ঢাকা: শীতের সন্ধ্যায় চাদর মুড়ি দিয়ে মাটির চুলার পাশে বসে মায়ের আদর মাখা হাতে বানানো ধোঁয়া ওঠা ভাপা পিঠা, চিতই পিঠার স্বাদ-গন্ধ-স্মৃতি অনেকেরই চোখে ভাসে।
পিঠা খাওয়ার এ দৃশ্য গ্রাম বাংলায় আজো দেখা গেলেও যান্ত্রিক নগরে তা প্রায়ই অসম্ভব।
গফরগাঁও’র নুরুল ইসলাম। রামপুরার মোল্লা টাওয়ারের সামনে দু’বছর ধরে ভাপা-চিতই বিক্রি করে আসছেন। শীত উঁকি দিতেই সবজি বিক্রি ছেড়ে ৩ মাসের জন্য ধরেন ভাপা-চিত এর ব্যবসা।
নুরুল ইসলাম বলেন, ১৫ দিন হলো বিক্রি শুরু করছি। বিকেল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিক্রি হয়। বাচ্চা থেকে বুড়ো সবাই ক্রেতা। আড্ডায় মগ্ন তরুণ ক্রেতারাই বেশি পিঠা খায়।
তিনি বলেন, প্রতিদিন ১৫শ‘ থেকে ২ হাজার টাকা বিক্রি হয়। এতে ৫-৬শ’ টাকা লাভ থাকে। এ দিয়ে ছোট্ট সংসার চলে যায়। বিক্রি করি কিন্তু পিঠার আগের মজা নেই।
রিকশাচালক নবী মিয়া জানান, ছোটবেলায় মায়ের বানানো পিঠায় যে স্বাদ ছিল তা যদিও নেই তবু এ দোকানের নিয়মিত ক্রেতা তিনি।
বাড্ডা এলাকায় বেশ কয়েকবছর পিঠা বিক্রি করছেন কুড়িগ্রামের মো. শাহজাহান। ৩ মাস পিঠা বিক্রি করলেও অন্য সময় ভ্যান গাড়িতে বিক্রি করেন শিশুদের পোশাক।
শাহজাহান জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর পিঠা বিক্রি অনেকটাই কম। কয়েক প্রকার ভর্তা ছাড়া ক্রেতারা খেতে চায় না। শীত বাড়লে পিঠা বিক্রিও বাড়বে বলেও জানান তিনি।
আবুল হোটেলের সামনে নিজে দু’টো খেয়ে বাসার জন্য চারটা ভাপা পিঠা নিলেন আজাদ। তিনি বলেন, বাসায় স্ত্রী ও ছেলেরা ভাপা পিঠা পছন্দ করে। বাসায় বানানোর ব্যবস্থা নেই তাই এখান থেকেই কিনে নেই।
তিনি বলেন, গ্রামে যেতে পারি না অনেক বছর। গ্রামে শীতের রাতে খাওয়ার মজাই আলাদা। বাসায় বানানোর ব্যবস্থা নেই। বাধ্য হয়ে কিনে নিতে হয়।
রাজধানীর বেশকিছু এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শীত আসতে না আসতেই বসেছে অস্থায়ী পিঠার দোকান। অল্প পুঁজি আর পরিশ্রম কম বলে নারী-পুরুষ অনেকেই এ মৌসুমি ব্যবসায় নেমেছেন। চিতই পিঠার সঙ্গে থাকছে কয়েক রকম প্রকার ভর্তা। বিকেল থেকে রাত অবধি সেসব দোকানে আসছেন ক্রেতারা। গল্পের ছলে খাচ্ছেন ভাপা-চিতই। শীত যত বাড়বে বিক্রিও তত বাড়বে।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৫
আরইউ/এমজেএফ