ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

আইএফআইসি ব্যাংকের পরিচালক লুৎফর রহমানকে অপসারণ

শাহেদ ইরশাদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৫
আইএফআইসি ব্যাংকের পরিচালক লুৎফর রহমানকে অপসারণ লুৎফর রহমান

ঢাকা: আইএফআইসি ব্যাংকের পরিচালক ও সাবেক চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান বাদলকে পরিচালনা পর্ষদ থেকে অপসারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) বাদলকে অপসারণের চিঠি অনুমোদন করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান।



জনস্বার্থ ও আমানতকারীদের স্বার্থ বিবেচনা ও যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন না করায় ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর ৪৮(১) ধারার আওতায় তাকে অপসারণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবারই আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও কোম্পানি সচিবের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার সালমান এফ রহমান। লুৎফর রহমান পরিচালনা পর্ষদ সদস্যের পাশাপাশি নির্বাহী কমিটি ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান। তিনি ২০০৭ সালের অক্টোবর থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। বাদল বর্তমানে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভি ও আরটিভির পরিচালক। এছাড়া ২০১২ সালের নভেম্বর থেকে নেপাল বাংলাদেশ ব্যাংকের (এনবি) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আইএফআইসি ব্যাংকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, জয়দেবপুর থানায় দায়েরকৃত অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক মহামান্য আদালতে দাখিলকৃত অভিযোগপত্রে আইএফআইসি ব্যাংকের পরিচালক লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে নাশকতা ছড়ানো ও রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য অর্থ সরবারহের অভিযোগ (১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫(৩) বা ২৫(ঘ) ধারার অপরাধ) পুলিশের তদন্তে প্রাথমিকভাবে সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। বিদেশে পলাতক থাকায় তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

এমন ব্যক্তি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে অধিষ্ঠিত থাকায় প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এছাড়া লুৎফর রহমান নির্বাহী কমিটি ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। ২০১৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ব্যাংকের ১৮টি পর্ষদ সভার কোনোটিতে তিনি অংশগ্রহণ করেননি। তার অনুপস্থিতি কারণে ২০১৪ সালের ১৪ নভেম্বর থেকে আজ পর্যন্ত ব্যাংকটির নির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। ব্যাংকের পর্ষদ ও নির্বাহী কমিটিতে কার্যকর ভূমিকা পালনে বাদলের ব্যর্থতার কারণে ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বাদলের বিরুদ্ধে জনস্বার্থ ও আমানতকারীদের জন্য ক্ষতিকর কার্যকলাপ এবং ব্যাংকের যথাযথ ব্যবস্থাপনা ব্যাহত করার অভিযোগ সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর ৪৬ ধারার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে তাকে ২৯ অক্টোবর আইএফআইসি ব্যাংকের পরিচালক পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে।

এ আদেশের তারিখ থেকে আগামী তিন বছর তিনি আইএফআই ব্যাংক বা অন্য কোনো ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর ৪৮(১) ধারার আওতায় গঠিত স্থায়ী কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এ আদেশ দিয়েছেন। আদেশে সংক্ষুব্ধ হলে তিনি উল্লিখিত আইনের ৪৮(২) ধারার আওতায় ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের কাছে আপিল করতে পারবেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নেপালের লোকসানি প্রতিষ্ঠানের (নেপাল-বাংলাদেশ ব্যাংক) কাছ থেকে দুই কিস্তিতে ১২৫ কোটি টাকায় (শেয়ারপ্রতি ২৬০ এবং ২৭৫ নেপালি রূপি) ২৫ হাজার ৩৬৮টি শেয়ার কিনেছে আইএফআইসি ব্যাংক। অথচ লোকসানের কারণে নেপালের ওই প্রতিষ্ঠানটি টানা ১৪ বছর ধরে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে পারছে না।

নেপাল-বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান অবস্থা : ব্যাংকটি ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর প্রথমে ৯৬-৯৭ অর্থ বছরের আগ পর্যন্ত শেয়ার হোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে পারেনি। পরে ৯৬-৯৭ অর্থবছর থেকে ৯৮-৯৯ অর্থবছর পর্যন্ত মাত্র তিন বছর ডিভিডেন্ড দিয়েছে। এরপর লোকসানের কারণে ৯৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত টানা ১৪ বছর ধরে কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি। বর্তমানে নেপালের এ লোকসানি প্রতিষ্ঠানে আইএফআইসি ব্যাংকের শেয়ার ৯ দশমিক ১৮ শতাংশ। বাকি শেয়ার ছিল নেপালি প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু নেপালি উদ্যোক্তাদের একটি অংশ থেকে ব্যাংক এশিয়ার ১৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৭/২০৫৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৫
এসই/আরএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।