ঢাকা: চলতি মৌসুমে শিগগিরই মাঠে অবমুক্ত হতে যাচ্ছে উন্নত আট জাতের আলু। এই আট জাতের মধ্যে দেশি দুটি জাত রয়েছে যেগুলো দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করে রাখা যাবে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নতুন এই আট জাতের আলু দেশের মোট আলুর উৎপাদনে আরও শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে।
গত অক্টোবর মাসের মাঝামাঝিতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বার্ক) এর কারিগরি কমিটির সভায় এই আট জাতের আলু অবমুক্তের অনুমোদন মিলেছে।
এখন কৃষি মন্ত্রণালয়ের জাতীয় বীজ কমিটির অনুমোদন পেলেই মাঠ পর্যায়ে নতুন জাতের এসব আলু চাষিরা চাষাবাদ শুরু করতে পারবেন। ওই সময়ে নামকরণও করা হবে।
বার্ক’র নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. আবুল কালাম আযাদ ওই কারিগরি কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, একেবারে সময় উপযোগী নতুন এই আট জাতের আলু মাঠ পর্যায়ে গেলে চাষিরা অনেক ভালো ফলন পাবেন।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে উৎপাদিত আলুর মূল চ্যালেঞ্জ হলো অনেক দিন ধরে সংরক্ষণ করে রাখা। নতুন জাতের মধ্যে দেশি একটি জাত রয়েছে যা দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষণ করে রাখা যায়। কমিটিতে মোট ১২টি নতুন জাতের আলুর অনুমোদন চাওয়া হয়। এরপর যাচাই করে আটটি জাত নির্বাচন করা হয়।
বারি’র কন্দাল ফসল গবেষণা কেন্দ্র’র পরিচালক ও আলু গবেষক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘ চার বছর গবেষণা ও মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পাদন করার পরেই এসব নতুন জাতের আলুর অনুমোদন চাওয়া হয়।
তিনি জানান, সাধারণত কারিগরি কমিটির সভার এক মাসের মধ্যেই বীজ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ হিসাবে কিছুদিনের মধ্যেই নতুন জাতের এসব আলু অবমুক্ত হতে যাচ্ছে। আট জাতের আলুর দুটি নিজস্ব, বাকি ছয়টিই হল্যান্ডের।
বারি সূত্র জানায়, বারিতে এ পর্যন্ত ৬৩টি জাতের আলু রয়েছে। এরমধ্যে বারির নিজস্ব ১১টি জাত রয়েছে। বাকিগুলো বেসরকারি উদ্যোগে বিদেশ থেকে আনা বিভিন্ন জাতের আলু। বেরসরকারিভাবে বিভিন্ন জাতের আলু নিয়ে এসে বারি’কে দেয়া হয়। এরপর বারি’র পক্ষ থেকে গবেষণা চালিয়ে নতুন জাতের আলু হিসেবে অনুমোদন দেয়া হয়।
দেশে উৎপাদিত আলুর মধ্যে শতকরা ৯৮ ভাগই হলান্ডের। এর পাশাপাশি ফ্রান্স, জার্মানীসহ আরো কিছু দেশের আলু দেশে চাষাবাদ হয়। বিভিন্ন জাতের আলুর মধ্যে ডায়ামেন্ট ৫০ ভাগ, কার্নিডাল ২০ ভাগ, এসস্টিক্স ১৬ ভাগ, গ্রানুলা ৬ থেকে সাত ভাগ চাষাবাদ হয়।
নতুন জাতের আলুর গুণাগুণ: দেশি দুই জাতের আলুর মধ্যে একটি জাত সংরক্ষণের জন্য খুবই ভালো। প্রাকৃতিক স্টোরেজে সাত মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করে রাখা যাবে। হেক্টর প্রতি ফলন ৪০ টনের ওপর। অন্যটিও প্রায় একই রকম।
এছাড়া বিদেশি জাতেরও এসব গুণাগুণ আছে। তবে সংরক্ষণের দিক দিয়ে কিছুটা কম। এই নতুন জাতের আলু বর্তমানে চাষাবাদ হওয়া আলুর চেয়ে অনেক দিক দিয়ে ভালো। রপ্তানির গুণাগুণও ভালো। প্রতিটি জাতেরই হেক্টরপ্রতি ৩০ টনের ওপর ফলন হবে। এগুলোর রোগপ্রতিরোধ, ভাইরাস প্রতিরোধক ক্ষমতা আছে।
নতুন জাতের আলু অবমুক্ত হলে বারি’র উদ্ভাবিত আলুর জাতের সংখ্যা দাঁড়াবে ৭১টিতে। নিজস্ব সংখ্যা দাঁড়াবে ১৩’তে।
বাংলাদেশ সময়: ১২০১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৫
একে/জেডএম