ঢাকা: মায়ানমার, চীন, থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে সড়ক পথে যুক্ত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সীমান্ত ঘুমধুম থেকে মায়ানমার সীমান্তের টাংব্রো ভূমিতে দুই কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করবে বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে রাজধানীর আগারগাঁও এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা অনুষ্ঠিত হয়।
একনেক সভা সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সীমান্ত ঘুমধুম থেকে মায়ানমার সীমান্তের টাংব্রো ভূমিতে দুই কিলোমিটার সড়ক দুইলেনে নির্মাণের জন্য একনেকে প্রস্তাব করা হয়। এর পরে প্রধানমন্ত্রী এই সড়ককে চারলেনে নির্মাণের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ও মায়ানমার সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে বাংলাদেশের অর্থায়নে ৪৫ মিটারের একটি ব্রিজও তৈরি করা হবে। এই ব্রিজও চার লেনে নির্মাণের নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।
একনেক সভা জানায়, দু’দেশের সীমান্তে দুই কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের ফলে মায়ানমার, চীন, থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সড়ক পথে সরাসরি যোগাযোগ করা যাবে। এর ফলে বাণিজ্যিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজতৈকি সম্পর্ক শক্তিশালী হবে। সেই লক্ষ্যেই বাংলাদেশ-মায়ানমার মৈত্রী সড়ক নির্মাণ করবে সরকার। সড়কটি এ অঞ্চলের মধ্যে ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নতি সাধনের পাশাপাশি রাজনৈতিক সুসম্পর্ক জোরদার করবে।
‘বাংলাদেশ-মায়ানমার মৈত্রী সড়ক’ প্রকল্পের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে নানা দিক দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ)।
প্রকল্পটির প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। একনেক সভা প্রকল্পের ব্যয় ৮১ কোটি টাকা নির্ধারণ করে। জুলাই ২০১৫ থেকে জুন ২০১৭ সাল মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে।
একনেক সভায়, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের জন্য ভূমি রক্ষা বাবদ চূড়ান্ত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৯২ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এই অর্থ দিয়ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ভূমি প্রস্তুত করাসহ নদী ভাঙন থেকে প্রকল্প এলাকা রক্ষা করা হবে। এছাড়া অস্থায়ী অনাবাসিক ভবন নির্মাণের জন্য পূর্তকাজ করার পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষার এক লাখের অধিক গাছ লাগানো হবে।
‘রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প’ এলাকার দ্বিতীয় ব্লকের ভূমি উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় টাকা বরাদ্দ দেয়া হবে। প্রকল্পটি মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়।
প্রকল্পের আওতায় ১ কোটি ২৭ লাখ ১৩ হাজার ঘন মিটার ভূমি উন্নয়ন করা হবে। এছাড়া, ১৪ হাজার মিটার সীমানা প্রাচীরসহ যানবাহন ভাড়া নেওয়া হবে। বিআইডব্লিউটিএ ঘাসিয়াখালি চ্যানেল ড্রেজিং থেকে বালি পরিবহন করে প্রকল্প এলাকা ভরাট করবে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৬২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।
‘দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় সমন্বিত পানি সম্পদ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প’ও একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৮২ কোটি ১০ লাখ টাকা। জুলাই ২০১৫ থেকে জুন ২০২২ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড।
‘দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্প’ একনেক সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ঢাকা মহানগরীর উত্তর-পূর্ব অংশ অর্থাৎ গুলশান, বনানী, বরিধারা, বসুন্ধরা, মহাখালী, ডিওএইচএস, তেজগাঁও, মগবাজার, ইস্কাটন, ধানমন্ডি, কলাবাগান, বাড্ডা ও হাতিরঝিল এলাকায় উন্নতমানের পয়ঃশোধনাগার নির্মাণ করা হবে।
এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৩শ ১৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এটি বাস্তবায়ন করবে ঢাকা ওয়াসা।
‘বেগুনবাড়ি খালসহ হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন’ প্রকল্প সংশোধিত আকারে একনেকে পাশ হয়। হাতিরঝিলের জলে দেখা যাবে ওয়াটার ট্যাক্সি । সার্কুলার বাস ও থিয়েটারও যুক্ত হবে হাতিরঝিল প্রকল্পে। হাতিরঝিলে বিনোদনপ্রেমীরা যাতে করে আরও বেশি বিনোদন পায় সেই লক্ষ্যে স্বচ্ছ পানিতে চলবে ওয়াটার ট্যাক্সি ।
এর চারপাশে বিনোদনপ্রেমীদের যাতায়াত সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সার্কুলার এসি ও নন এসি বাস চালু করা হবে। একইভাবে ধানমন্ডি লেকের রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চের আদলে থিয়েটার নির্মাণ করা হবে। এখানে একসঙ্গে প্রায় আড়াই হাজার দর্শনার্থী নানা ধরণের বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারবেন।
একনেক সভা সূত্র জানায়, হাতিরঝিল প্রকল্পের সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ দ্রুত গতিতে বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১৫
এমআইএস/এমজেএফ
** রামপালসহ সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার ৫ প্রকল্প অনুমোদন