ঢাকা: আইন অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিয়োগ দিতে না পারায় পুঁজিবাজারের তালিকাভূক্ত জীবন বিমা কোম্পানি পদ্মা ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের সব সদস্যকে জরিমানা গুণতে হবে। জরিমানা পরিশোধ না করলে কোম্পানির নিবন্ধন সনদ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেবে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
প্রতিষ্ঠানটিতে উদ্যোক্তা পরিচালক, নিরপেক্ষ পরিচালক ও শেয়ার গ্রহীতা পরিচালক হিসেবে মোট ২০ জন পরিচালক রয়েছেন। এরমধ্যে শেয়ার গ্রহীতা পরিচালক চার জন ও নিরপেক্ষ পরিচালক চার জন। এই আট জন নিয়ে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যানসহ প্রতিষ্ঠানটির ২০ জন পরিচালকের প্রত্যেককে ব্যক্তিগতভাবে এক লাখ টাকা করে মোট ২০ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে।
সিইও নিয়োগে কার্যত দীর্ঘসূত্রিতা ও অবহেলা দেখিয়ে আইন লঙ্ঘন করায় চলতি বছরের ১ এপ্রিল এক শুনানির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটিকে এ জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেয় আইডিআরএ। এরপর ২৮ মে চিঠি দিয়েও পদ্মা লাইফ ইন্স্যুরেন্সকে বিষয়টি অবহিত করে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
ওই চিঠি পাওয়ার পর ৭ জুন এক চিঠির মাধ্যমে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা জরিমানা মওকুফের জন্য আইডিআরএ বরাবর আবেদন করেন।
সে আবেদনের পর ১১ অক্টোবর পাল্টা চিঠির মাধ্যমে আইডিআরএ পদ্মা লাইফের পরিচালকদের জানিয়ে দেয়, জরিমানা মওকুফের সুযোগ নেই। সেইসঙ্গে আবারও জরিমানা পরিশোধের নির্দেশ দেয়। এরপর ১৯ অক্টোবর আবারও জরিমানা মওকুফের জন্য আবেদন করে পদ্মা লাইফ ইনস্যুরেন্সের পরিচালনা পরিষদ।
আইডিআরএ সূত্র জানায়, একবার জরিমানা মওকুফ করা হবে না বলে জানানোর পরও পদ্মা লাইফের পরিচালকরা দ্বিতীয় দফায় আবেদন করেছেন। তবে এ দফায়ও প্রতিষ্ঠানটির আবেদন গ্রহণ করা হবে না।
শিগগির আইডিআরএ থেকে এ বিষয়ে পদ্মা লাইফের পরিচালকদের চিঠি দেওয়া হবে। ওই চিঠিতে জরিমানা পরিশোধের জন্য সাত দিন সময় দেওয়া হবে। এ নির্দেশ লঙ্ঘন করলে বিমা আইন ২০১০’র ১০ ধারা অনুযায়ী পদ্মা লাইফের নিবন্ধন সনদ স্থগিত অথবা বাতিল করা হবে বলে জানায় আইডিআরএ’র সূত্রটি।
সূত্রটি আরও জানায়, সিইও নিয়োগে পদ্মা ইসলামী লাইফ বিমা আইন, ২০১০’র ৮০(৪) ধারা ও ‘বিমা কোম্পানি (মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ) প্রবিধানমালা, ২০১২’ লঙ্ঘন করেছে।
এ জন্য প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষকে গত ১ এপ্রিল শুনানিতে ডাকা হয়। ওই শুনানিতে জরিমানার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একইসঙ্গে ১ মে’র মধ্যে সিইও নিয়োগ দেওয়া না হলে প্রতিদিন পাঁচ হাজার টাকা করে জারিমানা করা হবে বলে জনিয়ে দেওয়া হয়।
সূত্রটি জানায়, পদ্মা ইসলামী লাইফ’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদটি ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ থেকে শূন্য রয়েছে। যে কারণে আইনের বাধ্যবাধকতা উল্লেখ করে ২০১৪ সালের ৫ মে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য পদ্মা ইসলামী লাইফকে চিঠি দেয় আইডিআরএ।
এরপরও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ না করায় একই বছরের ১৪ ডিসেম্বর এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। ১৪ ডিসেম্বরের ওই চিঠির প্রেক্ষিতে ১৭ ডিসেম্বর এক চিঠির মাধ্যমে পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদ পূরণ করার আশাবাদ ব্যক্ত করে পদ্মা লাইফ।
এরপর চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে মোহাম্মদ ওয়াসিউদ্দিন’র অনুমোদন চেয়ে চিঠি দেয় প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু যোগ্যতা না থাকায় মোহাম্মদ ওয়াসিউদ্দিনের নিয়োগও অনুমোদন হয়নি।
এরপর চার মাস পেরিয়ে গেলেও যোগ্যতাসম্পন্ন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ না দেওয়ায় পদ্মা লাইফের পরিচালনা পর্ষদের সকল সদস্যকে বিমা আইন ২০১০’র ১৩৪ ধারা অনুযায়ী জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেয় আইডিআরএ।
যোগাযোগ করা হলে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, পদ্মা ইসলামী লাইফের পরিচালনা পর্ষদ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে দীর্ঘসূত্রিতা ও অবহেলা করেছে। যা কোম্পানির শেয়ার এবং পলিসি হোল্ডারদের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য উদ্বেগজনক। এ জন্য পরিচালকদের জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ জরিমানা মওকুফের কোনো সুযোগ নেই।
বিমা আইন ২০১০’র ৮০(৪) ধারায় অনুযায়ী, বিমা কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদ তিন মাসের বেশি শূন্য রাখা যাবে না। তবে অপরিহার্য পরিস্থিতি বিবেচনা করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এ সময় আরও তিন মাস বাড়াতে পারবেন।
পদ্মা লাইফে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদটি খালি পড়ে আছে প্রায় দেড় বছর ধরে। এক্ষেত্রে আইন লঙ্ঘন করায় গত এপ্রিলে কোম্পানিটির চেয়ারম্যানসহ প্রত্যেক পরিচালককে জরিমানা করার সিদ্ধান্ত জানানোর পর প্রায় সাত মাস পেরিয়ে গেলেও এ সংকটের কোনো সুরাহা হয়নি। এ বিষয়ে গত ২ নভেম্বর ‘সিইও সংকটে পদ্মা লাইফ’ শীর্ষক শিরোনামে বাংলানিউজে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪২ ঘণ্ট, নভেম্বর ১০, ২০১৫
এএসএস/এইচএ