ঢাকা: নানা কারণে ব্যবসায়ীদের ঋণের চাহিদা না থাকায় ব্যাংকগুলোতে প্রচুর পরিমান অলস টাকা (উদ্বৃত্ত তারল্য) জমে আছে। এ কারণে ঋণ ও আমানতের সুদহার কমানো হচ্ছে।
টাকার অংকে অলস তারল্যের পরিমান প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা। এ টাকার বিপরীতে গ্রাহকদের গড়ে ৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ হারে সুদ প্রদান করলেও তেমন আয় হচ্ছে না ব্যাংকগুলোর। তবে এসব টাকার একটি অংশ সরকারি খাতের বিভিন্ন বন্ড ও বিলে বিনিয়োগ করা রয়েছে।
এর মধ্যে সাড়ে ১১ শতাংশ সুদে দুই-তিন বছর মেয়াদী আমানত রয়েছে ৩ হাজার ২১ কোটি টাকা। তিন বছরের বেশি মেয়াদী আমানতের পরিমাণ ২ হাজার ৮৭৫ কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোর কাছে ১৩ দশমিক ৭৬ থেকে ১৪ শতাংশ সুদে তিন বছরের বেশি মেয়াদী আমানত রয়েছে ১৪৩ কোটি টাকা। ১৩ দশমিক ৫১ থেকে ১৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে তিন বছরের বেশি মেয়াদী আমানতের পরিমাণ ১ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা।
এছাড়া ১৩ দশমিক ২৬ থেকে ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ সুদের দুই-তিন বছর মেয়াদী আমানত রয়েছে ১১০ কোটি টাকা ও তিন বছরের বেশি মেয়াদী আমানত ৯৬৯ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসে ব্যাংকগুলো গড়ে ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ সুদে আমানত নিয়েছে। যা আগস্ট শেষে ছিল ৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ। তার আগের মাস জুলাইয়ে আমানত নিয়েছিলো ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ সুদে। তার আগের মাসে (জুন) আমানতে গড় সুদ ছিল ৬ দশমিক ৮০ শতাংশ।
অন্যদিকে, সেপ্টেম্বরে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে ১১ দশমিক ৪৮ শতাংশ সুদে। যা আগের মাস আগস্টে ছিল ১১ দশমিক ৫১ শতাংশ সুদে। এর আগের মাস জুলাইয়ে সুদহার ছিল ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। আর তার আগের মাসে (জুন) ঋণ বিতরণ করেছিল ১১ দশমিক ৬৭ শতাংশ সুদে। অর্থাৎ আমানতের পাশাপাশি ঋণের সুদহারও কমছে। এতে করে ঋণ ও আমানতের মধ্যকার সুদহারের ব্যবধান কমে সেপ্টেম্বরে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৮২ শতাংশীয় পয়েন্ট। যা আগের মাস আগস্টে ছিল ৪ দশমিক ৭৭ শতাংশীয় পয়েন্ট। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে স্প্রেড কিছুটা বেড়েছে। তবে এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশিত ৫ শতাংশীয় পয়েন্টের মধ্যেই রয়েছে। জুলাই মাসে যা ৪ দশমিক ৭৯ শতাংশীয় পয়েন্টে ছিল। আর গত জুন মাসে ছিল ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশীয় পয়েন্টে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে, ব্যাংকের স্প্রেড ৫ শতাংশীয় পয়েন্টের মধ্যে সীমিত রাখতে বলা হয়েছে। গত আগস্টে সামগ্রিক ব্যাংক খাতের স্প্রেড নির্দেশিত মাত্রায় থাকলেও ২১টি ব্যাংকের ক্ষেত্রে তা এখনও ৫ শতাংশীয় পয়েন্টের উপরে রয়েছে। এই তালিকায় রয়েছে- বেসরকারি খাতের ১৫টি ও বিদেশি মালিকানার ৬টি ব্যাংক। বেসরকারি খাতের বেশিরভাগ ব্যাংকের স্প্রেড ৫ শতাংশীয় পয়েন্টের কাছাকাছি থাকলেও বিদেশি ব্যাংকগুলোর রয়েছে বেশ উপরে।
সেপ্টেম্বরে রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলোর স্প্রেড আরও কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৫৭ শতাংশীয় পয়েন্টে। যা আগের মাসে ছিল ৩ দশমিক ৬০ শতাংশীয় পয়েন্টে। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর স্প্রেড আগের মাসের ২ দশমিক ১৫ শতাংশীয় পয়েন্ট থেকে বেড়ে ২ দশমিক ২৫ শতাংশীয় পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর গড় স্প্রেড সামান্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ০৬ শতাংশীয় পয়েন্ট। আর বিদেশি ব্যাংকগুলোর স্প্রেড ৭ দশমিক ৬১ শতাংশীয় পয়েন্ট থেকে নেমে হয়েছে ৭ দশমিক ৬০ শতাংশীয় পয়েন্ট।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ আমানত অনুপাতের (এডিআর) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি বছরের ২৭ আগস্ট পর্যন্ত ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে ৭ লাখ ৬৩ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করেছে। আগস্টে আমানতের বিপরীতে গড় সুদহার ছিল ৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ। ব্যাংকগুলো সংগৃহীত আমানতের বিধিবদ্ধ জমা সংরক্ষণ (এসএলআর) ও নগদ জমা সংরক্ষণ (সিআরআর) বাবদ ১৯ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখতে হয়। বাকি ৮১ শতাংশ আমানত ঋণ দিতে পারে যে কোনো ব্যাংক।
এডিআর প্রতিবেদনে দেখা যায়, ব্যাংকগুলো সংগৃহীত আমানতের ৬৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ অর্থাৎ ৫ লাখ ৪৭ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা ঋণ দিতে পেরেছে। ঋণের বিপরীতে সুদ নিয়েছে ১১ দশমিক ৫১ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ। অন্যদিকে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে হয়েছে ১১ দশমিক ৬২ শতাংশ। হিসাব অনুযায়ী, ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ আমানত অলস পড়ে আছে।
বাংলাদেশ সময়:০৮৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৫
এসই/আরএম