ঢাকা: জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নির্মাণাধীন ফ্ল্যাট প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে এক বছর আগে। তবে এখনো শেষ হয়নি ফ্ল্যাট নির্মাণের কাজ।
তবে প্রকল্পের কাজ ৬৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ শেষ বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা দাবি করলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন।
সোমবার (১৯ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ফ্ল্যাট প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
ফ্ল্যাট এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, ৯টি ১৫তলা ভবনের ৮টির গাঁথুনি শেষ হয়েছে। একটির কাজ সবে মাত্র শুরু হয়েছে। কোনোটিরই নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। তিনটি ভবনের ইটের গাঁথুনি শেষ হলেও, শেষ হয়নি প্লাস্টারের কাজ।
তবে বহুতল এ ভবনগুলোর একটিতেও গাড়ি পার্কিং সুবিধা, পর্যাপ্ত খোলা জায়গার ব্যবস্থা না রাখায় স্পিকারের পরিদর্শনের পর সংসদ সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা ক্ষোভ ঝাড়েন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, দেশ কী গরিব হয়ে গেলো নাকি? জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা থাকবেন। অথচ সেই ভবনে নেই গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। নেই অন্যান্য সুযোগ সুবিধা। এখানে কিভাবে থাকবে সবাই। এতোগুলো পরিবারের সদস্যরা যখন এখানে বসবাস করতে শুরু করবে তখন কী অবস্থা দাঁড়াবে?
সংসদ কর্মকর্তাদের আবাসন সমস্যা সমাধানে ২০১১ সালের জুলাই থেকে আগারগাঁও পরিসংখ্যান ভবনের বিপরীত পাশে ফ্ল্যাট প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের মেয়াদকাল অনুযায়ী, ২০১৪ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করে ফ্ল্যাট হস্তান্তর করার কথা ছিল।
তবে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (একনেক) ২০১২ সালের ৯ জুলাই প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। এরপর ২০১৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি স্পিকার প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ৫ দশমিক ১০ একর জায়গার ওপর নির্মাণাধীন এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে দুইশ ১৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে গণপূর্ত অধিদফতর ও স্থাপত্য অধিদফতর।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দাবি, এ পর্যন্ত প্রকল্পের জন্য একশ’ ১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে যার পুরোটাই খরচ হয়ে গেছে।
প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহীন বাংলানিউজকে জানান, ২০১৪ সালে প্রকল্প শেষ করার কথা থাকলেও এখানে গণপূর্তের বেশ কিছু স্থাপনা ছিল। এগুলো সরানোয় কিছু সময় ব্যয় হয়। এছাড়া প্রথমদিকে অর্থছাড়ও সেভাবে হয়নি। তবে বর্তমানে প্রকল্পের অগ্রগতি বেশ ভালো।
নকশা অনুযায়ী, ১৫ তলা বিশিষ্ট ৮টি ভবনের প্রতিটিতে ৫৬টি করে ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬শ’ বর্গফুটের ১৬৮টি, ৮০০ বর্গফুটের ১১২টি, এক হাজার বর্গফুটের ১১২টি এবং ১২৫০ বর্গফুটের ৫৬টিসহ সর্বমোট ৪৪৮টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ১৫তলা বিশিষ্ট ৫ তলা ভবনে ৫ হাজার বর্গফুটের মাল্টিপারপাস হল নির্মাণের কথা রয়েছে। অভ্যর্থনা ও গার্ডরুমের সঙ্গে থাকছে ২টি সাবস্টেশন।
এছাড়া অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা, ইন্টারকম সুবিধা ছাড়াও থাকছে ১৬টি লিফট। দু’টি ৩০০ কেভিএ জেনারেটর সার্বক্ষণিক স্ট্যান্ডবাই রাখা হবে।
পরিদর্শনকালে গণপূর্ত ও স্থাপত্য অধিদফতরের কর্মকর্তাদের কাছে ফ্ল্যাট প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চান স্পিকার। এ সময় প্রকল্প এলাকায় গণপূর্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাদের রুমে বসেই আলাপ সারেন স্পিকার।
আলাপকালে তারা জানান, প্রকল্পের বর্ধিত মেয়াদ ২০১৬ সালের জুনের মধ্যেই সব ফ্ল্যাটের নির্মাণ কাজ শেষ হবে।
পরে স্পিকার ফ্ল্যাট প্রকল্পের ১ নং ভবনের সামনে গিয়ে কিছু সময় থেকে কর্মকর্তাদের নিয়ে বেরিয়ে যান। গণমাধ্যমকর্মীদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও স্পিকার কারো সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।
পরে জাতীয় সংসদের গণসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, স্পিকার ফ্ল্যাট প্রকল্পের কাজে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এ সময় প্রকল্প এলাকায় কমিউনিটি সুবিধা বৃদ্ধিসহ ডে-কেয়ার সেন্টার তৈরিরও পরামর্শ প্রদান করেন। যথাসময়ে ফ্ল্যাটগুলো হস্তান্তরের লক্ষ্যে প্রকল্পের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করারও তাগিদ দেন স্পিকার।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৫
এসএস/জেডএস