ঢাকা: বাংলাদেশ কৃষি ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
রোববার (৪ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাকাবের ২০১৪-১৫ অর্থবছরের সার্বিক সূচকের পর্যালোচনা ও উন্নয়নে করণীয় নির্ধারণ বিষয়ে এ বৈঠক ডাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ব্যাংক দু’টিতে বড় অংকের মূলধন ঘাটতি রয়েছে। খেলাপি ঋণও আছে উচ্চ মাত্রায়। সরকার থেকে নিয়ে বা অন্য যে কোনো উপায়ে এই ঘাটতি মেটানো ও খেলাপি ঋণ কমানোর ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।
এক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, অটোমেশন, খেলাপি ঋণ কমানোর মাধ্যমে আয় বাড়াতে বলা হয়েছে। এছাড়া খেলাপি ঋণ কমাতে আদায় জোরদারের পাশাপাশি অবলোপন, খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ডেপুটি গভর্নর বলেন, দু’টি ব্যাংকই কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারিত সময়ে বার্ষিক আর্থিক বিবরণী জমা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। আর অডিটের ব্যালেন্সশিটে নানা অসঙ্গতি পাওয়া যাচ্ছে।
আগামীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘এ’ ক্যাটাগরিভুক্ত অডিট ফার্ম দিয়ে ব্যালেন্সশিট অডিট করাতে বলা হয়েছে। এছাড়া কৃষি ঋণ বহুমুখীকরণের লক্ষ্যে শুধু ফসলে ঋণ না দিয়ে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতিতে ঋণ বিতরণ করতে বলা হয়েছে।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, গত অর্থবছর খেলাপিদের কাছ থেকে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংককে ১১শ’ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল। আদায় হয়েছে এক হাজার ৭০ কোটি টাকা, যা ৯৩ শতাংশ। আর রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে ৩৫২ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য বেধে দেওয়ার বিপরীতে তারা আদায় করেছে ৪৭৫ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৩৫ শতাংশ বেশি।
এছাড়া, সারাদেশে কৃষি ব্যাংকের এক হাজার ২৯টি শাখার মধ্যে গত ৩০ জুন পর্যন্ত লোকসানে রয়েছে ১৫৪টি। আগের অর্থবছর শেষে ব্যাংকটির ১৬৫টি শাখা লোকসানে ছিল। আর রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ৩৭৭টি শাখার মধ্যে ১২৫টি শাখা লোকসানে রয়েছে। আগের অর্থবছর শেষে লোকসানে ছিল ১৬৫টি শাখা। এ হিসেবে দু’টি ব্যাংকেরই লোকসানী শাখা কমে এসেছে। তবে, বর্তমানে লোকসানে থাকা এসব শাখাকেও উদ্বেগজনক বলা হয়েছে। এটি আরও কমানোর উদ্যোগ নিতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সূত্র মতে, জুন শেষে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা, আগের অর্থবছর শেষে এ ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা। এতে গত এক বছরে ঘাটতি বেড়েছে এক হাজার ৮৭০ কোটি টাকা। আর রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে গত এক বছরে ঘাটতি প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ৪৯৪ কোটি টাকা হয়েছে। আগের অর্থবছর শেষে এ ব্যাংকে ঘাটতি ছিল ২৪৯ কোটি টাকা ছিল।
এছাড়া, জুন শেষে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৩১০ কোটি টাকায়, যা মোট ঋণের ২৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ রয়েছে ৯৭৭ কোটি টাকা, যা তাদের মোট ঋণের ২২ দশমিক ০২ শতাংশ।
দু’টি ব্যাংককেই খেলাপি ঋণ ও মূলধন ঘাটতি কমানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে বৈঠক সূত্র।
বাংলাদেশ সময়: ২২০২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০১৫
এসই/এইচএ/