ঢাকা: এতোদিন ধরে অর্থপাচারের অভিযোগ বিক্ষিপ্তভাবে অনুসন্ধান ও তদন্ত করে আসছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তারা। এখন থেকে এ ধরনের অভিযোগ অনুসন্ধান ও তদন্তের জন্য পৃথক ইউনিট গঠন করেছে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি।
আন্তর্জাতিক অর্থপাচার বিশেষজ্ঞ দলের (এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ-এপিজি) সঙ্গে বিশেষ বৈঠকের আগেই এ উইং গঠন করা হলো।
দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পঞ্চম তলার একটি বড় কক্ষে এ উইংয়ের কার্যক্রম চলবে। এ কক্ষ থেকেই অর্থপাচারের অভিযোগ সংক্রান্ত অনুসন্ধান ও তদন্ত কাজ পরিচালনা করবেন ইউনিটের কর্মকর্তারা।
বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বাংলানিউজকে এমনটাই জানিয়েছেন দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান। তিনি বলেন, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ উইং গঠনের বিষয়ে আমাদের আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল। এখন সে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হয়েছে।
মো. বদিউজ্জামান বলেন, আগামী রোব ও মঙ্গলবার (১১ ও ১৩ অক্টোবর) দুদকের সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানিলন্ডারিং বিশেষজ্ঞ দলের বিশেষ বৈঠক হবে। এ উইং গঠনের পেছনে ওই বৈঠকেরও ভূমিকা রয়েছে। তারা এলে দেখবে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধের জন্য আমাদের পৃথক উইং রয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার থেকে এ উইংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। দুদকের বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত বিভাগের পরিচালক নূর আহমেদ উইংটি তদারকির দায়িত্বে আছেন। এ টিমে আরও রয়েছেন দুদকের উপ-পরিচালক ঋতিক সাহা, শেখ মো. ফানাফিল্লা, সহকারী পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান, সাজ্জাদ রহমান প্রমুখ।
সূত্র জানায়, মুদ্রাপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন বন্ধে বাংলাদেশের নেওয়া পদক্ষেপ যাচাইয়ে শুক্র ও শনিবার (১০ ও ১১ অক্টোবর) দুই ভাগে ঢাকায় আসছে আন্তর্জাতিক অর্থপাচার বিশেষজ্ঞ দলটি। তারা প্রায় দুই সপ্তাহ অবস্থান করে অর্থ মন্ত্রণালয়, দুদক, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করবে।
১১ ও ১৩ অক্টোবর দুদকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠেয় আন্তর্জাতিক অর্থপাচার বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে বৈঠককে কেন্দ্র করে কর্ম পরিকল্পনা নির্ধারণ করেছে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি। দুদকের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক অর্থপাচার বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন কমিশনের চেয়ারম্যান, দুই কমিশনার, বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত বিভাগের মহাপরিচালক এবং অর্থপাচার বিভাগের উপ-পরিচালক। দুদকের পক্ষ থেকে এ বৈঠকের সমন্বয় করছেন সংস্থাটির উপ-পরিচালক ফানাফিল্লা।
এ সফরকে কেন্দ্র করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, বিশেষজ্ঞ দলটির মূল্যায়ন নেতিবাচক হলে বাংলাদেশের রেটিং খারাপ হবে এবং এর ফলে আন্তর্জাতিক লেনদেন বাধাগ্রস্ত হবে। পাশাপাশি বাণিজ্য ব্যয়বহুল হবে এবং দেশের ভাবমূর্তি সংকটে পড়বে।
অর্থপাচার ও সন্ত্রাসী অর্থায়নে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় বাংলাদেশের নাম এড়াতে ১৩টি নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, এনবিআর, দুদক ও এনজিও ব্যুরোকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞ দলের আসন্ন সফরেই বাংলাদেশের অবস্থান মূল্যায়ন করবে অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নির্ধারণকারী সংস্থা তথা এপিজি।
দুদকের মানিলন্ডারিং উইংয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, আসন্ন মিউচুয়াল ইভালুয়েশন প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের সাম্প্রতিক আউটকাম রেটিং নেতিবাচক হলে ঝূঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে। যা দেশের অর্থনীতির জন্য নেতিবাচক ফল বয়ে আনবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০১৫
এডিএ/এইচএ