ঢাকা: সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর আবাসন সমস্যা দূরীকরণে গৃহায়ন তহবিল থেকে এনজিওগুলোর মাধ্যমে বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি ও দ্রুত ছাড় করার দাবি জানিয়েছেন এনজিওগুলোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা।
রোববার (০১ নভেম্বর) রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমিতে ‘সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর আবাসন সমস্যা দূরীকরণে গৃহায়ন তহবিল’ শীর্ষক কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী এনজিও’র প্রধানরা এ দাবি জানান।
কর্মশালার শুরুতেই গৃহনির্মাণ ঋণ বিতরণে এনজিওগুলোর সুবিধা, অসুবিধা ও পরামর্শ নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনা হয়।
দেশের বিভিন্ন এলাকার একশ’টি এনজিও’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ৪০ জন উপকারভোগী এ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।
টাঙ্গাইলের সোসাইটি ফর সোশ্যাল সার্ভিসের (এসএসএস) এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হামিদ ভূঁইয়া বলেন, প্রকল্প তৈরি করে জমা দেওয়ার পর অর্থ পেতে ছয় মাস সময় লাগে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে গেলে তারা ঊর্ধবতন কর্তৃপক্ষের অজুহাত দেখান। গৃহায়ন তহবিল স্টিয়ারিং কমিটিতে এনজিও প্রতিনিধি রাখারও আবেদন করেন হামিদ।
রাজবাড়ীর কর্মজীবী কল্যাণ সংস্থার (কেকেএস) নির্বাহী পরিচালক ফকীর আব্দুল জব্বার বলেন, গৃহায়ন তহবিলের ঋণের সঙ্গে সঙ্গী ঋণ হিসেবে বন্ধু চুলা ও সোলার প্যানেল স্থাপনের ঋণ যোগ করা প্রয়োজন। অনাদায়ী ঋণের জন্য এনজিওগুলোর তহবিল গঠনে বাংলাদেশ ব্যাংক ও গৃহায়ন তহবিলকে সহায়তা করতে হবে।
জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার আদিবাসী বহুমুখী উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক কাশিনাথ মাহাতো বলেন, গৃহ নির্মাণের উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়া বর্তমানে ৫০ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১ লাখ টাকা করা প্রয়োজন। প্রস্তাব জমা দেওয়ার পরে অর্থ ছাড় করাতে অনেক সময় ব্যয় হয়। এটি আরও দ্রুত করা গেলে কাজ করতে সুবিধা হবে।
ফরিদপুরের নারী উন্নয়ন ফোরামের নির্বাহী পরিচালক আফরোজা সুলতানা বলেন, গৃহায়নের সঙ্গে স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা স্থাপনের জন্য ঋণের পরিমাণ ৫০ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১ লাখ টাকা করা প্রয়োজন।
সুবিধাভোগীদের পক্ষে গ্রামীণ উন্নয়ন সংস্থার ঋণগ্রহীতা আঞ্জুমান আরা বলেন, এ এনজিওর মাধ্যমে আমি ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে আবাসনের সমস্যা মেটাতে পেরেছি। এখন স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ও বিশুদ্ধ খাবার পানির জন্য নলকূপ স্থাপনের ঋণ পেতে চাই।
গৃহায়ন তহবিল স্টিয়ারিং কমিটির আয়োজনে কর্মশালার প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ও গৃহায়ন তহবিল স্টিয়ারিং কমিটির সভাপতি মো. আবুল কালাম আজাদ এনজিও প্রধানদের কথা শোনেন।
তিনি বলেন, আপনাদের দাবিগুলো আমরা কিভাবে পূরণ করতে পারি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে নির্ধারণ করা হবে। অর্থ ছাড়করণ দ্রুত করতে আপনাদের আবেদন পাওয়ার দিন থেকে একটি নিদিষ্ট সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। গৃহায়ন ঋণের সঙ্গে সোলার প্যানেল ও বন্ধু চুলা স্থাপনের প্রস্তাবটি বিবেচনা করা হবে।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঋণের পরিমান ১ লাখ টাকা না করা গেলেও ৭০-৭৫ হাজার টাকা করা হবে। যাতে সঙ্গে একটি স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা স্থাপন করা যায়। এছাড়াও আগামী সভায় একজন এনজিও প্রতিনিধি রাখারও আশ্বাস দেন আজাদ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এনজিও নির্বাহীদের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ড. এম আসলাম আলম। তিনি বলেন, খেলাপিঋণ কমাতে গ্রহীতা নির্বাচনে এনজিওগুলোকে আরও অভিজ্ঞ হতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ড. আতিউর রহমান বলেন, ঋণখেলাপির তকমা গরিব মানুষের জন্য চাই না। এজন্য আপনাদের চেষ্টা করতে হবে। গরিব মানুষ শতভাগ ঋণ ফেরত দেন, ধনীরা দেন না। আমরা সে পার্থক্য সৃষ্টি করতে চাই।
গর্ভনর বলেন, অনাদায়ী ঋণের ঘাটতি মেটাতে এনজিও, ব্যাংক ও গৃহায়ন তহবিলের সমন্বয়ে একটি ফান্ড গঠন করতে হবে। গৃহায়ন তহবিলকে একটি আদর্শ রুপ দিতে যা যা করার সব করা হবে।
স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. আব্দুর রহিম বলেন, ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে ৫০ কোটি টাকা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে গৃহায়ন তহবিল। বর্তমানে এর মূলধন প্রায় সাড়ে ৩শ’ কোটি টাকা। যাত্রা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৫১৪টি এনজিওর মাধ্যমে ৬৩২২০টি গৃহ নির্মাণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০১৫
এসই/এএসআর