ঢাকা: ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে বেড়েছে চোরাই পথে মসলা আমদানি। এতে রাজস্ব ক্ষতির পাশাপাশি আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঈদ সামনে রেখে চাহিদার চেয়ে বেশি মসলা আমদানি হলেও তার বেশিরভাগই চোরাই পথে দেশে ঢুকছে বলে দাবি করেছেন আমদানিকারকরা। আর এতে সরকার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে বলে দাবি করেন তারা।
মসলা আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদুল আজহা উপলক্ষে সবচেয়ে বেশি মসলা আমদানি হয়। ঈদের ২ থেকে ৩ মাস আগে থেকেই মসলা আমদানি শুরু হয়। মসলা ভেদে ৬১ থেকে ৯৩ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করেন আমদানিকারকরা। এতে প্রতিবছর সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পায়।
বেশিরভাগ মসলা প্রতিবেশী দেশ ভারতে উৎপন্ন হয়। ফলে স্থলবন্দর ও সীমান্ত দিয়ে অবৈধ ভাবে মসলা আমদানি করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। চোরাই পথে আসা নিম্নমানের এসব মসলার সঙ্গে প্রতিযোগিতার বাজারে টিকতে পারছে না আমদানি করা মানসম্মত মসলা। এতে বছরে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতি (বিডব্লিউএসএমএ) সূত্র জানায়, ঈদ সামনে রেখে গত দু’মাসে আমদানি হয়েছে বিপুল পরিমাণ মসলা। এর আগে মসলার দাম কিছুটা বেশি থাকলেও পর্যাপ্ত আমদানি ও রফতানিকারক দেশগুলোতে বুকিং রেট কমে যাওয়ায় বর্তমান বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। আমদানি ও সরবরাহ থাকায় ঈদের বাজারে মসলার দাম আরো কমবে।
সূত্র আরো জানায়, আবহাওয়ার কারণে জিরা, এলাচ, লবঙ্গ, গোল মরিচ, দারুচিনি, জয়ফল, জয়ত্রী, কিসমিস ও পেস্তার উৎপাদন বাংলাদেশে হয় না। যার ফলে সিরিয়া থেকে জিরা, পাকিস্তান ও মায়ানমার থেকে পেস্তা, সিঙ্গাপুর থেকে এলাচ ও লবঙ্গ, চীন ও ভিয়েতনাম থেকে দারুচিনি এবং চীন-ভারত-নেপাল-ইন্দোনেশিয়া থেকে গোল মরিচ ও কিসমিস আমদানি করা হয়।
দেশে প্রতিবছর আড়াই হাজার মেট্রিক টন জিরা, সাড়ে চার হাজার মেট্রিক টন দারুচিনি, তিন হাজার মেট্রিক টন এলাচ ও ৩৬০ মেট্রিক টন লবঙ্গের চাহিদা রয়েছে বলে সূত্র জানায়।
তবে চাহিদার ৭৫ শতাংশ মসলাই চোরাই পথে একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আসে বলে জানা গেছে। প্রতিবছর চোরাই পথে আড়াই হাজার মেট্রিক টন এলাচ, সাড়ে ছয় হাজার মেট্রিক টন জিরা ও বিপুল পরিমাণ গোল মরিচ, লবঙ্গ এবং অন্যান্য মসলা আসছে।
ছাগলনাইয়া সীমান্ত দিয়ে আসা মসলা ফেনী ও চৌদ্দগ্রামে, পাঁচবিবি সীমান্ত দিয়ে আসা মসলা কুমিল্লা ও ঢাকার পাইকারি বাজারে চলে যায়।
এছাড়াও বগুড়া ও খুলনা সীমান্ত দিয়ে আসা মসলা পাবনা-সৈয়দপুর-রংপুর-রাজশাহী-ঢাকা এবং টেকনা ও ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে আসা মসলা দেশের বিভিন্ন বাজারে চলে যাচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
চোরাই পথে আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্ক কমানোর দাবি জানিয়ে আমদানিকারকরা জানান, মসলার আমদানি শুল্ক ৬১ থেকে ৯৩ শতাংশ। অথচ, পাশ্ববর্তী দেশে এ হার ২০ থেকে ২৬ শতাংশ। শুল্ক কমালে রাজস্ব বাড়বে, কমবে অবৈধ আমদানি।
বিডব্লিউএসএমএ সভাপতি মো. এনায়েত উল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, শুল্ক বেশি বলে অবৈধ পথে মসলা আসছে। এতে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্র জানায়, ঈদ সামনে রেখে গত তিন মাস আগে থেকে মসলা আমদানি শুরু হয়েছে। জুলাই ও আগস্ট এ দুই মাসে তিন হাজার ৭৮০ মেট্রিক টন মসলা আমদানি হয়েছে; যার বেশিরভাগই জিরা ও এলাচ। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অবৈধ ভাবে মসলা আমদানিতে তৎপর। ইতিমধ্যে তাদের বেশ কয়েকটি চালান আটক করা হয়েছে।
এনবিআর’র কাস্টমস বিভাগ সূত্র জানায়, চোরাই পথে মসলা আমদানির ব্যাপারে কঠোর হতে সব স্থলবন্দরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৫
আরইউ/এসইউ