ঢাকা: খেলাপি ঋণ বাড়ার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে বড় বড় শিল্প গ্রুপের ঋণ পরিশোধ না করা। একটি শিল্প গ্রুপ বড় অংকের ঋণ পরিশোধ না করলেই ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে যায় হাজার কোটি টাকার বেশি।
হাজার কোটি টাকার উপরে ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের পরিমাণ ২০টির বেশী। এসব প্রতিষ্ঠানে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর দেওয়া দেড়লাখ কোটি টাকার ঋণ কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। ঋণ কেন্দ্রীভূত হওয়া ঠেকাতে বড় বড় শিল্প গ্রুপের ঋণগুলো কঠোরভাবে তদারকি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী বলেন, আমাদের দেশে বড় একটি করপোরেট প্রতিষ্ঠানকেই ঋণ সুবিধা দিয়েছে প্রায় সবগুলো ব্যাংক। এতে প্রতিষ্ঠানটি ব্যর্থ হলে পুরো ব্যাংকিং খাতেই ধস নামে। এ ধরনের ঝুঁকি নিরসনে ব্যাংকগুলোকে ঋণ বিতরণের সঠিক বিন্যাস করা উচিত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ পাঁচ লাখ ৩৬ হাজার ১শ ৪৭ কোটি টাকা। এরমধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামকেন্দ্রীক শীর্ষ ২০ গ্রুপের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ঋণ রয়েছে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের প্রায় ২৮ শতাংশ।
প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের পরিমাণ- এস আলম গ্রুপ ১৭ হাজার কোটি, বেক্সিমকো গ্রুপ আট হাজার ৬শ কোটি, থার্মেক্স গ্রুপ ছয় হাজার ৭শ কোটি, নূরজাহান গ্রুপ দুই হাজার ৭শ কোটি, র্যাংগস গ্রুপ দুই হাজার ৫শ কোটি, প্যাসিফিক গ্রুপ দুই হাজার ৫শ কোটি, পারটেক্স গ্রুপ দুই হাজার কোটি, সামিট গ্রুপ এক হাজার আট কোটি, আবুল খায়ের গ্রুপ এক হাজার ৭শ কোটি, সানমুন স্টার গ্রুপ এক হাজার ৬শ কোটি, মোস্তফা গ্রুপ এক হাজার ৬শ কোটি, এমইবি গ্রুপ এক হাজার ৫শ কোটি, আবদুল খালেক গ্রুপ এক হাজার কোটি, ওয়েস্টকোস্ট গ্রুপ এক হাজার ৫শ কোটি, সিটি গ্রুপ এক হাজার ৫শ কোটি, এইচআর গ্রুপ এক হাজার ৫শ কোটি, গাজী গ্রুপ এক হাজার কোটি, আবদুল মোমেন গ্রুপ এক হাজার কোটি টাকা। এসব গ্রুপের প্রত্যক্ষ ঋণের পরিমাণ প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা।
এদের মধ্যে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ঋণ মিলিয়ে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ রয়েছে দুইটি শিল্প গ্রুপ, পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ রয়েছে তিনটি শিল্প গ্রুপ, দুই হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ রয়েছে ৬টি গ্রুপ ও এক হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ রয়েছে ৯টি গ্রুপের কাছে।
এছাড়া তাদের কাছে পরোক্ষ ঋণ যেমন- এলটিআর (লোন এগেইনস্ট ট্রাস্ট রিসিপ্ট), টিআর (ট্রাস্ট রিসিপ্ট), এলসি (ঋণপত্র), বিভিন্ন ধরনের বিল, চেকসহ অন্য ব্যাংকিং উপকরণের বিপরীতে ঋণ, ব্যাংক গ্যারান্টি আকারেসহ নানাভাবে নেওয়া ঋণ প্রত্যক্ষ ঋণের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ব্যাংকিং খাতে বর্তমানে ৫০ কোটি টাকার বেশি ঋণ গ্রহীতা রয়েছেন ৬শ ৩১ জন। তাদের কাছে নগদ ঋণের পরিমাণ প্রায় ৬৩ হাজার কোটি টাকা, যা মোট ঋণের প্রায় ১২ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী বলেন, কেন্দ্রীভূত ঋণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সতর্ক রয়েছে। এক প্রতিষ্ঠানে অনেক ঋণ গেলে তার ঝুঁকি বেশি থাকে। এতে মাত্র একজন গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হলে কয়েকটি ব্যাংক এমনকি সমগ্র ব্যাংক খাতে প্রভাব পড়ে। কেন্দ্রীভূত ঋণ কমাতে এসএমই ও কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ বাড়াতে জোর চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে দিনদিন এসব খাতে ঋণ বিতরণ বেড়ে চলেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৫
এসই/এসএস