ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

শ্রম আইন প্রয়োগের জটিলতা দূর করেছে শ্রম বিধি

ঊর্মি মাহবুব, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০১৫
শ্রম আইন প্রয়োগের জটিলতা দূর করেছে শ্রম বিধি অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ/ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ‘২০১৩ সালে শ্রম আইন-২০০৬ সংশোধিত হলেও প্রয়োগের ক্ষেত্রে জটিলতা দূর হয়েছে শ্রম বিধি প্রণয়নের মধ্য দিয়ে’।

বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানান দেশের বিশিষ্ট শ্রম আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ।



স্বাধীন বাংলাদেশে এটিই প্রথম শ্রম বিধি। সরকারের সহায়তায় চার বছরে শ্রম বিধির খসড়া তৈরির কাজ করেন অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ। গত ১৫ সেপ্টেম্বর শ্রম মন্ত্রণালয়ে সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয় শ্রম বিধি।

এই শ্রম বিধির খসড়া তৈরিতে নানা সমস্যা ও শ্রম বিধির সুফল নিয়ে বাংলানিউজের সাথে কথা বলেন অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ।

২০০৯ সালে শ্রম বিধির তৈরির কাজ শুরু হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০০৬ সালে চার দলীয় জোট শাসনকালে শ্রম আইন পাস হয়। তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ শ্রম আইন পাস হওয়ার সময় সংসদ থেকে ওয়াক আউট করেন। কারণ তারা বুঝতে পেরেছিলেন নতুন শ্রম আইন পাকিস্তান আমলের বিধি অনুসরণ করে তৈরি। তা দিয়ে সুষ্ঠুভাবে শিল্প পরিবেশ বজায় রাখা সম্ভব হবে না। বর্তমান সরকার নির্বাচনী ইশতেহারে শ্রম আইন তৈরি বিষয়টি নিয়ে আসে। সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই শ্রম বিধির কাজে হাত দেয়। যেহেতু আমি শ্রম আইন নিয়ে কাজ করছিলাম তাই সরকারের পক্ষ থেকে শ্রম মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে আমাকে শ্রম বিধি তৈরির কাজটি দেয়া হয়। দেশের প্রতি আমাদের সবারই দায়বদ্ধতা রয়েছে। সেই জায়গা থেকেই আমি কাজটি করেছি।

মাঠে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ আন্দোলনে যতটা সক্রিয় শ্রম বিধি তৈরির ক্ষেত্রে ততটা সক্রিয় ছিলেন না। বরং শ্রম বিধির তৈরির কাজে মালিকদের বেশি সক্রিয়তা উল্লেখযোগ্য ছিলো বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জাফরুল হাসান শরীফ জানান, শ্রম বিধির খসড়া তৈরিতে আমাদের প্রথম ছয় মাস সময় দেয়া হয়। কিন্তু আমরা যখন কাজ করতে নামলাম তখন দেখলাম এত বড় বিষয় যে কিছুতেই এই কাজ ছয় মাসে সম্পন্ন করা সম্ভব না। তখন আমাদের সময় বাড়ানো হয়। আমরা বিভিন্ন পক্ষের সাথে কথা বলেছি। এ সময় শ্রমিকদের কাছ থেকে তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে তারা খুব একটা সচেতন বলে আমার মনে হয়নি। বরং মালিক পক্ষ তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে বার বার আমাদের সাথে বসেছে,কথা বলেছে। এসব বিষয়ে শ্রমিক নেতৃবৃন্দকে আরো সচেতন হওয়া উচিত।

শ্রম বিধি প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান বলেন, আইনে নিয়মের কথা বলা আছে আর বিধিতে বলা আছে কিভাবে সেই নিয়মটা বাস্তবায়ন করতে হবে।

শ্রম বিধি হওয়ার ফলে শ্রমিকদের নিয়োগপত্র সংক্রান্ত জটিলতা দূর হয়েছে। শ্রম আইনে শ্রমিকদের নিয়োগপত্র দান বাধ্যতামূলক করা হলেও সেই নিয়োগপত্র কেমন হবে সে বিষয়ে কোনো কিছু উল্লেখ ছিলো না। ফলে এক এক কারখানা বা প্রতিষ্ঠানে এক এক ফরমে নিয়োগ পত্র দিচ্ছিলো। যা নিয়ে পরে জটিলতা তৈরি হতো। কিন্তু শ্রম বিধিতে নিয়োগপত্র কোন ফরমে দিতে হবে সে বিষয়েও ছক দেয়া আছে। ফলে কারখানার মালিকপক্ষ ইচ্ছে করলেই নিজেদের মতো ফরমে নিয়োগপত্র দিতে পারবে না। সরকারের নিয়ম নীতি মেনেই নিয়োগপত্র দিতে হবে।

অন্যদিকে টার্গেট ভিত্তিক কাজ যেসব কারখানার শ্রমিকরা করতো তারাও আর বঞ্চনার শিকার হবেন না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট শরীফ বলেন, টার্গেট ভিত্তিতে যেসব শ্রমিক গার্মেন্টসে কাজ করতো তারা বেশির ভাগ সময়ই ওভারটাইমের অর্থ থেকে বঞ্চিত হতো। কারণ মালিক এত বেশি পরিমাণে টার্গেট দিতো যে শ্রমিকরা নির্দিষ্ট ৮ ঘন্টা সময়ে টার্গেট পূরণ করতে পারতো না। কিন্তু শ্রম বিধিতে কোন পণ্যের টার্গেট কি পরিমাণ দেয়া যাবে সে বিষয়ে পরিষ্কার করা হয়েছে। ফলে ইচ্ছে করলেই মালিকরা অতিরিক্ত টার্গেট দিয়ে শ্রমিকদের কাজ করাতে পারবেন না।

বোনাস নিয়ে শ্রম আইনের পরিষ্কার কোনো বক্তব্য না থাকার ফলে প্রতি ঈদের আগেই জটিলতার তৈরি হতো মালিক ও শ্রমিক পক্ষের মধ্যে। তবে শ্রম বিধিতে বোনাসের বিষয়ে পরিষ্কার করে বলা আছে যে, দুই ঈদেই শ্রমিকদের বোনাস দিতে হবে এবং এই বোনাসের অর্থ সর্বোচ্চ মূল বেতনের সম পরিমাণ অর্থ হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১৫
ইউএম/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।