ঢাকা: মালয়েশিয়ার কাছে বাংলাদেশি সব পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার চেয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। একইসঙ্গে তিনি মালয়েশিয়ার বিনিয়োগকারীদের এ দেশে বিনিয়োগ করারও আহ্বান জানান।
বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) সকালে হোটেল সোনারগাঁওয়ের গ্র্যান্ডরুমে ‘৪র্থ শোকেস মালয়েশিয়া ২০১৫’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা জানান মন্ত্রী।
বাণিজ্যের প্রসারে প্রতি দু’বছর পর পর এ মেলার আয়োজন করে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (বিএমসিসিআই)। আগামী তিনদিন হোটেল সোনারগাঁওয়ের গ্র্যান্ডরুমে মেলাটি চলবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, মালয়েশিয়ার বাজারে বাংলাদেশের সব পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেওয়া হলে দু‘দেশের বাণিজ্য ব্যবধান অনেক কমে আসবে। মালয়েশিয়া বর্তমানে ৪৯৪ ট্যারিফ লাইনের মধ্যে ১৯৭টির আওতায় মাত্র ১৯টি বাংলাদেশি পণ্য মালয়েশিয়ার বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে। মালয়েশিয়া ট্যারিফ ও নন-ট্যারিফ বাধাসমূহ দূর করলে সেখানে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি অনেক বৃদ্ধি পাবে। পৃথিবীর অনেক দেশই বাংলাদেশকে এ ধরনের সুবিধা দিয়েছে।
দু’দেশের বাণিজ্য ঘাটতির কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী আরও বলেন, গত অর্থবছরে বাংলাদেশ মালয়েশিয়া থেকে আমদানি করেছে ১২৮৭.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য, একই সময়ে বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে মাত্র ১৪০.০৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য। বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে ১১৪৭.৪১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ বিপুল বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের বাণিজ্য সুবিধা প্রয়োজন।
এ ঘাটতি কমাতে দু’দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে আলোচনা চলছে বলেও জানান মন্ত্রী। এ চুক্তি সম্পন্ন হলে বাণিজ্য আরও সম্পসারিত হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়ার বাজারে বাংলাদেশের পাট, পাটজাত পণ্য, মসলা, চামড়া, চামড়াজাত পণ্য, ওষুধ, আলু, শাক-সব্জি, সিরামিক টেবিল ওয়্যার, হিমায়িত মাছ, তৈরি পোশাক, নিটওয়্যার, টেক্সটাইল ও হালাল খাদ্য পণ্যের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বাণিজ্য সুবিধার কারণে চীনের বাজারেও বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়া বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত বন্ধুরাষ্ট্র ও ব্যবসায়িক পার্টনার। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরারে মালয়েশিয়া বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়ে আসছে। মালয়েশিয়া বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির বড় বাজার। বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশে বিনিয়োগের চমৎকার পরিবেশ বিরাজ করছে। মালয়েশিয়ার বিনিয়োগকারীরা এখানে বিনিয়োগ করে লাভবান হতে পারেন। বাংলাদেশ সরকার বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ২৫টি পণ্য বিশ্বের ৬৮টি দেশে রপ্তানি করে আয় করতো ৩৪৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের দূরদর্শিতা ও সময়োপযোগী সঠিক সিদ্ধান্তের কারণে সেই বাংলাদেশ আজ ৭২৯টি পণ্য পৃথিবীর ১৯৬টি দেশে রপ্তানি করে আয় করছে প্রায় ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২১ সালে দেশের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। দেশের জিডিপি গ্রথ এখন ৬ ভাগের বেশি। সে সময় বাংলাদেশের রিজার্ভ বা রেমিটেন্স ছিল না বললেই চলে, আজ দেশের রেমিটেন্স ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে এবং রিজার্ভ ২৬ বিলিযন মার্কিন ডলারের বেশি। আমাদের ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট ইতিবাচক। বাংলাদেশ এখন আর তলাবিহীন ঝুড়ি নয়, সম্ভাবনার দেশ।
বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র প্রেসিডেন্ট নাসির এ. চৌধুরির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার নরলিন বিনতি ওথম্যান, এফবিসিসিআই-এর প্রেসিডেন্ট আবদুল মাতলুব আহমাদ এবং মেলার আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন।
ঢাকাস্থ মালয়েশিয়ান হাইকমিশনার নরলিন বিনতি ওথম্যান বলেন, এই মেলার মাধ্যমে দু’দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হবে, যা বাণিজ্য সহযোগিতা আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।
মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারবে বলেও মনে করেন হাইকমিশনার নরলিন। মেলায় মালয়েশিয়ার ২২টি কোম্পানির ৫৫টি স্টল রয়েছে বলেও জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমেদ বলেন, বাংলাদেশি পণ্যের ভারতসহ বিভিন্ন দেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৫/আপডেট: ১৬১৩ ঘণ্টা
জেপি/এমজেএফ