ঢাকা, শনিবার, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্পের ব্যয়-সময় আরো বাড়লো

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৫
ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্পের ব্যয়-সময় আরো বাড়লো

ঢাকা: আবারও বাড়লো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের সময় ও ব্যয়। কুমিল্লার দাউদকান্দি ব্রিজের টোলপ্লাজা থেকে চট্টগ্রামের সিটিগেট পর্যন্ত এ মহাসড়ক চার লেন বানানোর কাজ শেষ করতে সময় বাড়ানো হয়েছে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত, আর ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮১৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

এ নিয়ে প্রকল্পের সময় বাড়লো চতুর্থ দফায়, আর ব্যয় বাড়লো পঞ্চম দফায়।

সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (সওজ) পক্ষ থেকে সম্প্রতি এ সংক্রান্ত প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। সওজ ও পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বিষয়টি জানিয়েছে।
 
দীর্ঘ ১৯২ দশমিক ৩ কিলোমিটার এ মহাসড়ক চার লেন বানাতে প্রথম দফায় প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০০৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১২ সালের জুন পর্যন্ত। দ্বিতীয় ধাপে কাজ শেষ করতে সময় বাড়ানো হয় ২০১৩ সালের ‍ডিসেম্বর পর্যন্ত। তৃতীয় ধাপে নির্ধারণ করা হয় ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। আর সর্বশেষ চতুর্থধাপে বাড়ানো হলো ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।

চার লেন তৈরির মূল উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) ব্যয় ছিল ২ হাজার ১৬১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। প্রথম পর্যালোচিত ডিপিপিতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৩৮২ কোটি ১৭ লাখ টাকা। বিশেষ ডিপিপিতে ব্যয় বেড়ে ‍দাঁড়ায় ২ হাজার ৪১০ কোটি ১৭ লাখ টাকা। দ্বিতীয় পর্যালোচিত ডিপিপিতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ১৯০ কোটি ২৯ লাখ টাকা। আর সর্বশেষ পঞ্চম দফায় বিশেষ ডিপিপিতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ালো ৩ হাজার ৮১৬ কোটি ৯০ লাখ টাকায়।
 
দফায় দফায় সময় ও ব্যয় বেড়ে যাওয়ার জন্য বর্ষা, প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাব, পাথর সংকট ও বিদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতিকে দোষারোপ করা হচ্ছে প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে।
 
এ বিষয়ে প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ইঞ্জিনিয়ার ইবনে আলম হাসান বাংলানিউজকে বলেন, সময় ও ব্যয় বাড়াতে আমরা পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব করেছি। কিন্তু এখনও প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় সিদ্ধান্ত হয়নি।
 
তিনি বলেন, সবে মাত্র বর্ষা শেষ হলো, এবার পুরোদমে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। আশা করা যাচ্ছে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। কিছু রাস্তা পাকা করার কাজ বাকিও রয়েছে সেটা শেষ পর্যায়ে। কাজ সমাপ্ত হলে প্রকল্প এলাকায় গাছও লাগানো হবে।
 
পাথর সংকটের কারণে কিছু এলাকায় কাজ ব্যাহত হয়েছিল। এখন সে সংকট কেটেছে কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভারত থেকে হঠাৎ পাথর সরবরাহ কমে গেছে। তবে আশা করা যাচ্ছে, পূজার পর পাথর ভারত থেকে আরও বেশি আসবে।
 
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্র জানায়, ১০টি প্যাকেজভুক্ত করে এ কর্মযজ্ঞ চলছে। এরমধ্যে সড়ক নির্মাণ প্যাকেজ-১ (২২ কিলোমিটার), প্যাকেজ-৪ (২০ কিলোমিটার), প্যাকেজ-৬ (২০ কিলোমিটার), প্যাকেজ-৭ (১৫.৬৭ কিলোমিটার), প্যাকেজ-৮ (১৮ কিলোমিটার), প্যাকেজ-৯ (১৭.৪০ কিলোমিটার) ও প্যাকেজ-১০ (১৫.২৯ কিলোমিটার) এর কাজ সন্তোষজনক।
 
তবে, পাথর সংকটের কারণে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাইনোহাইড্রো কর্পোরেশন লিমিটেডের নির্মাণাধীন প্যাকেজ-২ (২৩ কিলোমিটার), প্যাকেজ-৩ (২১ কিলোমিটার) ও প্যাকেজ-৫ (২০ কিলোমিটার)-এর অগ্রগতি মন্থর। এ তিনটি প্যাকেজের কাজের গতি ত্বরান্বিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে জোর তাগিদ দিয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্র বলছে, ১৯২ দশমিক ৩ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ১৪৩ কিলোমিটার সড়কে পেভমেন্টের কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় সকল ভূমি অধিগ্রহণের কাজ সমাপ্ত হয়েছে এবং মাটির কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৯৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। একইসঙ্গে এ কর্মযজ্ঞের আওতায় ২৩টি সেতুর মধ্যে ২০টি সেতু এবং ২৪২টি কালভার্টের মধ্যে ২৪০টি কালভার্টের কাজ শেষ হয়েছে। চার লেনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬টি অংশে ৭ কিলোমিটার কংক্রিটের সড়কও নির্মাণ করা হয়েছে।
 
সূত্রটি জানাচ্ছে, প্রকল্প এলাকার ছয়টি বাজার অংশে (ছোট দারোগার হাট, সীতাকুন্ডু বাইপাস, কদম রসুল বাজার, বিএমএ গেট ও পোর্ট কানেকটিভিটি রোড) রিজিড পেভমেন্ট নির্মাণ করা হবে। এ খাতে ১৩৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। এছাড়া, চার লেনে নিরাপদ ট্রাফিক ব্যবস্থা চালু করতে ১ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
 
প্রকল্প এলাকায় নির্মাণ করা হবে দু’টি ফ্লাইওভারও। ৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি হবে কুমিল্লার শাসনগাছায়। আর ১৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে আরেকটি নির্মাণ করা হবে ফেনীর মহিপাল মোড়ে। এই মোড়টি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও ফেনী-লক্ষ্মীপুর মহাসড়কের মিলনস্থল।

প্রকল্প সূত্রটি আরও জানাচ্ছে, পাথরের অভাবে কিছু সেতুর নির্মাণ কাজ ব্যহত হচ্ছে। এগুলো হলো, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী বাইপাস অংশের লালপুল, লেমুয়া, মুহুরী ও ধুমঘাট সেতু, চট্টগ্রাম রেলওভার পাস এবং কুমিল্লার মিয়াবাজার সেতু।

অগ্রগতির বিষয়ে সূত্রটি বলছে, প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ২ হাজার ২৭১ কোটি ২৭ লাখ টাকা। ভৌত অগ্রগতি ৬৯ দশমিক ২০ শতাংশ। এছাড়া, বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে ১২১ দশমিক ৩ লাখ ঘনমিটার।
 
সওজের কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পের মূল কাজ শেষ হলে চার লেনের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হবে। ৫ মিটার প্রশস্ত মিডিয়ানের মাঝখানে বুশ টাইপ বৃক্ষরোপণ করা হবে, যেন রাতে বিপরীত দিক থেকে অন্য কোনো গাড়ির আলো অপর গাড়িচালকের সমস্যা করতে না পারে। এসব গাছের পরিচর্যার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পাঁচ বছর গাছগুলো পরিচর্যার জন্য কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হবে।
 
২০১৫ সালের মধ্যে প্রকল্পের পূর্তকাজ  শেষ হবে। পরবর্তী এক বছরে প্রকল্পের বাকি কাজ শেষ হবে বলেও জানান সওজ কর্মকর্তারা।
 
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৫
এমআইএস/এইচএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।