ঢাকা, শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

প্রবৃদ্ধি হবে ৫.৬ শতাংশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৫
প্রবৃদ্ধি হবে ৫.৬ শতাংশ ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: বিশ্বব্যাংক বলছে, রাজনৈতিক অস্থিরতায় বাংলাদেশে উৎপাদনে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতির কারণে চলতি অর্থ বছর শেষে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ৫.৬ শতাংশ।

রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা না হলে প্রবৃদ্ধি ৬.৪ শতাংশ থেকে ৬.৬ শতাংশ হতো।
 
রোববার(১২ এপ্রিল‘২০১৫) বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ে দুপুরে ‘দ্য বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ শিরোনামে বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়।
 
প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন।
 
প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় ড. জাহিদ বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক বিপত্তির মধ্য দিয়ে গেছে। এ বিপত্তির মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা অন্যতম। তারপরও সামষ্টিক ও ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে সমন্বয়ের মাধ্যমে অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে।
 
চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে অর্থনীতির অনেকগুলো খুবই ইতিবাচক ছিলো। সূচকগুলো যে ভাবে উন্নতি করছিলো তাতে আমরা ধারণা করেছিলাম প্রবৃদ্ধি ৬.২ শতাংশ তো হবেই, তারও বেশি হতে পারে।
 
কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা উন্নতির সে ধারায় বাধা সৃষ্টি করছে। আর এ অস্থিরতা দেখা দেয় অর্থনীতির সোনালী সময়। অস্থিরতায় উৎপাদন ক্ষেত্রে ২.২ বিলিয়ন ডলার বা ১৭ হাজার ১৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। যা চলতি অর্থবছরের জিডিপির ১ শতাংশের সমান।  
 
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী অর্থবছরে (২০১৫-১৬ অর্থবছর) প্রবৃদ্ধি ৬.৩ শতাংশ এবং ২০০১৬-১৭ অর্থবছরে ৬.৭ শতাংশ হতে পারে।
 
তবে এর জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। পাশাপাশি গতানুগতিক উন্নয়ন যেমন অবকাঠামো খাতে সংস্কার, অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ’র (পিপিপি) উন্নয়ন করতে হবে।
 
বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের ফাঁদে আটকে গেছে। এ ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসতে জিডিপির ৫ শতাংশ বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বর্তমানে জিডিপির ২৮.৭ শতাংশ বিনিয়োগ আছে। এটিকে বাড়িয়ে ৩৩ থেকে ৩৪ শতাংশ করতে হবে।
 
একই সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়তে হবে। বর্তমানে ৩৩.৭ শতাংশ নারী শ্রমশক্তিতে নিয়োজিত আছে। যদি এটি ৪৮ শতাংশে নিয়ে যাওয়া যায় তবে প্রতিবছর প্রবৃদ্ধি বাড়বে দশমিক ৭ শতাংশ। আর ৭৫ শতাংশে নিতে পারলে ১.৬ শতাংশ এবং ৮২ শতাংশ হলে ১.৮ শতাংশ হারে প্রতিবছর ডিজিপির প্রবৃদ্ধি বাড়বে।
 
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। তবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাই একমাত্র সমাধান নয়। তাই টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, মুদ্রা বিনিময় হার আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় রাখা, আর্থিক খাতের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন, বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
 
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। ২০১৪ সালের মার্চে যেখানে মূল্যস্ফীতি ছিলো ৭.৫ শতাংশ, তা ২০১৫ সালের মার্চে কমে দাঁড়িয়েছে ৬.৭ শতাংশ। সম্প্রতি খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কিছুটা অস্থিতিশীল হলেও তা সহনীয় পর্যায়ে আছে।

চলতি অর্থবছরে সরকার ব্যাংক থেকে কোন ঋণ নেয়নি। বরং ২৫ মার্চ পর্যন্ত ১০ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা সরকার ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর যোহানেস জাট বলেন, বাংলাদেশের সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এর জন্য সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো, বিদ্যুতের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা, পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
 
তিনি বলেন, বাংলাদেশ মিলেনিয়াম ডেভলপমেন্ট গোল(এমডিজি) লক্ষ্য পূরণে ভাল করেছে। বাংলাদেশে প্রতিবছর অবকাঠামোসহ বিভিন্ন সংস্কার কাছে প্রচুর বিনিয়োগ প্রয়োজন। নতুন ব্রিকস ব্যাংক এবং এআইবি ব্যাংকে যোগ দেওয়ায় এ বিনিয়োগে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি দারিদ্র বিমোচনে ভূমিকা রাখবে।
 
এক প্রশ্নের উত্তরে জাট বলেন, ‘বাজেট সাপোর্ট পেতে হলে সরকারকে বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক অঞ্চলের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার করতে হবে। সেই শর্তেই সহায়তা দেওয়া হয়ে থাকে। ’
 
সাংবাদিকদরা জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ঘাটতি অর্থায়নের কোনো সমস্যা হয়নি। রিজার্ভে হাত দিতে হয়নি। এ থেকে বোঝা যায়, বহির্বাণিজ্যে কিছুটা স্বস্তি আছে।
 
তবে রফতানির ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। পোশাক খাতে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা ও ইউরো’র দাম কমায় এ চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। টাকার মান ইউরোর তুলনায় ১৭.৬ শতাংশ বেড়ে গেছে। এতে যারা ইউরোতে রফতানি করছেন তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন জাহিদ হোসেন।
 
আর এক প্রশ্নের উত্তরে জাহিদ হোসেন বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যদেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় বাংলাদেশের সুদের হার অস্বাভাবিক বেশি না। দেশে সুদের হার কমেছে। তবে ব্যাংকে যে পরিমাণে তারল্য রয়েছে সে হারে কমেনি। খেলাপি ঋণ বেশি হওয়ার কারণেই সুদের হার আশানুরূপ কমেনি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৫/আপডেটেড- ১৬০৯ ঘণ্টা
এএসএস/এনএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।