ঢাকা: গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষায় আর্থিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর তিন জীবন বিমা কোম্পানিতে অডিটের ব্যবস্থা নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। কোম্পানি তিনটি হলো গোল্ডেন, হোমল্যান্ড ও বায়রা লাইফ।
বায়রা লাইফে অডিটের জন্য চার্টার্ড অ্যাকাউন্টস কোম্পানি এমজে আবেদিন অ্যান্ড কোম্পানি, গোল্ডেন লাইফে হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোম্পানি এবং হোমল্যান্ড লাইফে মেসার্স অ্যাকনাবিন অ্যান্ড কোম্পানিকে নিয়োগ করা হয়।
এই তিন অডিট ফার্মকে ২০১২ সালের ২৯ মার্চের মধ্যে অডিট সম্পন্ন করে আইডিআরএর কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।
এরপর প্রায় ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়নি আইডিআরএ। শুধু গোল্ডেন লাইফে কিছু দিনের জন্য আইডিআরএ’র এক সদস্যকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু কোম্পানিটির কোন সভায় ওই সদস্যকে ডাকা হতো না। ফলে প্রশাসক নিয়োগ ছিলো শুধু নামেই, বাস্তবে তার কোন কার্যকারিতা ছিলো না।
বর্তমানে এই কোম্পানি তিনটির মধ্যে হোমল্যান্ড বাদে বাকি দুইটি কোম্পানি চরম দুরবস্থার মধ্যে রয়েছে। গোল্ডেন ও বায়রা লাইফ থেকে গ্রাহকের পাওনা ফিরে পাওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অডিটর নিয়োগ দেওয়ার পর থেকেই প্রতিষ্ঠান তিনটি ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের নামে অস্বাভাবিক অর্থ ব্যয় করেছে।
এরমধ্যে বায়রা লাইফ ২০১১ সালে ব্যবস্থাপনা ব্যয় বাবদ আইন লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত ব্যয় করে ৫ কাটি ৭৩ লাখ টাকা। ২০১২ সলে এই অবৈধ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। ২০১৩ সালে অবৈধ ব্যয় হয় ৬ কোটি টাকা এবং সর্বশেষ ২০১৪ সালে অবৈধ ব্যয় হয়েছে ৪ কোটি ১০ লাখ টাকা। অর্থাৎ অডিট শুরুর পরও থামানো যায়নি প্রতিষ্ঠানটির আইন লঙ্ঘন।
একই অবস্থা গোল্ডেন লাইফেও। প্রতিষ্ঠানটি ২০১১ সালে আইন লঙ্ঘন করে ব্যবস্থাপনা ব্যয় বাবদ অবৈধভাবে ব্যয় করে ২৩ কোটি ৭১ লাখ টাকা। ২০১২ এ অবৈধ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ২০১৩ সালে অবৈধ ব্যয় হয় ১৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। আর শেষ বছর ২০১৪ সালে অবৈধ ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
অপর কোম্পানি হোমল্যান্ড লাইফ ২০১১ সালে ব্যবস্থাপনা ব্যয় বাবদ অতিরিক্ত খরচ করে ১০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। ২০১২ সালে তা কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকায়। ২০১৩ সালে অতিরিক্ত ব্যয় হয় ৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা এবং ২০১৪ সালে অতিরিক্ত ব্যয় হয় ৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে এ কোম্পানিটিও থেমে নেই।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বায়রা লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে চলতি দায়িত্বে থাকা শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমি ব্যস্ত আছি। এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করবো না।
আর গোল্ডেন লাইফ ও হোমল্যান্ড লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
সূত্র জানায়, অডিটর নিয়োগ বিষয়ে কোম্পানিকে দেওয়া আইডিআরএ চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, বিমা কোম্পানি তিনটির মূল্যায়ন রিপোর্ট আইডিআরএ’র কাছে রয়েছে। এতে দেখা গেছে, ১২ থেকে ১৫ বছর ধরে ব্যবসা করলেও কোম্পানি তিনটি লাভজনক (সারপ্লাস) হতে পারেনি।
যে কারণে বিমা গ্রাহকদের স্বার্থ যথাযথভাবে নিরাপদ নয়। এ জন্য বিমা গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষার্থে কোম্পানি তিনটির আর্থিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে অডিটর নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইডিআরএ।
সূত্রমতে, ২০০৬ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরের আয়, ব্যয়, সম্পদ ইত্যাদি অডিট করে, ওই অডিট প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কোম্পানি তিনটির ভবিষ্যৎ কার্যক্রম বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ছিলো আইডিআরএ’র।
এ জন্য অডিট ফার্মগুলোকে কোম্পানি তিনটির বিনিয়োগ, ঋণ ও অগ্রিম, পণ্যমূল্য নির্ধারণ ও ভ্যালুয়েশন, স্থায়ী সম্পদ ও অন্যান্য সম্পদ, গাড়ি, জমি, বিল্ডিং, নগদ টাকা, ট্যাক্স ও ভ্যাট, চেয়ারম্যান ও পরিচালকরা কী পরিমাণ সম্মানী ও অন্যান্য সুবিধা নিয়েছেন সেসব তথ্যসহ সার্বিক আর্থিক অবস্থা খতিয়ে দেখতে বলা হয়।
তবে কয়েক দফা ঘুরিয়ে অডিট ফার্মগুলো বায়রা ও হোমল্যান্ড লাইফের প্রতিবেদন জমা দিলেও, তার ভিত্তিতে কোন ব্যবস্থা নেয়নি আইডিআরএ। আর গোল্ডেন লাইফের প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি অডিট ফার্ম।
এমনকি অডিট প্রতিবেদন কোথায় আছে এবং অডিট প্রক্রিয়ার বিষয়ে কোন তথ্য জানে না আইডিআরএ’র বর্তমান দায়িত্বশীলরা!
আইডিআরএ চেয়ারম্যন দেশের বাইরে থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। আর সদস্য কুদ্দুস খানের সঙ্গে একাধিক দিন যোগাযোগ করা হলেও নানা ব্যস্ততা দেখিয়ে তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন।
আর এক সদস্য সুলতান উল আবেদীন মোল্লার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বায়রা, হোমল্যান্ড ও গোল্ডেন লাইফে অডিট নিয়োগ দেওয়া হয়েছিলো আমরা যোগদানের আগে। এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১০১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৫
এএসএস/জেডএম