ঢাকা: ৯৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রথমধাপে ২০০৬ সালের মার্চে শুরু হয়েছিল ‘কর্ণফুলী পানি সরবরাহ’ প্রকল্পের কাজ। হিসাব মতে ২০১০ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।
বর্তমানে এ প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা। আর প্রকল্প শেষ করার সময় ডিসেম্বর ২০১৬ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবুও প্রকল্পের কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে তা যানেন না সংশ্লিষ্টরা।
এতে করে প্রকল্পটি শুধু ব্যয় ও সময় বৃদ্ধির মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু প্রকল্পের কাজ যথা সময়ে শেষ হচ্ছে না।
চট্টগ্রাম নগরীতে প্রতিদিন ৫০ কোটি লিটার পানির চাহিদার বিপরীতে ওয়াসা দুটি ওয়াটার ট্রিটম্যান্ট প্ল্যান্ট থেকে সরবরাহ করতে পারছে মাত্র ২১ কোটি লিটার। ‘কর্ণফুলী পানি সরবরাহ’ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে আরও ১৪ কোটি লিটার অতিরিক্ত পানি সরবরাহ করতে পারবে বলে জানায় চট্টগ্রাম ওয়াসা। নগরীতে পানির চাহিদা মেটানোই প্রকল্পের প্রধান কাজ।
স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন চট্টগ্রাম ওয়াসা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্র জানায়, প্রকল্পের প্রয়োজনে ১৬ দশমিক ৬৮ হেক্টর জমি অধিগ্রহণে ২ বছর বিলম্ব হয়েছে। যে কারণে প্রকল্পের কাজ শুরু করতেই দুই বছর সময় চলে গেছে। এতে করে প্রকল্পে ব্যবহৃত নির্মাণ সামগ্রী এবং যন্ত্রাংশ আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কারণে প্রকল্প ব্যয় বেড়েছে।
মাঠ পর্যায়ে চাহিদা অনুযায়ী প্রকল্পটির জন্য অতিরিক্ত কিছু ভৌত কাজ করার প্রয়োজন দেখা দেয়। তাছাড়া প্রকল্প অনুমোদনকালীন ইয়েনের বিনিময় হার ছিল দশমিক ৫৬৮ টাকা। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ১ ইয়েন সমান দশমিক ৮১১ টাকা।
দ্বিতীয় ধাপে প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬৫৪ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাইকা দেবে ৯৯১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। প্রকল্পটির কাজ জুন ২০১০ এ সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নানা কারণ দেখিয়ে প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল মার্চ ২০০৬ হতে জুন ২০১২ সাল পযর্ন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে।
বার বার প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনে এই বিষয়ে বৈঠক হয়েছে। ব্যয় ও সময় বৃদ্ধির যৌক্তিক কারণ জানতে চেয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
আবারও নানা কারণে প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে। তৃতীয়ধাপে প্রকল্পের মোট ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ১ হাজার ৮৪৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাইকা দেবে ৯৪০ কোটি ৩০ লাখ টাকা। সময় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ডিসেম্বর ২০১৬ সাল পযর্ন্ত। এতে করে প্রকল্পের সময় বাড়লো ৬ বছর এবং ব্যয় বাড়লো প্রায় দ্বিগুণ।
বার বার প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মুহাম্মদ জহরুল হক বাংলানিউজকে বলেন, নানা কারণে ৯৬৩ কোটি টাকা প্রকল্পের ব্যয় এখন ১ হাজার ৮৪৮ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। প্রকল্পের আওতায় নতুন কিছু অঙ্গযোগ করা হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণে দুই বছর দেরি হয়েছে যে কারণে প্রকল্পের জন্য নির্মাণাধীন পণ্যের দামও বেড়েছে।
দ্বিগুণ ব্যয় বাড়ায় প্রকল্প প্রণয়ণে অপরিকল্পনা ছিল কি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাঠ পর্যায়ে নানা ধরনের সমস্যা ছিল, সব কিছু খুলে বলা যাবে না। আমরা নিম্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা হয়ে এই বিষয়ে কিছু বলতে চাই না।
প্রস্তাবিত বাড়তি সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে কি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এবার যেভাবেই হোক প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হবে, কারণ প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় আর বৃদ্ধি করা যাবে না।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্পের অনুকূলে ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন পাইপ লাইনের দৈর্ঘ্য ৩৮ দশমিক ৫ কিলোমিটারের পরিবর্তে ৩৩ দশমিক ৫ কিলোমিটার করা হয়েছে। এতে করে ৫ কিলোমিটার পাইপ লাইন কমানো হয়েছে। কিন্তু এ খাতে বরাদ্দ ১৪৯ কোটি কমাচ্ছে সংশ্লিষ্টরা। ৫ কিলোমিটার পাইপ লাইন কমানোর কারণে পরিকল্পনা কমিশন এ খাতে বরাদ্দ চায় ১০০ কোটি টাকা। কিন্তু এতে দ্বিমত পোষণ করে চট্টগ্রাম ওয়াসা।
চট্টগ্রাম ওয়াসা জানায়, পাইপ লাইনের দৈর্ঘ্য ৫ কিলোমিটার হ্রাস পেলেও এর ব্যস বৃদ্ধি পেয়েছে। কাজেই এখাতে ব্যয় কমানো যাবে না। এখাতের ব্যয় জাইকা থেকে পাওয়া যাবে। তাই এই অঙ্গের ব্যয় কমানো ঠিক হবে না।
চট্টগ্রাম ওয়াসা পরিকল্পনা কমিশনকে আর অবহিত করে বলে, প্রকল্পের ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট অ্যান্ড ইনটেক ফ্যাসিলিটি খাতে ২৫১ কোটি টাকা সংস্থান ছিল। কিন্তু দরপত্রের গৃহীত মূল্য কমায় এখাতে ১৩৭ কোটি টাকা হ্রাস হয়েছে। হ্রাসকৃত ব্যয় অর্থাৎ ১১৪ কোটি ২০ লাখ টাকা সংশোধিত ডিপিপি’তে উল্লেখ করা হবে।
এখন কবে এ প্রকল্পের সুবিধা নগরবাসী ভোগ করতে পারবে সেটাই দেখার বিষয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৫
এমআইএস/এসএইচ