ঢাকা: রাজস্ব আদায়ের সম্ভাব্য ক্ষেত্র হিসেবে এবার উপজেলার দিকে নজর দিচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। করজাল বৃদ্ধিতে এনবিআরের পরিকল্পনায় উপজেলাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
চলতি অর্থবছরের বাজেটের পর উপজেলা করজাল ও জরিপ বৃদ্ধি করতে নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে এনবিআর।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের একটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পর কর অফিস স্থাপন বিষয়ে কাজ শুরু করেছে এনবিআর। ইতোমধ্যে মাঠ প্রশাসনকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, উপজেলায় সক্ষম করদাতা থাকলেও অনেকে কর দেন না। শহরের চেয়েও বেশি কর দিতে সক্ষম অনেকে এর বাইরে থেকে যান। ফলে রাষ্ট্রীয় সুবিধা বঞ্চিত হন তারা।
সূত্র জানায়, বর্তমানে ৬২ উপজেলায় কর অফিস রয়েছে। সেগুলোতেও অধিকাংশ করযোগ্য ব্যক্তি ই-টিআইএন নিচ্ছেন না। নিলেও কর দিচ্ছেন না। জরিপ আর মাঠ প্রশাসনের তদারকির অভাবে অনেকে রয়ে যাচ্ছেন এর আওতার বাইরে। এখানে জরিপের মাধ্যমে ‘ন্যূনতম’ কর দিতে সক্ষম ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার নির্দেশনা দিয়েছে এনবিআর।
উপজেলায় করদাতাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও করজাল বাড়ানোর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবারই প্রথম ৮৬টি উপজেলায় করমেলার আয়োজন করে। এর মধ্যে ২৯ উপজেলায় দু’দিন ও ৫৭ উপজেলায় একদিন মেলা হয়। মেলায় অভূতপূর্ব সাড়া দেন করদাতারা।
এনবিআর করদাতা শনাক্ত ও করের আওতা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতি বাজেটে নানা পদক্ষেপ নিলেও তা তেমন সফল হয় না। পদক্ষেপ শহরকেন্দ্রিক হলেও উপজেলা (গ্রাম পর্যন্ত) পর্যায়ে নেওয়া হয় না।
উপজেলা পর্যায়ে বহু ছোট-বড় কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ কর আদায়ের অনেক উৎস থাকলেও তা থেকে কর আদায় সম্ভব হয় না। এসব বিবেচনা ও করদাতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উপজেলায় কর অফিস করা হবে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, মুক্তবাজার অর্থনীতির ফলে শহর ও গ্রামের দূরত্ব কমে এসেছে। গ্রামে সক্ষম করদাতার সংখ্যা বেড়েছে। তাই উপজেলাকেন্দ্রিক করদাতা শনাক্তে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
সূত্র জানায়, উপজেলায় ই-টিআইএন নিবন্ধন ও রিটার্ন দাখিল করেছেন অনেক করদাতা। সময় বৃদ্ধির আবেদনও ছিল তাদের মধ্যে।
এনবিআর কর্মকর্তারা জানান, সব উপজেলায় কর অফিস স্থাপন হলে আগামী অর্থবছরে করদাতার সংখ্যা ৫০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। সেজন্য আগামী অর্থবছর থেকে উপজেলা পর্যন্ত করদাতা সম্মাননা দেওয়া হবে।
সূত্র জানায়, সরকার সংসদ সদস্যদের কাছে ‘করজাল’ বাড়ানোর অভিমত চাইলে সংসদ সদস্যরা শহরের পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়েও মানুষকে নূন্যতম করের আওতায় আনার পরামর্শ দেন।
তাদের পরামর্শ, শহরে তদারকির ফলে করদাতা কিছুটা হলেও বাড়ে। কিন্তু উপজেলা পর্যায়ে তদারকির অভাবে অনেক করদাতা করজালের বাইরে থেকে যান।
সংসদ সদস্যরা সব উপজেলায় কর অফিস স্থাপনের পরামর্শ দেন। তাদের এ অভিমতের ভিত্তিতে সব উপজেলায় কর অফিস স্থাপন করা হবে বলে ইতোমধ্যে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, আমরা গ্রাম পর্যায় থেকে কর পাচ্ছি না। এজন্য সংসদ সদস্যরা সব উপজেলায় কর অফিস স্থাপনের পরামর্শ দিয়েছেন। বর্তমানে ৬২টি উপজেলায় কর অফিস রয়েছে। শিগগিরই আরো একশ’টি উপজেলায় কর অফিস স্থাপন করা হবে। এভাবে ২০১৮ সালের মধ্যে সব উপজেলায় কর অফিস স্থাপন করা হবে। কারণ, উপজেলা কর আদায়ের একটি ক্ষেত্র হয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, উন্নয়নের সমতার জন্য বর্তমানে উপজেলা আর শহরের মধ্যে পার্থক্য নেই। বরং এ কয়েক বছরে শহরের চেয়ে উপজেলায় সক্ষম করদাতার সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। আমরা জরিপ করছি। দু’এক বছরের মধ্যে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় হবে। তাই আমরা বাড়তি নজর দিচ্ছি উপজেলায়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, প্রথমবারের মতো উপজেলায় আয়োজিত করমেলায় করদাতারা ব্যাপক সাড়া দিয়েছেন। আগামী বছর সব উপজেলায় মেলা করা হবে।
তিনি বলেন, উপজেলাগুলো অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আরো একটি করের সম্ভাব্য ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। কর অফিস স্থাপন, করমেলা আয়োজন আর স্থানীয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে সেখানে কর আদায়ের চেষ্টা করা হচ্ছে।
চেয়ারম্যান আরও বলেন, স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীসহ জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে অর্থনৈতিক সম্ভাবনাময় উপজেলায় সভা করবো। কিছুদিনের মধ্যে কেরানীগঞ্জ থেকে শুরু হবে, এরপর চট্টগ্রাম। ক্রমান্বয়ে সারাদেশে সভা হবে। এতে উপজেলা করদাতাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হবে।
তিনি বলেন, শুধু কর অফিস নয়, বড় ও সম্ভাবনাময় উপজেলায় বড় অফিস স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছে এনবিআর। এর মাধ্যমে করজাল বিস্তৃত হবে, বাড়বে রাজস্ব।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৫/আপডেট: ০৭৫৫
আরইউ/জেডএস/এএসআর