খুলনা : সরষে ইলিশ, ইলিশ পাতুরি, ইলিশ ভাজা-হরেক পদের রান্না, হরেক রকম স্বাদ। ইলিশের সুঘ্রাণ ভোজনরসিককে পাগল করে দিতে যথেষ্ট।
অভিযোগ রয়েছে বেশি লাভের আশায় সীমান্ত দিয়ে ইলিশ মাছ ভারতে পাচার করছে এক শ্রেণীর পাচারকারী। আর ইলিশের বদলে আসছে গরু!
খুলনা মৎস্য বাজার সমিতির সহ-সভাপতি আবুল বাশার সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে ইলিশ উঠাতে পারছি না। সপ্তাহে দু’একদিন ইলিশ উঠালেও দাম অনেক বেশি। চোরাই পথে ইলিশ ভারতে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এমনিতেই এ বছর সাগরে ইলিশ কম ধরা পরছে। তারপরেও আবার ইলিশ পাচার হয়ে যাওয়ায় বাজারে ইলিশের আকাল দেখা দিয়েছে। ব্যাপক হারে ইলিশ মাছ ভারতে পাচার হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষ ইলিশের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
তিনি জানান, অক্টোবরে শুরু হচ্ছে হিন্দুদের শারদীয় দুর্গোৎসব। ঐ উৎসবে অতিথি আপ্যায়নের জন্য প্রচুর পরিমাণ ইলিশের চাহিদার কথা মাথায় রেখে একটি চোরাচালানি চক্র ভারতে ইলিশ পাচার করছে। অপরদিকে ঈদুল আজহা উপলক্ষে আরেকটি চক্র সীমান্তের বিভিন্ন পথ থেকে ভারতীয় গরু বাংলাদেশ পাচার করছে।
একই বাজারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক খুচরা মৎস্য ব্যবসায়ী জানান, সীমান্ত দিয়েই পদ্মার ইলিশ কোলকাতার বাবুদের পাতে গিয়ে পড়ছে। ইলিশ রফতানি বন্ধ থাকলেও চোরাই পথে সে ইলিশ যাচ্ছে ভারতে।
রূপসা পাইকারি মৎস্য বাজারের ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান বলেন, পবিত্র কোরবানির জন্য গরু আসছে, আর শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে যেতে শুরু করেছে পদ্মার ইলিশ। গত এক সপ্তাহ ধরে বৈধ ও অবৈধ উভয় প্রক্রিয়ায় সীমান্তপথে শুরু হয়েছে গরু-ইলিশের বাণিজ্য।
পূর্ব রূপসা এলাকার পাইকারি ব্যবসায়ী রহিম বেপারী জানান, দীর্ঘ দিন ধরে তিনি সরাসরি রূপালি রঙের ইলিশ চাঁদপুর, পাথরঘাটা ও বরিশাল থেকে কিনতেন। কিন্তু এখন সেখানে ট্রলার নিয়ে মাছ কিনতে গিয়ে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। কেননা যেসব ইলিশ ধরা পরছে তা চলে যাচ্ছে পাচারকারীদের হাতে।
নতুন বাজার এলাকার সাধারণ ক্রেতা আইয়ুব আলীর অভিযোগ, আড়তদার বড় সাইজের মাছগুলি তারা লুকিয়ে রেখে পরে তা চোরাচালানীদের নিকট বেশি দামে বিক্রি করে দেয়। তিনি জানান, সীমান্ত দিয়ে যে হারে ইলিশ মাছ ভারতে পাচার হচ্ছে তা বন্ধ করা গেলে এ মৌসুমে ৫০০ টাকা কেজি দরে কিনে খেতে পারতো সাধারণ মানুষ।
একটি বিশেষ সূত্রে জানা যায়, গরু ও ইলিশ- এই দু'টো অপ্রচলিত পণ্য রফতানিতে দুই দেশেই সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা বহাল আছে। তবে সম্প্রতি বাণিজ্যিক কূটনীতিতে এ নিয়ে দু'দেশের মধ্যে একটি অনানুষ্ঠানিক ও অলিখিত সমঝোতার পথ তৈরি হয়। এরপরই বৈধ ও অবৈধ উভয় প্রক্রিয়ায় সীমান্ত পথে শুরু হয়েছে গরু-ইলিশের বাণিজ্য। ঈদুল আজহা ও দুর্গোৎসবের পর এটি আবার আগের অবস্থানে চলে যাবে। অর্থাৎ গরু ও ইলিশ আসা-যাওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দৃশ্যত পুনর্বহাল হবে।
জানা গেছে, রাতের অন্ধকারে খুলনা-বরিশাল থেকে যশোর হয়ে সীমান্তে চলে যাচ্ছে ইলিশ। বিভিন্ন এলাকা দিয়ে যন্ত্রচালিত ভ্যান রিক্সায় করে থার্মোকলের পেটিতে বরফ চাপা দিয়ে তা ভারতে ঢুকে পড়ছে। উপরে থাকছে অন্য মাছ। এছাড়া নৌপথেও পাচার হচ্ছে ইলিশ।
অনুরূপভাবে কোরবানিকে সামনে রেখে ভারত থেকে যশোরের বেনাপোল-শার্শার বিভিন্ন সীমান্ত পথে ভারতীয় গরু আসছে। ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে স্থানীয় বাজারের চাহিদা মেটাতে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বসবাসকারী দু’দেশের রাখাল, বেপারী, পাইকার, খাটালের সঙ্গে যুক্তরা ঝুঁকি নিয়ে গরু আনা-নেয়া করছেন।
অভিযোগ রয়েছে, যশোরের বেনাপোল-শার্শা ছাড়াও জীবননগর উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত পথ দিয়ে অবাধে পাচার করা হচ্ছে ইলিশ মাছ। বিনিময়ে ভারতীয় চোরাচালানি আমাদের দিচ্ছে গরু। ব্যাপকহারে ইলিশ মাছ ভারতে পাচার হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষ ইলিশের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ইলিশ মাছ পাচারে লাভ বেশি হওয়ায় এ ব্যবসার সাথে মাছ ব্যবসায়ীরাও যেমন ঝুঁকে পড়ছে অন্যদিকে চোরাচালানির সংখ্যা বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে।
মাঝে মধ্যে সীমান্তরক্ষী বাহিনী দু’একটি ছোট চালান লোক দেখানোর জন্য আটক করলেও বড় বড় চালান তাদের সাথে বিশেষ চুক্তিতে পাচার করা হচ্ছে।
যাচ্ছে ইলিশ আসছে গরু এ বিষয়ে খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের কাছে জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আসা যাওয়ার বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। তবে পেপার পত্রিকায় কিছু খবর দেখছি।
দেশে পর্যাপ্ত গরু রয়েছে, তাই ভারতীয় গরু না আসলেও কোরবানিতে গরুর কোন সংকট হবে না বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৫
এমআরএম/আরআই