ঢাকা: আমদানি বন্ধ নয়, সামুদ্রিক মাছ আহরণ বাড়ানোর জন্য কাজ করছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে আগামী ২০ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলন করবেন মন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হক।
সামুদ্রিক মাছ আমদানি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মৎস্য অধিদফতর। গত ১৮ নভেম্বর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এক সভায় তা চূড়ান্ত হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে সংবাদ মাধ্যমে।
এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে আমদানিকারকদের সংগঠন- বাংলাদেশ ফিস ইম্পোটার্স অ্যাসোসিয়েশন। তারা সামুদ্রিক মাছ আমদানি বন্ধ করতে মৎস্য অধিদফতরের নেওয়া সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে।
সংগঠনটির সভাপতি আশরাফ হোসেন মাসুদ ১৫ নভেম্বর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রীকে দেওয়া এক চিঠিতে সামুদ্রিক মাছ আমদানি বন্ধ করার পরিবর্তে এর মান যাচাই করতে সরকারি ল্যাবে পরীক্ষা করে স্থানীয় বাজারে ছাড়ার দাবি জানান।
চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, সামুদ্রিক মাছ আমদানি বন্ধ হলে বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। বেড়ে যাবে দেশের মাছের দাম। এতে ‘সরকারবিরোধী মনোভাব’ সৃষ্টি হতে পারে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালায়ের উপ সচিব (মৎস্য-১) মো: সফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে সামুদ্রিক মাছ আমদানি বন্ধের বিষয়ে কথা হয়েছে। কিন্তু এটার পক্ষে-বিপক্ষে মত থাকায় কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি’।
তিনি বলেন, ‘সামুদ্রিক মাছ আমদানি বন্ধের বিষয়টি বিতর্কিত ও গবেষণার বিষয়। হুট করেই এটা বন্ধ করা যাবে না। মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে আমদানি করা সামুদ্রিক মাছে রোগ-জীবানু বহন করে কি-না, এগুলোর মান পরীক্ষার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে কিভাবে সামুদ্রিক মাছ আহরণ বাড়ানো যায়- সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ’
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) মোস্তাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, এ বিষয়ে ২০ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানাবেন মন্ত্রী।
আমদানি করা সামুদ্রিক মাছ নিম্নমানের, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর দাবি করে আমদানি নিয়ন্ত্রণের আবেদন করে বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএফএ)। যার পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আইআইটি) মনোজ কুমার রায়ের সভাপতিত্বে সংশ্লিষ্ট সব সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠকও হয়েছে।
এতে আবেদনকারী সংগঠন ছাড়াও উপস্থিত এ্যানিমেল হেলথ কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রতিনিধি মোমিন উদ দৌলা, সিসিআইইঅ্যান্ড’র প্রতিনিধি একেএম মাহমুদুল হাসান, মৎস্য অধিদফতরের প্রতিনিধি নিত্য রঞ্জন বিশ্বাস, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ড. মোয়াজ্জেম হোসেন, ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের মাকসুদুর রহমান ও বিনিয়োগ বোর্ডের প্রতিনিধি ড. নূরুল আলম সামুদ্রিক মাছ আমদানি বন্ধের বিপক্ষে মত দেন।
ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ‘আমদানিকৃত মৎস্য ক্ষতিকর অনুজীব, ক্লোরামফেনিকল ও নাইট্রোফিউরান, এন্টিবায়োটিকসহ ক্ষতিকর হরমোন, হেভি মেটাল ও রাসায়নিক পদার্থ মুক্ত হতে হবে এবং রফতানিকারক দেশের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আমদানিকৃত চালানের সঙ্গে এমন সনদ থাকতে হবে যে, এই মাছ বা মাছজাতীয় পণ্যে মানব স্বাস্থ্যের ক্ষতিকারক কোনো উপাদান নেই’। যা পরবর্তীতে ২৩ সেপ্টম্বর গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।
এদিকে, মৎস্য অধিদফতরের তথ্য মতে, দেশের মোট প্রোটিন চাহিদা পূরণ করতে প্রয়োজন ৪৫ লাখ মেট্রিক টন মাছ। এর বিপরীতে যোগান আছে ৩৫-৩৬ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে আমদানি হয় ৪০-৬০ হাজার মেট্রিক টন। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে মাছ আমদানি হয় ৪১ হাজার ৬২৭ মেট্রিক টন আর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মাছ আমদানি হয় ৫৭ হাজার ৩১০ মেট্রিক টন।
তা সত্ত্বেও মৎস্য অধিদফতরের ‘সামুদ্রিক মাছ আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্ত’ অযৌক্তিক মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এ অযৌক্তিকতার কারণেই মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ০০২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০১৫
এসইউজে/এএসআর