ঢাকা, শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ইমেজ সংকটে চামড়া শিল্প

ঊর্মি মাহবুব, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১, ২০১৫
ইমেজ সংকটে চামড়া শিল্প ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ২০১৪ সালের মধ্যে সাভারে অবস্থিত চামড়া শিল্প পার্কে হাজারীবাগ এলাকার ট্যানারিগুলো স্থানান্তরিত না হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে ইমেজ সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ। এতে ক্রেতা হারাতে হচ্ছে দেশীয় উদ্যোক্তাদের।



‌এ কারণেই চলতি বছরে ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর চামড়া কেনার ক্ষেত্রে পাইকারদের তৎপরতা কম  বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে, অ্যাপেক্সসহ অনেক আন্তর্জাতিক ক্রেতাই সম্প্রতি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশের দিক থেকে। এমনটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার অ্যান্ড লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়ার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু তাহের।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের চামড়ার সুনাম রয়েছে। গত কয়েক বছরে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হলেও এখন আমরা পড়েছি বিপাকে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০১৪ সালের মধ্যে হাজারীবাগের ট্যানারিগুলো সাভারে স্থানান্তরের জন্য সময় বেঁধে দিয়েছিল। অন্যথায় তারা আর আমাদের অর্ডার দিবে না বলে সতর্ক করেছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে আমরা যেহেতু সাভারের চামড়া শিল্প পার্কে যেতে পারিনি তাই নেতিবাচক ইমেজ তৈরি হয়েছে।

তবে আর্থিক সক্ষমতা না থাকার কারণেই  ট্যানারিগুলো সাভারে স্থানান্তর করা যাচ্ছে বলে দাবি এই ব্যবসায়ী  নেতার।

তিনি বলেন, হাজারীবাগ থেকে ট্যানারিগুলো সাভারের চামড়া শিল্প পার্কে নিয়ে যেতে যে আর্থিক সক্ষমতা থাকা প্রয়োজন, তা নেই ব্যবসায়ীদের। আমরা একধিকবার প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। মুখে মুখেই শুধু সবাই আমাদের আশ্বাস দিচ্ছেন। আর এর ফলে নানান প্রভাব পড়ছে এই শিল্পে।

তিনি বলেন, এই যেমন এবারের কোরবানি ঈদে চামড়া কেনা নিয়ে যে জটিলতা হয়েছে তার পিছনে এই ইস্যুটি দায়ী। কারণ গত বছর যে চামড়া সংগ্রহ হয়েছিল, তার ৫০ শতাংশ এখনো গুদামজাত অবস্থায় রয়েছে। ফলে চাহিদা কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।

অপরদিকে, আন্তর্জাতিক বাজারে নেতিবাচক প্রচারণায় চাহিদা হ্রাস পেয়েছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ হাইড স্কিন অ্যান্ড মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আলী হোসেন।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ইমেজ সংকটের কারণে চামড়ার চাহিদা কমে গেছে ফলে মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কিছুটা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। গত বছরের সংগ্রহ করা চামড়ার ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ এখনো রয়ে গেছে। ফলে চাহিদা কমে গেছে। অন্যান্য বছর চাহিদার তুলনায় চামড়া কম থাকায় নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামেই  ব্যবসায়ীরা চামড়া সংগ্রহ করতেন। এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। চাহিদা কম তাই কেউই নির্ধারিত দামের বেশি দিয়ে মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া নেয়নি।
 
গরমের কারণে ও কাঁচা চামড়ার গায়ে লবণের সঠিক ব্যবহার না হওয়ায় এবার সংগ্রহ করা প্রায় ২০ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা এ ব্যবসায়ী নেতার।

তিনি বলেন, চলতি বছর প্রায় ৪০ লাখ পিস পশুর চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে। কিন্তু গরম বেশি ও লবণের  সঠিক ব্যবহার না হওয়ার কারণে প্রায় ৮ লাখ পিস চামড়ার মান ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। এতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১২০ কোটি টাকা হতে পারে।

তবে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের চামড়ার ইমেজ সংকটের বিষয়ে এ দুই ব্যবসায়ী নেতার সঙ্গে একমত নন বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর সহ সভাপতি শুভাষিস বসু।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা কাঁচা চামড়া রফতানি নিরুৎসাহিত করছি। কাঁচা চামড়া রফতানিতে কোনো নগদ প্রণোদনা দেওয়া হয় না। আমরা চাই চামড়ার তৈরি পণ্যের রফতানি বৃদ্ধি হোক।

তিনি জানান, হাজারীবাগের ট্যানারিগুলো সাভারের চামড়া শিল্প পার্কে স্থানান্তরিত করার কাজ চলছে। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলমান রয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে নতুন নতুন ক্রেতারা আসছেন। ইমেজ সংকট থাকলে এমনটা হতো না। তাইওয়ানের স্টেলা কোম্পানিও বাংলাদেশের চামড়ার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন বলে জানান শুভাষিস বসু।

বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে চামড়া রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৩৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে অর্জিত হয়েছে ১ হাজার ১৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০১, ২০১৫
ইউএম/এসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।