ময়মনসিংহ: ট্যানারি মালিকরা সিন্ডিকেট করে চামড়ার দাম কম নির্ধারণ করেছেন। অথচ মৌসুমী ব্যবসায়ী ও মধ্যস্বত্ত¡ভোগীরা বেশি দামে চামড়া ব্যবসায় এক অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
কিন্তু ময়মনসিংহের চামড়া ব্যবসায়ীরা মনে করেন, ঈদের রেশ কেটে যাবার পর আর সিন্ডিকেট থাকবে না। এ সিন্ডিকেট ভাঙবেই।
ট্যানারি মালিকরা ঠিক দামে না ফিরলে সীমান্তপথে চামড়া পাচার হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে বলেও মত স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। আর এ আশঙ্কা তৈরি হলেই সিন্ডিকেট সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে চামড়া কিনতে বাধ্য হবে।
তাই স্থানীয় প্রকৃত চামড়া ব্যবসায়ীরা হাল ছাড়ছেন না। তারা চামড়া মজুদ করে রাখার ভাবনা-চিন্তা করছেন। শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে ময়মনসিংহ শহরের পাকা চামড়ার বাজার চামড়া গুদামে গিয়ে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
সরেজমিনে ঘুরে প্রতি চামড়া ব্যবসায়ীদের দোকানের সামনেই চামড়া নিয়ে শ্রমিকদের ব্যস্ততা চোখে পড়েছে। কেউ ট্রাক থেকে কাঁচা চামড়া নামিয়ে আনছেন। কেউ আবার চামড়া থেকে চর্বি ছাড়াচ্ছেন। অনেকে শ্রমিক নিবিষ্ট মনে চামড়ায় লবণ মাখাচ্ছেন। দম ফেলার যেন জো নেই তাদের।
প্রায় এক যুগ ধরে চামড়া ব্যবসা করছেন শহরের চামড়া গুদাম এলাকার আব্দুর রউফ (৪৫)। তার মতো এ চামড়া গুদামে রয়েছেন আরো কমপক্ষে ২০ জন বড় চামড়া ব্যবসায়ী। তারা বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতি বছর প্রায় দেড় কোটি টাকা মূল্যের চামড়া কিনে প্রক্রিয়াজাত করে ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করেন।
সরকার নির্ধারিত দাম অনুসরণ না করে ঈদের দিনে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা চড়া দামে কোরবানিদাতাদের কাছ থেকে চামড়া কিনেছেন। তারা বর্গফুট প্রতি দামকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে গড়পড়তা দামে চামড়া কেনেন।
এমনই একজন মৌসুমী ব্যবসায়ী শহরের সানকিপাড়া শেষ মোড় এলাকার নাজমুল হোসেন। এ তরুণ ছোট-বড় ১৪টি গরুর চামড়া গড়ে ১ হাজার ৩শ’ টাকা দরে কিনেছেন। পরে ২শ’ টাকা লাভে এ চামড়া বিক্রি করেছেন স্থানীয় চামড়া গুদাম এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছে।
মৌসুমী এ খুচরা ব্যবসায়ীদের কারণেই ঢাকার ট্যানারি মালিকরা চামড়ার দরদাম নিয়ে চালবাজি শুরু করেছেন, এমন অভিযোগ করে চামড়া ব্যবসায়ী আব্দুর রউফ (৪৫) বলেন, ট্যানারি মালিকরা সারা বছর ৮০ টাকা বর্গফুট দামে চামড়া কেনেন। কিন্তু ঈদের সময় চামড়ার দাম ৪০ থেকে ৪৫ টাকা বর্গফুট দাম নির্ধারণ করেন।
গত ঈদে ৬০ টাকা বর্গফুটের কথা বলে শেষ পর্যন্ত তারা ১১০ টাকা বর্গফুট দরে শেষ পর্যন্ত আমাদের কাছ থেকে কিনে নিয়েছেন। আমাদের মতো ব্যবসায়ীদের ফতুর করতেই এখন তারা এ দামের কারসাজি করেছেন।
চামড়া ব্যবসায়ী আব্দুর রউফ ও হাবিব মিলে প্রায় ২২ লাখ টাকায় এক হাজার ছোট-বড় গরুর চামড়া কিনেছেন। তারা শ্রমিক ও লবণ খরচাসহ প্রায় ২৫ থেকে ২৬ লাখ টাকায় এ চামড়া ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করতে চান।
চামড়া ব্যবসায়ী হাবিব বলেন, মৌসুমী ব্যবসায়ীরা চামড়া প্রতি ১ থেকে দেড়শ’ টাকা লাভ রেখে আমাদের কাছে বিক্রি করে। আমরা তাদের কাছ থেকে ৮০ টাকা বর্গফুট দরে চামড়া কিনেছি। তাই লোকসান দিয়ে ট্যানারি মালিকদের কাছে চামড়া বিকোবো না।
১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া না ছাড়লে ট্যানারি মালিকরা গত ঈদের মতো মূল্য বাড়াতে বাধ্য হবেন বলেও মত দেন তিনি।
আব্দুর রউফ বলেন, আমরা চামড়া স্টক করে রাখবো। যতোদিন দাম না বাড়বে ততোদিন বিক্রি করবো না। আমরা চামড়া না ছাড়লেই সিন্ডিকেট থাকবে না, ভেঙে যাবে।
স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ী আব্বাস উদ্দিন ও ফজলুল হক অভিযোগ করেন, শহরের চামড়া গুদামে রয়েছেন ১৫ থেকে ২০ জন ফঁড়িয়া। তারা ট্যানারি মালিকদের টাকায় চামড়া কিনে তাদের সরবরাহ করেন। তারা নিজেরাই নিয়ম ভাঙছেন। পূর্বনির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে স্থানীয় মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঠিকই চামড়া কিনে নিচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১০৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৫
এএসআর