ঢাকা: ক্ষতিকর ফ্রুটিকা জুস উৎপাদন, সরবরাহ ও ১০০ ভাগ পিওর ঘোষণা দিয়ে প্রতারণার অভিযোগে আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজের দুই কর্তা শেখ বশিরউদ্দীন এবং শেখ জামিলকে জরিমানা করেছে বিশুদ্ধ খাদ্য আদালত। এছাড়াও ফ্রুটিকা বিক্রির অভিযোগে এক বিক্রেতাকেও জরিমানা করা হয়।
২৭ অক্টোবর বিশুদ্ধা খাদ্য আদালতের বিচারক স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মাহবুব সোবহানী এ রায় দেন।
রায়ে মরুহম শেখ আকিজ উদ্দীনের ছেলে শেখ বশির উদ্দীন ও শেখ জামিলকে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং বিক্রেতা মোহাম্মদ আজিজুল হক সর্দারকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মামলার আদেশে দেখা যায়, আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ‘ফ্রুটিকা ম্যাঙ্গো জুস’র একটি বিজ্ঞাপনে এক মাছ বিক্রেতা একজন স্মার্ট ক্রেতার কাছে ফরমালিন মিশ্রিত মাছকে ভালো বলে দাবি করছেন। ক্রেতা বিক্রেতাকে একটি ফ্রুটিকার বোতল দেন। এরপর বিক্রেতার সব জারি-জুরি ফাঁস হয়ে যায়।
ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে শোনা যায়, ‘ফ্রুটিকা ম্যাঙ্গো জুস, বাংলাদেশের একমাত্র প্রিজারভেটিভ বিহীন জুস। যা তৈরি হয় জার্মানের অ্যাফেক্টিবল পদ্ধতিতে। যা শত ভাগ নিরাপদ। একটু বেশিই পিওর!’
টেলিভিশনে এই বিজ্ঞাপন দেখে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক) মোহাম্মদ কামরুল হাসান বিষয়টি ডিসিসি দক্ষিণের স্বাস্থ্য বিভাগকে অবহিত করেন। স্বাস্থ্য বিভাগ ‘ফ্রুটিকা ম্যাঙ্গো জুস’ কেমিক্যাল পরীক্ষার জন্য ঢাকার নিরাপদ খাদ্য আদালতের কাছে অনুমোদন চায়।
আদালতের আদেশের ভিত্তিতে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কামরুল হাসান নিউমার্কেটের ৪ নম্বর গেট এলাকার সৈকত ফাস্ট ফুড (৭৭ নম্বর দোকান) থেকে ফ্রুটিকার বোতল কিনে সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে (বিসিএসআইআর) পরীক্ষা করতে দেন।
পরীক্ষার প্রতিবেদনে দেখা যায়, ১০০ ভাগ প্রিজারভেটিভ বিহীন ঘোষণা দেওয়া হলেও ফ্রুটিকায় মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর মারাত্মক ৬১ ভাগ সোডিয়াম বেনজোনাইট ও ৬৪ ভাগ সালফার ডি অক্সাইড রয়েছে। এই দুই রাসয়নিকের একত্রে ব্যবহারে মানবদেহে ভয়ঙ্কর ক্যান্সার সংক্রমতি হতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
কেমিক্যাল পরীক্ষার এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ফ্রুটিকার বিক্রেতা মোহাম্মদ আজিজুল হক সর্দার ও উৎপাদনকারী এবং সরবরাহকারী আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজের শেখ বশিরউদ্দীন ও শেখ জামিল উদ্দীনকে আসামি করে মামলা করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ।
২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর দায়ের হওয়া ১৮৪/১৪ নম্বর এ মামলায় ঢাকার নিরাপদ খাদ্য আদালতে করা নিরাপদ খাদ্য আদেশ ১৯৫৯ (সংশোধিত ২০০৫) এর ৬ (ক) ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে খাদ্যপণ্যে বিষাক্ত রাসয়নিক ব্যবহার, ১৮ (১) ধারায় ভূয়া লেভেল ব্যবহার ও ১৯ (১) ধারায় গণমাধ্যমে ভুল তথ্য সম্বলিত বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়।
মামলার পর সায়েন্স ল্যাবে তদবির চালায় আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ। তারা সেখান থেকে দেওয়া আগের প্রতিবেদন স্থগিত করে নতুন রিপোর্ট নিয়ে আদালতে জমা দেয়। ডিসিসি দক্ষিণের স্বাস্থ্য বিভাগ বিষয়টি আদালতে চ্যালেঞ্জ করলে চলতি বছরের ১৬ আগস্ট বিসিএসআইআর’এর প্রিন্সিপ্যাল বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রাক্তন গবেষণা সমন্বয়কারী মনজুর মোর্শেদ লিখিত আবেদনের মাধ্যমে আদালতে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে আগের রিপোর্ট বহাল করেন এবং দ্বিতীয় রিপোর্ট বাতিল ঘোষণা করেন।
আদালত তার রায়ে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর ফ্রুটিকা ম্যাঙ্গো ফ্রুট জুস বা পিওর ফ্রুটিকা জুস বিজ্ঞাপন যাতে ভবিষ্যতে প্রচারিত না হতে পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে তথ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৫
আরএম/ এসএইচ