ঢাকা: নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও খুব অল্প সময়ে মানুষের আস্থা অর্জন করেছে সুপারশপ ব্যবসা।
সুপারশপ ব্যবসা অর্থনৈতিক অগ্রগতিতেও অবদান রেখে চলেছে।
এ ব্যবসার প্রসার, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর আর সুপারশপে দ্বিমুখী নয়, প্রতিষ্ঠানের ‘আয়তন কেন্দ্রিক বর্গফুট’ অনুসারে ভ্যাট বসানোর দাবি জানিয়েছে এ খাত সংশ্লিষ্টরা।
সম্প্রতি প্রাক বাজেট আলোচনায় তারা এনবিআরের কাছে বিষয়টি তুলেও ধরেছে।
বাংলাদেশ সুপারমার্কেট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসওএ) সূত্র জানায়, বাংলাদেশে সুপারশপ ব্যবসা শুরু হয় ২০০১ সালে। বর্তমানে দেশে ১২১টি সুপারশপ রয়েছে।
স্বাস্থ্যসম্মত, টাটকা কৃষিপণ্য সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ক্রয় করে বিপণন করে থাকে। অল্প সময়ে গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য বিপণনে মানুষের আস্থা অর্জন করেছে।
একই সাথে প্রতিবছর ক্রেতা থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকা ভ্যাট আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়। এরপরও বিক্রয়ের ওপর ২ শতাংশ অতিরিক্ত ভ্যাট দিতে হয়।
অপরদিকে, বাংলাদেশ দোকান মালিক সূত্র জানায়, বাংলাদেশে প্রায় ২৬ লাখ ডিপার্টমেন্টাল স্টোর (ছোট-বড় দোকান) রয়েছে। ঢাকায় রয়েছে প্রায় ৩ লাখ।
এসব দোকানে বিক্রয়ে সরাসরি ভ্যাট আদায়ের ব্যবস্থা নেই। প্যাকেজ ভ্যাট (বছরে দোকান প্রতি ৩-১২ হাজার টাকা) থাকলেও তা আদায় হয় নামমাত্র।
সুপারশপ আর ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে সরকার প্রতিবছর হাজার কোটি টাকা ভ্যাট আদায়ের কথা থাকলেও আদায় হচ্ছে মাত্র ৪৪ কোটি টাকা।
বিএসওএ সূত্র জানায়, ভ্যাট বিভাগের নির্ধারিত সুপারশপে বছরে পৌনে দু’লাখ টাকার বিক্রয়ের ওপর ‘ট্রেড ভ্যাট’ (ভ্যাট, আয়কর, উৎসে কর) দিতে হয় প্রায় পৌনে ৯ লাখ টাকা।
এরমধ্যে বিক্রয়ের ওপর বিক্রয়ের ওপর ভ্যাট প্রায় আড়াই লাখ টাকা, প্রতিষ্ঠান ভাড়ার ওপর ভ্যাট প্রায় সাড়ে ৬০ হাজার টাকা, আয়কর প্রায় ৮৫ হাজার।
সরবরাহকারি হতে উৎসে আয়কর প্রায় ৬১ হাজার, সরবরাহকারি হতে উৎসে ভ্যাট সাড়ে ৩ লাখ, কর্মকর্তা-কর্মচারি হতে উৎসে আয়কর সাড়ে ১৫ হাজার টাকা।
ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে বছরে একই পরিমাণ বিক্রয় টার্গেট নির্ধারিত থাকলে প্যাকেজ ভ্যাট ছাড়া আয়কর, উৎসে কর দিতে হয় না।
সুপারশপের ন্যায় একই পণ্য ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে কিনলেও ভ্যাট দিতে হয় না। অনেক ক্ষেত্রে বিক্রয় রশিদে ভ্যাট নেই বলে উল্লেখ করা হয়।
অনেক ডিপার্টমেন্টাল স্টোর বছরে সুপারশপের চেয়ে বছরে বেশি পণ্য বিক্রি করলেও ‘প্যাকেজ ভ্যাটের’ কারণে নামমাত্র ভ্যাট পরিশোধ করে পার পেয়ে যায়।
সূত্র আরও জানায়, দেশে প্রায় ২৬ লাখ ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে ১ লাখ কোটি টাকা ব্যবসা থেকে বছরে ভ্যাট আদায় হচ্ছে মাত্র ২৫ কোটি টাকা।
আর সুপারশপ ব্যবসায় ১ হাজার কোটি টাকা থেকে ভ্যাট আদায় হচ্ছে ১৯ কোটি টাকা। হুবহু একই ব্যবসায় দু’ধরনের ভ্যাট আদায় বৈষম্যমূলক।
সুপারশপ-ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে ‘আয়তন কেন্দ্রিক বর্গফুট’ ভ্যাট নির্ধারণ করলে বৈষম্য দূর, সুপারশপ ব্যবসার প্রসার ও ভ্যাট ফাঁকি রোধ হবে।
বিএসওএ গবেষণায় দেখা যায়, সিটি কর্পোরেশন থেকে সারাদেশে ৬টি আয়তন কেন্দ্রিক বর্গফুট ক্যাটাগরিতে ভ্যাট নির্ধারণ করলে ভ্যাট আদায় অনেক বেড়ে যাবে।
এরমধ্যে ১ হাজার বর্গফুট, ১ থেকে ১ হাজার ৯৯৯, ২ থেকে ৩ হাজার ৯৯৯, ৪ থেকে ৭ হাজার ৯৯৯, ৮ থেকে ১১ হাজার ৯৯৯ ও ১২ হাজারের বেশি বর্গফুট।
ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন বর্গফুট অনুসারে ১২, ২৫, ৩৫, ৫০, ৭৫ হাজার টাকা। অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৯, ২০, ২৫, ৩৫ ও ৫০ হাজার টাকা।
জেলা শহর ও পৌরসভায় ৬, ১৫, ২০, ৩০, ৪০ হাজার টাকা। অন্যান্য এলাকায় ৩, ১০, ১৫, ২৫ ও ৩০ হাজার টাকা ভ্যাট নির্ধারণ করলে বৈষম্য কমবে।
১২ হাজার বর্গফুট বা তার চেয়ে বেশি আয়তনের সুপারশপ-ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের ক্ষেত্রে বিক্রয়ের ওপর ১ শতাংশ হারে ভ্যাট নির্ধারণ করা যেতে পারে।
বিএসওএ সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, একই রকম ব্যবসায় দু’ধরনের ভ্যাট আদায়ের ফলে মানুষ সুপারশপ বিমুখ হচ্ছে।
দেশে দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া সুপারশপ ব্যবসার পথে বাধা দ্বৈত ভ্যাট। প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক আয়তন কেন্দ্রিক বর্গফুট ভ্যাট চালু হলে বছরে হাজার কোটি টাকার ভ্যাট আদায় হবে।
তিনি বলেন, দেশে নিরাপদ খাদ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে সুপারশপ ভূমিকা রাখছে। দ্বৈত নীতির ফলে সুপারশপের সংখ্যা বাড়ছে না বরং কমছে।
আয়তন ভিত্তিক বর্গফুট কেন্দ্রিক নয়, প্যাকেজ ভ্যাট বহাল রাখার পক্ষে মত দেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি এস এ কাদের কিরন।
তিনি বলেন, সুপারশপে কোটি টাকার ব্যবসা। বর্গফুট পদ্ধতিতে ভ্যাট আদায় করা হলেও কোন ক্ষতি না হলে ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ব্যবসার ক্ষেত্রে ক্ষতি হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেন, সুপারশপে পণ্যের মানে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। আয়তন ভিত্তিক বর্গফুট ভ্যাট আদায় বিষয়টি ভেবে দেখা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৫
আরইউ/এনএস/