বগুড়া: মাথায় মাথাল (স্থানীয় ভাষায়) বা বাঁশের টুপি। আর হাতে কোদাল ও নিড়ানী।
দম ফেলার সময় নেই এখন তাদের। সিংহভাগ কৃষকের ক্ষেতেই দিন কেটে যাচ্ছে। অনেকে আবার টোল বসিয়ে রাতও যাপন করছেন। এত কর্মযজ্ঞ কেবল বেঁচে থাকার তাগিদে। সামান্য বাড়তি আয়ের আশায়। ধান চাষে টানা কয়েক বছর লোকসান গুণে এবার তারা শীতের সবজিতেই ঘুরে দাঁড়াতে চাইছেন।
কৃষকের পরিশ্রম ফলও দিয়েছে। চারিদিকে সবজির সমারোহ। বাঁধাকপি, ফুলকপি, মূলা, করলা, লাল শাক, পালংশাক, শিম, টমেটো, বেগুন, লাউ, শসা, মিষ্টি কুমড়া, বরবটি, ডাটা, চিচিঙা, পটল, কাঁচা মরিচ গাছে ছেয়ে আছে বিস্তীর্ণ মাঠ। শীতকালীন এসব ফসলের অধিকাংশই কৃষক নিয়মিত বাজারজাত করছেন। দামও পাচ্ছেন বেশ ভাল।
রোববার (১৮ অক্টোবর) বৃহত্তর বগুড়া অঞ্চলের বিভিন্ন জনপদ ঘুরে সবজিচাষী ও সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা এমনই তথ্য জানা গেল।
বগুড়া সদর, শাজাহানপুর, শেরপুর, নন্দীগ্রাম, শিবগঞ্জ, গাবতলী, ধুনট উপজেলার বিভিন্ন জনপদে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয় জাহিদুল ইসলাম, সেকেন্দার আলী, আবু রায়হান, শামছুর রহমান, জাবেদ আলী, আমজাদ হোসেন, মোসলেম উদ্দিন, বুলু মিয়া, রফিকুল ইসলাম, আনছার আলী, হায়দার আলী, আব্দুল বাকী, হোসেন আলী, সেখ জামালসহ একাধিক সবজিচাষীর সঙ্গে।
এসব প্রান্তিক চাষী জানান, ধান চাষে টানা কয়েক বছরের লোকসান দেওয়ার পর এবার তারা ঘুরে দাঁড়াতে চাইছেন। সবজি চাষে জমি ও পুঁজি, দুইই কম লাগে। এবার সবজির ফলনও ভালো হয়েছে। সবার মনেই নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বগুড়া অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি রবি মৌসুমে বৃহত্তর বগুড়া অঞ্চলে মোট ২৩ হাজার ১৮৭ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের শীতকালীন সবিজ চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে বগুড়া জেলায় ৬ হাজার ২০০ হেক্টর, জয়পুরহাটে ২ হাজার ৫০০ হেক্টর, পাবনায় ১০ হাজার ৫৪৭ হেক্টর ও সিরাজগঞ্জে ৩ হাজার ৯৪০ হেক্টর।
শাজাহানপুর উপজেলা কৃষি অধিদফতরের কর্মকর্তা সোহেল মো. শামছুদ্দীন ফিরোজ বাংলানিউজকে জানান, উপজেলার প্রায় পাঁচটি ইউনিয়নে বারো মাসই কৃষকরা
বিভিন্ন জাতের সবজি ফলিয়ে থাকেন। তবে এখানে কৃষকরা নার্সারি করে বেশি সবজি ফলান বলে তিনি জানান।
শেরপুর উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, এ উপজেলার মধ্যে গাড়ীদহ ইউনিয়নের বৃহৎ অংশে নানা জাতের সবজি চাষ করা হয়েছে এবার। এখানকার দেখাদেখি পুরো উপজেলায় কমবেশি সবজি চাষ হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়া অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয়ের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ জাহিদ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এ অঞ্চলের কৃষকরা ধান চাষে তেমন একটা সুবিধা করতে পারছেন না। তাই সিংহভাগ এখন সবজি চাষকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৬১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৫
এমবিএইচ/আরএইচ