সিলেট: আসন্ন ঈদ-উল-আজহায় সিলেট অঞ্চল থেকে এবারও ভারতে চামড়া পাচারের আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে সংগ্রহের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়েও সন্দিহান তারা।
তাদের দাবি, আখাউড়া সীমান্তের ওপারে ভারতের আগরতলায় বিশাল ট্যানারি শিল্প থাকায় প্রতিবারই ওই সীমান্ত এলাকা দিয়ে সিলেটের চামড়া পাচার হয়, তাই এবারও এই সীমান্ত দিয়েই পাচারের আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য সীমান্ত এলাকার পাশাপাশি সড়ক-মহাসড়কেও প্রশাসনের সর্বোচ্চ নজরদারির প্রয়োজন বলেও মনে করেন ব্যবসায়ী নেতারা।
তবে চামড়া পাচারবোধে প্রশাসন সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন জেলা ও মহানগর পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা। এছাড়া মহাসড়কে কড়া নজরদারির পাশাপাশি সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট থানার ওসিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তারা।
সিলেট শাহজালাল চামড়া ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ বছর সিলেটে প্রায় দুই লক্ষ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ঈদ-উল-আজহায় তাদের দেড় লক্ষ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো। কিন্তু প্রায় চল্লিশ হাজার চামড়া পাচার হয়ে যাওয়ায় এবং ফঁড়িয়াদের কারণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হন তারা।
এবার লক্ষ্যমাত্রা পূরণের ব্যাপারে অনেকটাই আশাবাদী ব্যবসায়ীরা। তবে পশুর হাটে গরু বিক্রি কম হওয়ায় পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাধা হিসেবে তারা দেখছেন ফঁড়িয়া ও মৌসুমী ব্যবসায়ীদের। এদের কারসাজিতেই সংগ্রহীত চামড়ার বিশাল একটি অংশ পাচার হয়ে যায়। এমন অভিযোগ ব্যবসায়ী নেতাদের।
তারা বলছেন, প্রতিবছরেই কোরবানি ঈদের সময় প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় ফঁড়িয়া ও মৌসুমী ব্যবসায়ীদের তৎপরতা বেড়ে যায়। এসব ফঁড়িয়াদের কারণে চামড়া শিল্প বিপুল পরিমান ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তারা সরাসরি মাঠ থেকে চামড়া সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত ছাড়াই পাচার করে দেয় পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে।
ভারতে পশুর চামড়ার দাম অনেক বেশি হওয়ায় এবারও তার ব্যত্যয় ঘটবে না বলে মনে করেন তারা।
এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) রহমত উল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, ‘কোরবানির পশুর চামড়া যাতে কোনোভাবে পাচার না হয়, সেজন্য সিলেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। এছাড়া প্রকৃত ব্যবসায়ী বাদে অন্য কোন লোক যেন কাঁচা চামড়া শহর থেকে বাইরে নিতে না পারে সেজন্য তল্লাশি কার্যক্রম চালাতে নগর এলাকায় চেকপোস্ট বসানো হবে। ’
তিনি আরও বলেন, নগর এলাকায় সংগৃহীত চামড়াগুলো সরাসরি ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হবে। তাই অন্য কোন সড়ক দিয়ে চামড়াবাহী ট্রাক চলাচল করতে দেওয়া হবে না। এছাড়া চামড়া ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে যে স্থানে চামড়া জমায়েত করা হবে সেসব স্থানে সার্বক্ষণিক পুলিশের টহল টিম মাঠে থাকবে বলেও জানান তিনি।
শাহজালাল চামড়া ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি শেখ শামীম আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘মৌসুমী ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনে স্বল্প লাভে পাচারকারীদের দিয়ে দেয়। এ কারণে বিশাল লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে মাঠে নামলেও পরে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয় না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন প্রকৃত ব্যবসায়ীরা। তাই সীমান্ত পথগুলোতে রেড এলার্ট জারি করলে সিলেটের চামড়া পাচার না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
এছাড়া চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সকল সদস্যদের পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে। আমাদের সদস্যদের পরিচয়পত্র যাচাইয়ের মাধ্যমে পুলিশ চামড়া বহন করার অনুমতি দিলে চামড়া পাচার রোধ সম্ভব হবে।
এজন্য পরিচয়পত্র ছাড়া কেউ যাতে সিলেটের বাহিরে চামড়া পাঠাতে না পারেন সেজন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে চামড়া পাচার রোধে সিলেট অঞ্চলের চারটি স্থানে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মো. মিজানুর রহমান।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘চামড়া পাচাররোধে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের ওসমানী নগর, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ এবং মাধবপুর এলাকায় তিনটি চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানো হবে। এছাড়া সুনামগঞ্জের জাউয়া বাজারেও একটি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। ’
ঈদের পরবর্তী তিনদিন নিরবিচ্ছিন্নভাবে চেকপোস্ট কার্যক্রম চলবে। এছাড়া সীমান্ত এলাকার থানার ওসিদের সজাগ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি থানার কাজ তদারকির জন্য এসপিদের আলাদাভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে পশুর চামড়া পাচার ও যে কোনো ধরনের চোরাচালান রোধে বিজিবি সদস্যরা সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকবে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন বডার গার্ড বাংলাদেশ’র (বিজিবি) ৫ ব্যাটলিয়ানের সিও লে.কর্নেল মহিউদ্দিন।
তিনি জানান, সীমান্ত এলাকায় পাচার ও চোরাচালানি বন্ধে বিজিবি জওয়ানরা সার্বক্ষণিক কাজ করছে। ঈদের চামড়া পাচার রোধে তাদের সে অনুযায়ী নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।
এবারের ঈদে ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৪০ থেকে ৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া সারাদেশে প্রতি বর্গফুট মহিষের চামড়া ৩৫ টাকা, লবণযুক্ত খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ২০ থেকে ২২ টাকা ও বকরির চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ১৫ থেকে ১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সিলেট নগরীর সুরমা তীরবর্তী চাঁদনীঘাট ও ঝালোপাড়ায় শত বছরের পুরনো চামড়ার বাজার রয়েছে। ব্যবসায়ীরা পুরো সিলেট বিভাগ থেকে চামড়া কিনে এনে এখানে প্রক্রিয়াজাত করে ঢাকার হাজারীবাগের ট্যানারিগুলোতে বিক্রি করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৫
এএএন/আরআই