বন্দর থেকে পণ্য পরিবহনের জন্য গাড়ি পাওয়া যায়নি তেমন। পণ্যবাহী গাড়ির সংখ্যা ১৩০ থেকে তখন নেমে আছে ৭৮-এ। তবে এ অবস্থা ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে সব কিছু স্বাভাবিক হচ্ছে।
জানুয়ারি-মার্চ এই তিন মাসে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি হিলি স্থলবন্দরে। তবে বর্তমানে আমদানি হওয়া বেশির ভাগ পণ্যই শুল্কমুক্ত বা কম শুল্কযুক্ত।
বন্দর পরিচালনাকারী পানামা হিলি পোর্ট লিংক লিমিটেড সূত্রে জানা যায়, গত জানুয়ারি মাসে ভারত থেকে ৩ হাজার ২শত ৫০ টি ট্রাকে ৭৩ হাজার ৮শ ৭৪ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়। সে হিসেবে গড়ে প্রতিদিন ভারত থেকে ১শ ৩০টি পণ্যবাহী ট্রাক পণ্য নিয়ে বন্দরে প্রবেশ করেছে। আর বন্দর থেকে ডেলিভারি হয়েছে ৭৩ হাজার ৮শ ১২ মেট্রিকটন।
অপরদিকে জানুয়ারিতে বাংলাদেশ থেকে ১৬০ টি ট্রাকে ২হাজার ৪শ ৯০ মেট্রিক টন পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়েছে।
ফেব্রুয়ারি মাসে ভারত থেকে ২ হাজার ২শ ৩৭ টি ট্রাকে ৫৩ হাজার ৩শ ৫৩ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে। সে মোতাবেক গড়ে প্রতিদিন ভারত থেকে ৮৯টি পণ্যবাহী ট্রাক পণ্য নিয়ে বন্দরে প্রবেশ করেছে। আর বন্দর থেকে ডেলিভারি হয়েছে ৫২ হাজার ৪শ ১৭ মেট্রিক টন।
অপরদিকে বাংলাদেশ থেকে ১শ ৪১ টি ট্রাকে ৯ হাজার ৫শ ২ মেট্রিক টন পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়েছে।
মার্চ মাসে ভারত থেকে ২হাজার ৯শ ১৪ টি ট্রাকে ৬৬ হাজার ৯৪ মেট্রিকটন পণ্য আমদানি হয়েছে। সে মোতাবেক গড়ে প্রতিদিন ভারত থেকে ১শ ১৬ টি পণ্যবাহী ট্রাক পণ্য নিয়ে বন্দরে প্রবেশ করেছে। আর বন্দর থেকে ডেলিভারি হয়েছে ৬৮ হাজার১শ ৩১ মেট্রিক টন। অপরদিকে বাংলাদেশ থেকে ২শ ৮২ টি ট্রাকে ৩হাজার ৯শ ৩৬ মেট্রিক টন পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়েছে।
বিএনপি-জামায়াত জোটের ডাকা লাগাতার অবরোধ ও হরতালের মাঝে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ভারত থেকে ১ হাজার ৯শ ৭১ টি ট্রাকে ৫২ হাজার ৭শ ৭৩ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে। সে মোতাবেক গড়ে প্রতিদিন ভারত থেকে ৭৮ টি পণ্যবাহী ট্রাক পণ্য নিয়ে বন্দরে প্রবেশ করেছে। আর বন্দর থেকে ডেলিভারি হয়েছে ৫৮ হাজার ৮শ ৮৪ মেট্রিকটন। অপরদিকে বাংলাদেশ থেকে ১টি ট্রাকে ৫ মেট্রিক টন পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়েছে।
ফেব্রুয়ারি মাসে ভারত থেকে ২হাজার ৩শ ৫১ টি ট্রাকে ৬৫ হাজার ৯শ ৮৩ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে। সে মোতাবেক গড়ে প্রতিদিন ভারত থেকে ৯৪টি পণ্যবাহী ট্রাক পণ্য নিয়ে বন্দরে প্রবেশ করেছে। আর সে সময়ে বন্দর থেকে ডেলিভারি হয়েছে ৫৭ হাজার ৫শ ৩৫ মেট্রিক টন পন্য। অপরদিকে বাংলাদেশ থেকে ৮টি ট্রাকে ৫৮ মেট্রিক টন পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়েছে।
মার্চ মাসে ভারত থেকে ২হাজার ৫শ ১১ টি ট্রাকে ৭১ হাজার ২২ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে। সে মোতাবেক গড়ে প্রতিদিন ভারত থেকে ১শটি পণ্যবাহী ট্রাক পণ্য নিয়ে প্রবেশ করেছে। আর বন্দর থেকে ডেলিভারি হয়েছে ৭২ হাজার ৪শ ৭০ মেট্রিক টন। আর বাংলাদেশ থেকে ১টি ট্রাকে ১.৫ মেট্রিক টন পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়েছে।
বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান পানামা হিলি পোর্ট লিংক লিমিটেডের সহকারী ব্যাবস্থাপক (প্রশাসন,অপারেশন্স) এস,এম হায়দার বাংলানিউজকে জানান, বন্দরের ভেতর থেকে স্বাভাবিক দিনে ২শ থেকে আড়াই শর মতো ট্রাক পণ্য ডেলিভারি দেওয়া হলেও এখন তা নেমে এসেছে ১শ ২০ থেকে দেড়শ ট্রাকে। স্বাভাবিক দিনে বন্দরের ভেতরে ৫০ থেকে ৭০টি ভারতীয় ট্রাক পণ্য খালাসের অপেক্ষায় আটকা পড়ে থাকলেও এ মুহূর্তে ১শ ১০ থেকে ১৫০টি পণ্যবাহী ভারতীয় ট্রাক আটকা থাকছে। হরতাল অবরোধের ফলে বন্দরের সকল কার্যক্রমের সূচকই নিন্মমুখী। এর ফলে একদিকে যেমন সরকারের রাজস্ব আহরণ ব্যাহত হচ্ছে তেমনি বন্দর কর্তপক্ষও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
লাগাতার অবরোধ-হরতালের শুরুর দিকে হিলি স্থলবন্দর থেকে পুলিশ-বিজিবির নিরাপত্তায় দেশের বিভিন্ন স্থানে পণ্যপরিবহন চালু থাকলেও হিলি থেকে সকল আঞ্চলিক রুট এবং রাজধানী ঢাকার সাথে যাত্রিবাহী বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। পরে ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে হিলি-টু-ঢাকা যাত্রীবাহী বাস চলাচল শুরু করে। এর কিছুদিন পরে হিলি-দিনাজপুর, হিলি-বগুড়া, হিলি-জয়পুরহাট রুটে বাস চলাচল শুরু করে। বর্তমানে হিলি থেকে সকল রুটে সকল ধরনের যানবাহন চলাচল চালু রয়েছে।
হিলিস্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের আহ্বায়ক হারুন উর রশীদ হারুন জানান, হরতাল অবরোধের মাঝেও হিলি বন্দর দিয়ে ভারতের সাথে পণ্য আমদানি-রপ্তানি চালু থেকেছে। প্রথম দিকে চাহিদা মোতাবেক ট্রাক না পাওয়ায় এবং ট্রাকভাড়া অতিরিক্ত হওয়ায় বন্দর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পণ্য পরিবহন কমে যায়। পরে ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় ট্রাকভাড়া কমেছে অনেক। চাহিদা মোতাবেক ট্রাক পাওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে পণ্য পৌঁছে যাচ্ছে।
বন্দরের রাজস্ব আহরণেরর লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, হিলিস্থলবন্দরে শুল্কযুক্ত যেসকল পণ্য রয়েছে সেসব পণ্য প্রশাসনিক জটিলতা এবং কাস্টমসের এক এক বন্দরের ক্ষেত্রে একেক রকম নিয়মনীতির কারণে আমদানিকারকরা হিলি স্থলবন্দর দিয়ে অধিকতর শুল্ক আরোপিত পণ্য যেমন ফল, ফ্যাব্রিকসসহ অধিক শুল্কযুক্ত বিভিন্ন পণ্য আমদানি বন্ধ রেখেছেন। এর ফলে বন্দরের রাজস্ব আহরণ কম হচ্ছে। তবে সকল বন্দর একই নিয়ম নীতির মাধ্যমে পরিচালনা করা হলে বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানির পাশাপাশি বন্দরের কার্যকেম গতি আসবে। বাড়বে রাজস্ব আহরণও।
হিলি শুল্কস্টেশন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের জানুয়ারিতে হিলিস্থলবন্দরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এর বিপরীতে মাস শেষে আহরণ হয়েছে ১৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা। ফেব্রুয়ারি মাসে ২১ কোটি ৩০ লাখ টাকার বিপরীতে মাস শেষে আহরণ হয়েছে ৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা। মার্চ মাসে ২ কোটি ১৮ লাখ টাকার বিপরীতে মাস শেষে আহরণ হয়েছে ১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে হিলি স্থলবন্দরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ কোটি ১৫ লাখ ১৪ হাজার টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আহরণ করা হয়েছে ১ কোটি ৯৯ লাখ ৯২ হাজার টাকা। ফেব্রুয়ারি মাসে ১১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে মাস শেষে আহরণ করা হয় ১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। আর মার্চ মাসে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৩ কোটি ৬৮ লাখ ৯১ হাজার। মাস শেষে আহরণ হয়েছে কোটি টাকার মতো।
হিলি স্থলবন্দর শুল্কস্টেশনের সহকারী কমিশনার (এসি) মহিববুর রহমান ভুঞা বাংলানিউজকে জানান, লাগাতার অবরোধ ও হরতালের মধ্যেও বন্দরের সকল কার্যক্রম স্বাভাবিক। তবে বন্দর দিয়ে বর্তমানে আমদানি হওয়া বেশিরভাগ পণ্যই শুল্কমুক্ত ও কম শুল্কযুক্ত হওয়ায় রাজস্ব আহরণ কিছুটা কম হচ্ছে।
** অবরোধ-হরতালের প্রভাব পড়েনি বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে
** চট্টগ্রাম বন্দরে বেড়েছে পণ্য খালাস
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১৫
জেএম