ঢাকা: রাজধানীর একটি বিপণি বিতানে পোশাকের দোকানে থ্রি পিসের দামাদামি করছেন মহিলা ক্রেতা আর বিক্রেতা। দোকানে প্রতিটি পোশাকের উপর কাগজে ‘একদর’ লিখে রাখা হয়েছে।
বিক্রেতার কাছ থেকে পোশাকের দাম শুনে ক্রেতার উত্তর, ‘আমি ভাই এক হাজারের বেশি দিতে পারবো না। ’ এক পর্যায়ে ১ হাজার টাকা দিয়েই পোশাকটি বিক্রি করেন বিক্রেতা।
নিউমার্কেট, গাউছিয়া, ধানমন্ডি হকার্স, কোহিনুর মার্কেট ও চাঁদনী চক মার্কেটের বিপণি বিতানগুলোতে এমন চিত্র নিত্যদিনের। ওই অঞ্চলে বেশিরভাগ পোশাকের দোকানে লেখা থাকে ‘একদর’। অথচ পোশাক কিনতে গেলে দামাদামি করেই পোশাক বিক্রি করেন বিক্রেতারা। এতে না বুঝে প্রতারিত হচ্ছেন অনেক ক্রেতা।
সোমবার বিকেলে নিউমার্কেট, গাউছিয়া, ধানমন্ডি হকার্স, কোহিনুর মার্কেট, চাঁদনীচকের বিভিন্ন বিপণিবিতানগুলোতে সরেজমিনে ক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, একদর লিখে রাখলেও অনেক বিক্রেতাই ছাড় দিয়ে পোশাক বিক্রি করে। মানুষ বুঝে একেক জনের কাছ থেকে একেক রকম দাম নিয়ে থাকে বিক্রেতারা।
এ সম্পর্কে জানেতে চাইলে গাউছিয়া মার্কেটের বিক্রেতা আবদুল কাশেম বলেন, এক দাম লিখে রাখলে ক্রেতাদের সাথে বেশি কথা বলতে হয় না। অনেক ক্রেতা দামাদামি না করেই পোশাক কিনে নিয়ে যায়। কিছু কাস্টমার আছে যারা দামাদামি করে। তাদেরকে হয়তো কিছু ছাড় দিয়ে পোশাক বিক্রি করতে হয়।
সেখানকার এক ক্রেতা সাফিনা রহমান বলেন, ‘একদর লেখা থাকলেও দামাদামি করেই পোশাক কিনতে হয়। বিক্রেতারা লোক বুঝে দাম চায়। একেক জনের কাছ থেকে এক এক রকম দাম নেয়।
তিনি বলেন, বিষয়টি অনেকে বোঝেন অনেকে বোঝেন না। যারা বোঝেন না তাদের কাছ থেকে এরা বড় ধরনের লাভ করে থাকে। এটা এক ধরনের প্রতারনা। কারণ একই পোশাকের দাম একজনের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে এক রকম দামে, অন্যজনের কাছ থেকে আবার তার থেকে বেশি দাম নেওয়া হচ্ছে। আসলে এক দামের নামে এরা একধরনের প্রতারণা করছে।
চাঁদনী চকের বর্ণালী ফ্যাশনের বিক্রেতা মো. ফারুক বলেন, এখন ক্রেতা কম তাই দামাদামি করে কিছুটা ছাড় দিয়ে বিক্রি করছি। ক্রেতা বাড়লে এক দামে বিক্রি করি। তাছাড়া সবার সাথে তো দামাদামি করি না। এক দরের ক্রেতারা আলাদাই থাকে।
ক্রেতা শিল্পী সুলতানা বলেন, ‘বেশি নিলেও করার কিছু থাকে না। পছন্দের জিনিস বেশি দাম হলেও তো কিনতেই হয়। তাছাড়া একদর না লেখা দোকানে গেলে কোন পোশাক পছন্দ হলে বিক্রেতারা সে পোশাকের দাম তিনগুণ চায়। সেক্ষেত্রে ঠকার সম্ভাবনা আরো বেশি থাকে।
কোহিনুর মার্কেটের আবরণী শাড়ি হাউসের এক বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, একদাম লিখে রাখা হয় যাতে করে কাস্টমারদের সাথে বেশি দামাদামি না করতে হয়। একদাম লেখা না থাকলে হয়তো আমরা বলি ২ হাজার টাকা ক্রেতারা দাম করে ১ হাজার টাকা। একদাম লিখে যদি কোন কাপড়ের দাম ৩ হাজার টাকা লেখা থাকে তাহলে ক্রেতারা দাম বলে ২ হাজার ৫শ‘ টাকা। এতে করে পোশাক বিক্রি করতে সহজ হয়।
এটা কি তাহলে কাপড় বিক্রির কৌশল এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কৌশল বলতে পারেন। বেচা-বিক্রি নাই। কি করবো। দোকানের অনেক ভাড়া। বিক্রি তো করতে হবে।
আসলেও ‘একদাম’ এর কোন পোশাক কি আপনাদের এখানে আছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আছে। একদরের পোশাকও আছে। সেই পোশাকগুলোর চাহিদা খুব কম। তবে সে পোশাকগুলো একদরেই আমরা বিক্রি করি। ‘
বাংলাদেশ সময়: ০৩৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৫
জেডএফ/আরআই