ঢাকা: চলতি অর্থবছরে (২০১৫-১৬) আয়কর বিবরণীর সঙ্গে বেশিরভাগ করদাতা বাড়ি ভাড়ার আয় সংক্রান্ত ব্যাংক লেনদেনের তথ্য জমা দিচ্ছেন না।
বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) আয়কর মেলার দ্বিতীয় দিনে বিভিন্ন কর অঞ্চলের কর কর্মকর্তা ও আয়কর বিবরণী জমা দিতে আসা করদাতাদের সঙ্গে আলাপে এ তথ্য জানা যায়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চলতি অর্থবছর আয়কর বিবরণীর সঙ্গে বাড়ি ভাড়ার আয় সংক্রান্ত ব্যাংক লেনদেনের তথ্য জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেয়। নির্দেশনা অনুযায়ী, জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত প্রতি মাসে ২৫ হাজার টাকার বেশি বাড়ি ভাড়া পেলে তা ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করতে হবে।
১২ মাসের ভাড়ার লেনদেন দিতে হবে। আইন না মানলে বাড়ি ভাড়া বাবদ আয়ের ৫০ শতাংশ বা ন্যূনতম ৫ হাজার টাকা হারে জরিমানা করা হবে বলেও নির্দেশনা দেওয়া হয়।
মেলায় কর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি করবর্ষে যারা আয়কর বিবরণীর সাথে ব্যাংক লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য দিচ্ছেন না তারা শাস্তির আওতায় আসবেন। সারাদেশের সব বাড়ি মালিকের তথ্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে রয়েছে। কর বিবরণী যাচাইয়ের সময় তা বেরিয়ে আসবে বলেও জানান তারা।
কর্মকর্তারা আরও জানান, অনেক বাড়ি মালিক বিষয়টি জানেন না। অনেকে জেনেও দিচ্ছেন না। তবে উভয়েই কঠোর শাস্তির আওতায় আসবেন।
মিরপুর থেকে আগত ঝুট ব্যবসায়ী ইসমাইল বাংলানিউজকে জানান, মিরপুর এলাকায় আমার ৫ তলা বাড়ি রয়েছে। আমি তো ম্যানুয়ালি ভাড়া আদায় করি। ভাড়া ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন ও এর তথ্য কর বিবরণীর সাথে দাখিল করতে হবে এটা মেলায় এসে জেনেছি। কর বিভাগ থেকে আগে জানানো হয়নি।
বিষয়টি আরও প্রচার করা প্রয়োজন ছিল। মেলায় এসে অনেকেই জেনেছে। এখন যদি বিবরণী যাচাই করে শাস্তি দেওয়া হয় তাহলে জুলুম করা হবে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
মেলায় কর অঞ্চল-৪ এ কর বিবরণী জমা দেওয়া একজন করদাতা জানান, বিবরণী দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জমা নিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সারাবছর না হলেও অন্তত মেলার এক মাস আগ থেকে এ বিষয়ে প্রচারণা চালানো উচিত ছিল বলে মনে করেন তিনি।
কর অঞ্চল-৮ এ পরিবারের চার ভাইয়ের কর বিবরণী জমা দিতে আসা আবদুর রাজ্জাক জানান, শাহজাহানপুরে তাদের চার ভাইয়ের যৌথ বাড়ি রয়েছে। গত কয়েকবছর ধরে বাড়িভাড়ার কোনো তথ্য বিবরণীতে দেওয়া হয়নি। বাড়ি ভাড়া ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করতে হবে তা মাত্র তিনদিন আগে জানতে পেরেছেন বলে জানান আবদুর রাজ্জাক।
মেলায় কর অঞ্চল-২ এর সহকারী কর কমিশনার সিরাজ উদ্দিন বলেন, গতকাল যেসব কর বিবরণী জমা হয়েছে তার একটাতেও ব্যাংক লেনদেন জমার কাগজপত্র দেয়নি। বেশিরভাগ করদাতাই জানে না। এনবিআর’র নির্দেশনা, বিবরণীতে কী রয়েছে তা দেখার প্রয়োজন নেই, শুধু জমা নিতে হবে। আমরা নির্দেশনা পালন করছি।
কর অঞ্চল-৪ এর সহকারী কর কমিশনার মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, দু’ একজন চোখে পড়েছে। অনেককে আমরা মুখে বলার পর বলেছে, জানেন না। কর বিবরণী যাচাই হলে বেরিয়ে আসবে কারা বাড়ি ভাড়ার ব্যাংক লেনদেনের তথ্য জমা দেয়নি। তারা শাস্তির আওতায় আসবে।
কর অঞ্চল-৬ এর একজন কর্মকর্তা জানান, বেশিরভাগ স্বনির্ধারণী কর বিবরণী জমা হচ্ছে। গত বছরের চেয়ে এবার সাড়াও ভালো। তবে বাড়িভাড়ার কোনো তথ্য পাইনি।
মেলার অন্যান্য কর অঞ্চল ঘুরে জানা যায়, কর বিবরণীর সাথে বেশিরভাগ করদাতাই বাড়ি ভাড়ার ব্যাংক লেনদেনের তথ্য জমা দিচ্ছেন না।
অভিযোগ রয়েছে, বাড়ির মালিকদের বেশিরভাগ করফাঁকি দিতে কর বিবরণীতে বাড়ি ভাড়ার তথ্য দেন না। তবে চলতি বছর থেকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে এনবিআর।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৫
আরইউ/এমজেএফ/
** কর বিবরণীতে নেই বাড়ি ভাড়ার তথ্য
** বেড়েছে স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে রিটার্ন দাখিল