ঢাকা, শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পোশাক খাতে ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৫
পোশাক খাতে ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা ছবি: কাশেম হারুন / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) বলছে, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর বিভিন্ন পক্ষের নেওয়া পদক্ষেপের কারণে শ্রমিকদের মানবিক সহায়তা থেকে শুরু করে কারখানা সংস্কার পর্যন্ত তৈরি পোশাক খাতে ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে।
 
তবে এর সবকিছু মধ্যবর্তী অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে।

আগামীতে এ ধারাবাহিকতা ধরে রেখে বাংলাদেশ ‘রানা প্লাজার’ দুঃসহ স্মৃতি থেকে বেরিয়ে নতুন রূপে আবির্ভূত হতে পারবে।
 
মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল’২০১৫) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে সিপিডি আয়োজিত ‘রানা প্লাজা ট্রাজেডিকে অতিক্রম করে একটি সমাপ্তি ও একটি পুনর্গঠন কৌশলের সন্ধানে’ শীর্ষক সংলাপে এসব কথা বলা হয়।
 
সংলাপে সিপিডির মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
 
নিখোঁজ শ্রমিকদের সমস্যা, দুর্গতদের সহায়তার প্রকৃতি ও পরিমাণ, পোশাক খাতের সংস্কার, এ্যাকর্ড, অ্যালায়েন্স এবং এনটিপি’র কারখানা সংস্কার উদ্যোগ, উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও প্রতিষ্ঠানের সহায়তা, বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের রফতানি পরিস্থিতি এবং রানা প্লাজার প্রভাব’র উপর ভিত্তিতে করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
 
নিখোঁজ শ্রমিক: এখনো ১৫৯ জন শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছে। যে কারণে তাদের পরিবার তেমন কোন সহায়তা পাচ্ছেন না। নিখোঁজদের পরিবারের দেওয়া তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাইয়ের কাজে তেমন অগ্রগতি হয়নি। এদের পরিচয় সুনিশ্চিত করতে শ্রম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি তালিকা প্রকাশ করা দরকার।
 
আর্থিক সহায়তা: দীর্ঘ মেয়াদী আর্থিক সহায়তার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বছরে এসে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। রানা প্লাজা ট্রাস্ট ফান্ড থেকে এ পর্যন্ত ৭০ শতাংশ দাবি পূরণ হয়েছে। ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে অর্থ প্রাপ্তির ধীর গতির জন্য অর্থ দিতে কালক্ষেপণ হয়েছে। এখনও যে ৩০ শতাংশ সহায়তা দেওয়া বাকী রয়েছে তা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে উচ্চ আদালত নির্দেশনা দিতে পারে।
 
আহত শ্রমিকদের চিকিৎসা: বিভিন্ন সংগঠনের সহায়তায় আহত শ্রমিকরা চিকিৎসা পাচ্ছেন। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে চিকিৎসার জন্য অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। ঢাকা, সাভার ও আশপাশের এলাকায় বসবাসকারীরা চিকিৎসা সুবিধা বেশি পাচ্ছেন। আহত শ্রমিকরা যে সীমিত অর্থ সুবিধা পেয়েছে তা দিয়ে চিকিৎসা চালিয়ে নেওয়া কষ্টকর।
 
ঢাকার বাইরের আহতদের তালিকা তৈরি করে সরকার তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারে। বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠাগুলোতে বাড়তি অর্থ সহায়তা দিয়ে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় খরচ বিনামূল্যে করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
 
কর্মসংস্থান: স্বল্প সংখ্যাক আহত শ্রমিক গার্মেন্টসে যোগ দিয়েছেন। এক হাজার ২’শর উপরে আহত শ্রমিক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছে। তবে সবক্ষেত্রে সমান সুযোগ না থাকা এবং চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ ব্যহত হওয়ায় উদ্যোগগুলো ঝড়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যবসা পরিস্থিতি পুনর্মূল্যায়ণ করা প্রয়োজন। প্রয়োজনে স্বল্প সুদে চলতি মূলধন সরবরাহ করা যেতে পারে।
 
জিএসপি সুবিধা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরের দেওয়া ১৬টি কার্যক্রমের কমপক্ষে ১৩টি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে গত দুই বছরে। এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিধিধির দপ্তরের জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনাধীন হওয়া প্রয়োজন।
 
ইউরোপীয় ইউনিয়নের কমপ্যাক্ট বাস্তবায়ন: এর অধীনে যথেষ্ট অগ্রগতি হলেও অনেক কার্যক্রমে এখনও পিছি রয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন করা দরকার।
 
ত্রিপক্ষীয় কমিটির অধীনে পরিদর্শন কার্যক্রম: বিভিন্ন কারণে পরিদর্শন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এক্ষেত্রে কারখানার পরিদর্শন দ্রুত করার জন্য সঠিক তালিকা প্রস্তুত করে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ’র কমিটিকে দেওয়া প্রয়োজন। সদস্য বহির্ভূত ৮০০’র উপরে কারখানা রয়েছে। এদের চিহ্নিত করার কাজটি শ্রম অধিদপ্তরের শুরু করা দরকার। তারপর এদের অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যভূক্ত করে পরিদর্শন এবং সংস্কার চালানো দরকার।

পর্যবেক্ষণ ও বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান শক্তিশালীকরণ: বর্তমানে পরিচালিত কার্যক্রম ভবিষ্যতে অব্যাহত রাখার জন্য জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করা প্রয়োজন। বিদেশি বিশেষজ্ঞদের কাজ থেকে জ্ঞান ও দক্ষতা দেশীয় বিশেষজ্ঞ ও পরিদর্শকদের কাছে পৌঁছে দেবার ক্ষেত্রে সরকার, আইএলও এবং অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স যৌথভাবে কাজ করতে পারে।
 
ভবিষ্যৎ গবেষণার প্রয়োজনীয়তা: তৈরি পোশাকখাতে পরিবর্তিত পরিস্থিতির মুখোমুখি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসছে। নতুন আমদানিকারক দেশ যুক্ত হচ্ছে। সংস্কারের পর কারখানাগুলো নতুন বাস্তবতার সম্মুখীন হচ্ছে। এসব বিষয়ে বিস্তারিত গবেষণা প্রয়োজন। আগামীতে এক্ষেত্রে গবেষণার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ নেওয়া দরকার।
 
শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তাফিজুর রহমান। এতে অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মিকাইল শিপার, সিপিডি’র সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য, বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সালাম মুর্শেদী, সম্মিলিত গার্মেন্টস ও দর্জি শ্রমিক লীগের সভাপতি রায় রমেশ চন্দ্র, বিজিএমএ’র সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম, বিলস এর সহকারী নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ।  

বাংলাদেশ সময়: ২১০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৫
আইএইচ/এএসএস/এনএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।