ঢাকা: ‘দেশের প্রতি কর্তব্য পালন, সর্বদা অপরকে সহযোগিতা’ রোভার স্কাউটের প্রতিজ্ঞার এ প্রতিপাদ্য নিয়ে আয়কর মেলায় সেবা দিচ্ছেন এর সদস্যরা।
আয়কর রিটার্ন, চালান, ই-টিআইএন ফরম পূরণ, কর অঞ্চলের সন্ধানসহ সব ধরনের সেবায় সহযোগিতা করছেন তারা।
২০১০ সাল থেকে রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতি বছর মেলার শুরুতে থেকে শেষ পর্যন্ত সেবা দিচ্ছেন চৌকস রোভাররা।
বৃষ্টি উপেক্ষা করে রাজধানীর মধুবাগ থেকে এসেছেন ষাটোর্ধ্ব শফিকুল ইসলাম। গত বছর মেলায় ই-টিআইএন করেও সনদ পাননি তিনি। রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) ই-টিআইএন ঠিক আছে কি-না যাচাইয়ে মেলার ১নং তাবুর সামনে এসে তিনি ছিলেন দিশেহারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোভার আদম আলী এগিয়ে এসে তাকে নিয়ে গেলেন সিনিয়র সিটিজেন বুথে।
শফিকুল ইসলামকে সিনিয়র সিটিজেন বুথে বসিয়ে রেখে নিজেই ই-টিআইএন বুথে গিয়ে মুর্হুতে সনদপত্র নিয়ে এলেন, সহযোগিতা করলেন রিটার্ন পূরণে।
শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, দায়িত্ববোধ থেকে কর দিতে এসেছি। কিন্তু ই-টিআইএন ঠিক আছে কি-না যাচাই না করে কিভাবে কর দেব?
আদম আলীর সেবা সম্পর্কে শফিকুল ইসলাম বলেন, এতো আন্তরিকতার সঙ্গে সেবা পাবো বিশ্বাস হচ্ছে না। তবে গত বছর মেলায়ও তারা সহযোগিতা করেছেন।
মেলার ২নং তাবুতে ৯৮নং হেল্পডেস্ক বুথের সামনে দাঁড়িয়ে করদাতারা যে ধরনের সেবা চাচ্ছেন সে ডেস্কের একটি করে টিকিট ধরিয়ে দিচ্ছেন রোভার অরুণদ্যুতি। তিনি আয়কর রিটার্ন ফরম পূরণ করতে আসা স্কুল শিক্ষিকা মারুফা কামালকে ধরিয়ে দিলেন ৩নং তাবুর একটি হেল্পডেস্কের টিকিট। মুহুর্তে পেলেন সেবা।
মারুফা কামাল বাংলানিউজকে জানান, মেলায় প্রথমবার ই-টিআইএন নিবন্ধন করলাম। রিটার্ন দাখিল করে কর দেবো। সব কিছুতে রোভাররা সহযোগিতা করেছেন।
অরুণদ্যুতি বলেন, বিসিআইসি কলেজ থেকে দ্বিতীয়বারের মতো মেলায় এসেছি। রিটার্ন পূরণ, কর অঞ্চল, ই-টিআইএন, ব্যাংক বুথসহ বিভিন্ন সেবার জন্য আসছেন করদাতারা।
তিনি বলেন, হেল্পডেস্ক অনুসারে একটি করে টিকিট ধরিয়ে দেয়। কোনো করদাতা না চিনলে নিয়েও যাই। করদাতাদের সেবা করতে পেরে নিজের কাছেও ভালো লাগে।
মেলার গেট থেকে বুথ, কর সচিবালয় সব জায়গায় স্বেচ্ছাশ্রমের অংশ ও দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে এ মহতি সেবা দিয়ে যাচ্ছেন রোভার সদস্যরা।
প্রতিবছরের মতো এবারও জাতীয় আয়কর মেলা অফিসার্স ক্লাবের মাঠে ৩টি তাবু, মূল ভবনের নিচতলা, খেলাঘর ভবনের নিচতলায় মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
মেলা কমিটির সদস্য সচিব ও অতিরিক্ত কর কমিশনার এম এম ফজলুল হক আরিফের নেতৃত্বে রোভার দলের সমন্বয় করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোভার দল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৫ জন সাধারণ রোভার, কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ জন এয়ার রোভার এবং নৌ-বাহিনী সদর দফতর নিয়ন্ত্রিত ৩০ জন নৌ-রোভার, ইডেন মহিলা কলেজের ৫ জন রোভার এবং সেবাব্রতী মুক্ত স্কাউট গ্রুপের ৫ জন কাজ করছেন এবারের মেলায়। সব মিলিয়ে ১২৫ জন রোভার সেবা দিচ্ছেন। প্রতি ৫ জন একজন লিডারের নেতৃত্বে কাজ করছেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউটসের সাবেক সিনিয়র রোভারমেট (এসিআরএম) নূর মোহাম্মদ বাংলানিউজকে জানান, ২০১০ সাল থেকে মেলায় রোভার সদস্যরা স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে যাচ্ছেন।
নূর মোহাম্মদ জানান, প্রতি বছর চাহিদা অনুসারে এ সেবা দেওয়া হয়। রোভার স্কাউটের প্রশিক্ষণ, সেবা ও কাজ শেখার অংশ হিসেবে এসেছেন মেলায় রোভার সদস্যরা।
মেলায় সেবায় অংশ নেওয়া রোভারদের সনদপত্র দেওয়া হয় যা একজন রোভার সদস্যের জন্য প্রয়োজন। মেলায় আগত করদাতাদের সেবা দিতে গিয়ে এসব রোভার সদস্যরা কাজের প্রতি অভিজ্ঞ হয়ে যান।
তিনি জানান, রোভাররা প্রতিটি বুথের সামনে আয়কর রিটার্ন পূরণ, জমা, ই-টিআইএন ফরম পূরণ, ভুল সংশোধন, টাকা জমা, মেলায় অভ্যর্থনা ও অনুসন্ধান সব ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেন।
প্রতি বুথের সামনে একজন রোভার সদস্য সহযোগিতা করছেন। রোভারের বাছাইকৃত ৮ জনের একটি বিশেষ দল মেলা সচিবালয় কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ফাইল নিয়ন্ত্রণ, তাৎক্ষণিক সমস্যা সমাধানে কাজ করছেন।
হেল্পডেস্ক, অধিক্ষেত্র, ই-টিআইএন, আয়কর রিটার্ন দাখিল চারটি ভাগে ৪ জন কো-অর্ডিনেটর ওয়াকিটকির মাধ্যমে মেলা সচিবালয়ে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করছেন।
এছাড়া কো-অর্ডিনেটর দায়িত্বে থাকা রোভার সদস্যরা মেলার গেট থেকে সকল বুথ, সচিবালয় সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে থাকছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৫
আরইউ/এএসআর