ঢাকা: চলতি বছরের প্রথম নয় মাস শেষে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত অধিকাংশ ব্যাংকের মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে। আর বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর সময়ে ৩টি বাদে সবক’টি ব্যাংক মুনাফা করেছে।
তৃতীয় প্রান্তিকে মুনাফা করতে না পারা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আইসিবি ইসলামী ব্যাংক লোকসানি (প্রবলেম) ব্যাংকের তালিকায় রয়েছে। বাকি দু’টির মধ্যে প্রিমিয়ার ব্যাংকের লোকসান হয়েছে ১২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা এবং রূপালী ব্যাংকের লোকসান ৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে তৃতীয় প্রান্তিকে প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন (অনীরিক্ষিত) পাওয়া গেছে ২৭টির। এর মধ্যে চলতি বছরের প্রথম নয়মাসে আগের বছরের তুলনায় কর পরবর্তী নিট মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮টি ব্যাংকের। ৮টি ব্যাংকের মুনাফা আগের বছরের তুলনায় কমেছে।
আর একটি ব্যাংক (আইসিবি ইসলামী) রয়েছে লোকসানির তালিকায়। তবে এ ব্যাংকটির লোকসান আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কমেছে। প্রতিষ্ঠানটির ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে লোকসান ছিল ৩৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা। যা চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে কমে হয়েছে ১৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
মুনাফা কমার তালিকায় থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে- ব্র্যাক ব্যাংক, এবি ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, সোসাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল), রূপালী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও মার্কেন্টাইল ব্যাংক।
তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মুনাফার প্রবৃদ্ধিতে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে ওয়ান ব্যাংক। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে প্রতিষ্ঠানটির কর পরবর্তী নিট মুনাফা হযেছে ১৪৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৭২ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটির মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯৮ শতাংশের বেশি।
আর চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে সবচেয়ে বেশি মুনাফা করেছে ইউসিবি ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা হয়েছে ২৫৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে শেষ তিন মাসের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) মুনাফা ৪৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। আগের বছরে প্রথম নয় মাসে ব্যাংকটির মুনাফা ছিল ২৩৭ কোটি এক লাখ টাকা। অর্থাৎ চলতি বছরে মুনাফার প্রবৃদ্ধির হার সাড়ে ৭ শতাংশ।
এদিকে তৃতীয় প্রান্তিকে সবচেয়ে বেশি মুনাফা করেছে সিটি ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটি তৃতীয় প্রান্তিকে মুনাফা করেছে ৮৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা। আর বছরের প্রথম নয় মাসে ব্যাংকটির মুনাফা হয়েছে ২৩০ কোটি ২৫ লাখ টাকা। আগের বছরে যা ছিল ১২৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ মুনার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭৭ শতাংশ।
বছরের প্রথম নয় মাসে শেয়ার প্রতি আয়ের (ইপিএস) দিক দিয়ে শীর্ষে রয়েছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৮ টাকা ৮১ পয়সা। আর কর পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ১৭৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা। যা আগের বছরে একই সময়ে ছিল ১৪৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ মুনাফার প্রবৃদ্ধির হার ২১ শতাংশ।
এদিকে বছরের প্রথম নয় মাসের মুনাফায় প্রবৃদ্ধি থাকলেও তৃতীয় প্রান্তিকে ৩টি ব্যাংকের মুনাফা আগের বছরের তুলনায় কমেছে। এর মধ্যে প্রাইম ব্যাংক তৃতীয় প্রান্তিকে মুনাফা করেছে ২৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৪২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। চলতি বছরে নয় মাসে প্রতিষ্ঠানটির কর পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ২৪৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। যা আগের বছরে ছিল ১৪৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।
তৃতীয় প্রান্তিকে ট্রাস্ট ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে ৪২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। যা আগের বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ছিল ৫৫ কোটি ৯ লাখ টাকা। আর চলতি বছরের নয় মাসে ব্যাংকটির মুনাফা হয়েছে ১৪২ কোটি ৩০ লাখ টাকা। যা আগের বছরে একই সময়ে ছিল ৯৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
অন্য ব্যাংকটি হলো শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক। তৃতীয় প্রান্তিকে এই প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা হয়েছে ২৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা। যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৮১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মির্জা আজিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ব্যাংকগুলো বেশি মুনাফা করে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে। যে ব্যাংকগুলোর প্রবৃদ্ধি হয়নি সেগুলোর ঋণ বিতরণ কমে গেছে। এ ব্যাংকগুলো ঋণের প্রবাহ বাড়াতে না পারলে সুফল পাওয়া যাবে না। আর যে ব্যাংকগুলোর মুনাফায় প্রবৃদ্ধি আছে সেগুলো হয়তো পৃথকভাবে ভালো করেছে। তবে সার্বিকভাবে ব্যাংকের ঋণের প্রবাহ কমে গেছে। যার নেতিবাচক প্রভাবও দেখা যাচ্ছে শেয়ারবাজারে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. বখতিয়ার হাসান বলেন, ব্যাংকের মুনাফা বৃদ্ধি পাওয়া শেয়ারবাজারের জন্য ভালো সংবাদ। তবে ব্যাংকিং খাতের সার্বিক চিত্র খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই। অনেক ব্যাংকের বড় অঙ্কের ঋণখেলাপি রয়েছে। যে ব্যাংকগুলো ভালো মুনাফা করেছে সেগুলো পৃথকভাবে বিশ্লেষণ করে দেখা উচিত। তাহলে বোঝা যাবে তারা কোন খাতে ভালো করেছে।
ব্যাংকের মুনাফা ও ইপিএস’র চিত্র
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০১৫
এএসএস/এএসআর